Sunday, November 26, 2023

সনাতন্ হিন্দু ধর্মে পবিত্র সংখ্যা ১০৮ এত মহাত্মপূর্ণ কেন...???

সনাতন্ বৈদিক হিন্দু ধর্মে, ১০৮ সংখ্যা টি অত্যন্ত পবিত্র সংখ্যা রূপে গণ্য করা হয়। কিন্তু কেন...???

কলমে :- অরিন্দম রায়।

আমাদের যোগী, দ্রষ্টা, ঋষিরা আবিষ্কার করেছেন যে ১০৮ সংখ্যা টি জাগরণের মূল চাবিকাঠি। প্রাচীনকালের যোগীরা প্রায়শই বলতেন যে, মহিমান্বিত সংখ্যা ১০৮ প্রাচীন বিশ্বকে আধুনিক বিশ্বের সাথে এবং আধিভৌতিক জগতের সাথে ভৌত জগতের সেতুবন্ধন করে। ১০৮ সংখ্যা টি অস্তিত্বের সম্পূর্ণতাকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং প্রাচীনকাল থেকে আধ্যাত্মিক তাৎপর্য কে ধরে রেখেছে। ১০৮ সংখ্যা টি আধ্যাত্মিক জাগরণ এবং আলোকিতকরণের সাথে যুক্ত।

☆সূর্য এবং পৃথিবী :- সূর্যের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের ১০৮ গুণ। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সূর্যের ব্যাসের ১০৮ গুণ।

☆চাঁদ এবং পৃথিবী :- পৃথিবী থেকে চাঁদের গড় দূরত্ব চাঁদের ব্যাসের ১০৮ গুণ।

☆যে বৈদিক সংস্কৃতির প্রখ্যাত গণিতবিদরা ১০৮ টিকে অস্তিত্বের সম্পূর্ণতা হিসাবে দেখেছেন। এই সংখ্যাটি সূর্য, চাঁদ এবং পৃথিবীকেও সংযুক্ত করে: পৃথিবীতে সূর্য এবং চাঁদের গড় দূরত্ব তাদের নিজ নিজ ব্যাসের ১০৮ গুণ।

☆১০৮ বার একটি মন্ত্র পাঠ করা মহাবিশ্বের কম্পনের সাথে সামঞ্জস্য আনতে সাহায্য করে।

☆ঈশ্বর শ্রী বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র হল একটি ঘূর্ণায়মান, চাকতি অস্ত্র। যার ১০৮ টি দাঁতযুক্ত প্রান্ত রয়েছে, সাধারণত বিষ্ণুর চারটি হাতের ডান পিছনের দিকে চিত্রিত করা থাকে।

☆১০৮ কে শিবের সংখ্যা বলে মনে করা হয়। এর পিছনের কারণ হল প্রধান শিবের অনুচর সংখ্যা ১০৮। 

☆শিবের মহাজাগতিক নৃত্যের ১০৮ টি ভঙ্গি রয়েছে।
শিবপুরাণ অনুসারে, তাঁর তান্ডবে ১০৮ টি করণ রয়েছে।
সমস্ত শৈব সম্প্রদায়ে, বিশেষ করে লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ে, রুদ্রাক্ষ জপমালায় মোট ১০৮ বার একটি মন্ত্র পাঠ করা মহাবিশ্বের কম্পনের সাথে সামঞ্জস্য আনতে সাহায্য করে।টি রুদ্রাক্ষ রয়েছে, যা জপ করা হয়।

☆জ্যোতিষশাস্ত্রে মোট ১২ রাশি রয়েছে যার মধ্যে ৯ টি গ্রহ চলে। এই দুটি সংখ্যাকে গুণ করলে আপনি ১০৮ সংখ্যা টি পাবেন।

☆জ্যোতির্বিদ্যাগতভাবে, আমাদের গ্যালাক্সিতে ২৭ টি নক্ষত্রমণ্ডল রয়েছে এবং তাদের প্রত্যেকটির ৪(4) টি দিক রয়েছে এবং ২৭X৪(4) = ১০৮, অন্য কথায় ১০৮ নম্বরটি পুরো ছায়াপথ জুড়ে রয়েছে।

☆সংস্কৃত বর্ণমালাও কেন এই সংখ্যাটি এত তাৎপর্যপূর্ণ। সংস্কৃত বর্ণমালা ৫৪ টি অক্ষর নিয়ে গঠিত। বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষরে একটি পুংলিঙ্গ (শিব) এবং স্ত্রীলিঙ্গ (শক্তি) শক্তি উভয়ই রয়েছে। ৫৪ এই দুটি শক্তি দ্বারা গুন করলে ১০৮ হয়।

☆মুক্তিকা নীতি অনুসারে,
হিন্দুধর্মে ১০৮ টি উপনিষদ রয়েছে, যা প্রাচীন ঋষিদের জ্ঞানের পবিত্র গ্রন্থ।

☆ভারতীয় সৃষ্টিতত্ত্বের একটি নির্দিষ্ট দিক ১০৮ নম্বরটিকে সমস্ত সৃষ্টির ভিত্তি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে। ১০৮-এ '১' সংখ্যাটি ঐশ্বরিক চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে।

☆যোগ অনুশীলন অনুসারে, সারা ভারতে ১০৮ টি পবিত্র স্থান, ১০৮ টি প্রাচীন বৈদিক গ্রন্থ এবং ১০৮ টি পবিত্র জীবন শক্তির বিন্দু রয়েছে।

☆শ্রী যন্ত্রণা বা, লক্ষ্মী যন্ত্রম :- 
শ্রী যন্ত্রে এমন মারমা রয়েছে যেখানে তিনটি লাইন ছেদ করে এবং ৫৪ টি ছেদ রয়েছে। প্রতিটি ছেদটিতে রয়েছে পুংলিঙ্গ এবং স্ত্রীলিঙ্গ, শিব এবং শক্তি গুণাবলী। ৫৪ গুণ ২ সমান ১০৮৷ এইভাবে, ১০৮ টি বিন্দু রয়েছে যা শ্রী যন্ত্রের পাশাপাশি মানবদেহকে সংজ্ঞায়িত করে৷

☆আমাদের হৃৎপিণ্ড চক্রকে বলা হয় 108টি নাড়ি একত্রিত হয়ে হৃৎপিণ্ড চক্র গঠন করে এবং তাদের মধ্যে একটি। সুষুম্না মুকুট চক্রের দিকে নিয়ে যায়।

☆হিন্দু ধর্মে, ১০৮ একটি সংখ্যা যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান ধারণ করে। এই ধরনের ঘটনা আচারের তাৎপর্যের অনেক উদাহরণের জন্ম দিয়েছে।

☆রুদ্রাক্ষ জপমালায় ১০৮ টি পুঁতি রয়েছে এবং ১০৮ বার মন্ত্র জপ করা হয়। 

☆জাপানি সংস্কৃতিতে, বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা ১০৮ বার মন্দিরের ঘণ্টা বাজিয়ে চলে যাওয়া বছরকে বিদায় জানাতে এবং নতুন বছরের সূচনা করে।

☆আমাদের শরীরে ১০৮ টি মারমা পয়েন্ট রয়েছে। এগুলি আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।

☆হিন্দু ধর্মে, ১০৮ নম্বরটি অন্যান্য জিনিসও বোঝাতে পারে। ঠিক যেমন আমাদের দেহ ১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে শুরু হয়।

জয় মা দূর্গা দুর্গতি নাশিনী,
হর হর মহাদেব।
🙏🏻🚩🙏🏻🚩🙏🏻🚩

Wednesday, November 8, 2023

Did Buddha come before Yudhisthir? - A Linguistic Analysis:



Recently in an interview, the vicious brain of the Marxo-Ashraafi historian Romila Thapar came up with a weird, concocted story potentially implying that Buddha predates Yudhisthir, and hence Buddhism might predate Hinduism.

There is little doubt that the current discourse of Marxist-Ashraafi academia involves not only in dissociating Buddhism from Sanatana but also in proving the 'supremacy' of 'Buddhism' over 'Hinduism' (they have a coined a new term 'Brahminism' in this regard). After all, Indians obey the Indian constitution which, as per these Marxist-Ashraafi historians, is a Khairaat of B.R. Ambedkar who was so much toiled and tortured in the casteist confinement of Hinduism that he adopted Buddhism. Hence Buddhism in the narrative that can potentially liberate India from the curse of Hindutva! But a fundamental question still sustains: Is Buddhism older and more supreme than Hinduism, even when we assume that there exist differences between the two?

It is true that there exist severe challenges in finding the proper chronology of several events of ancient India. But subverting this challenge to muddy the historicity and chronology of India is utterly sickening. Nevertheless, such cunning claims should not go unchallenged and be encountered with facts and reasons. This article is an attempt to disprove Romila Thapar on this specific issue.

Firstly, Bhagavad Gita is an inalienable part of Mahabharat. This is because:

a. Chapter no. 24-42 of the Bhishma Parva is Bhagavad Gita. In Shanti Parva, Aswamedh Parva, and in many other parts, Vyasdev has mentioned about Bhagavad Gita that emanated from the Lotus Mouth of Lord Krishna.

b. There is huge linguistic similarity and overlaps between Bhagavad Gita and all other chapters of Mahabharat. This is the opinion that is supported by Balgangadhar Tilak and Sarvapalli Radhakrishnan as well.

Second, we explicitly prove that the language of Bhagavad Gita is more archaic than Panini’s Ashtadhyayi. Famous Sanskrit scholar and philosopher Dr. Surandranath Dasgupta has given the following list of Aarsha-prayog (आष॔-प्रयोग), i.e., words/phrases used by the ancient Rishis which goes against the canonical rules of Sanskrit grammar that started with Panini:

a. ‘Yudh’ (युध) dhaatu gives ‘yuddhya’ (युध्य) for anugnaa, madhyam purush, ek-vachan. But the shloka 3:30 of Gita uses ‘yuddhyasya’ (युध्यस्व) in place of ‘yuddhya’.

b. Shloka 6:36, 7:3, 9:14 and 15:11 uses ‘yat’ (यत्) dhaatu as parasmaipadi (परस्मैपदी: something under reference belonging to another), although ‘yat’ dhaatu used in Panini’s Sanskrit is atmanepadi (आत्मनेपदी: word for the self).

c. ‘Ram’ (रम्) dhaatu is atmanepadi but it is used as parasmaipadi in in shloka 10:9.

d. Similarly, ‘Kaansh’ (काङ्क्ष), ‘braj’ (ब्रज्), ‘bish’ (बिश्), ‘ing’ (इन्ग्) dhaatus are parasmaipadi according to Panini but are used as atmanepadi in the shlokas 1:31; 2:54; 18:55; and 6:19, 14:23 respectively.

e. ‘Bij’ (बिज्) dhaatu is atmanepadi but is used in shloka 5:20 as parasmaipadi.

f. Shloka 12:8 uses 'निबत्स्यसि' in place of ‘निबसिष्यसि’ allowed by Panini.

g. 16:5 uses ‘मा शोची:’ in place of the Paninian ‘मा सुच:’.

h. 3:10 has aarsha-prayog of ‘प्रसबिष्यध्वम्’.

i. 11:41 has an aarsha-sandhi ‘हे सखेति’.

j. 10: 29 shloka has ‘यम: समयमताम्’ in place of ‘यम: समयच्छताम्’.

These are just 10 examples of dhaaturup and samdhi used in Bhagavad Gita that are archaic than Panini’s tradition.

Thirdly, Bhagavad Gita has more proximity to various Upanishads in terms of literary and philosophical references than Buddhist literature to Upanishad. Both Bhagavad Gita and Mundak Upanishad use the phrase ‘अबरं कर्म’ for the same meaning and philosophy. The mantra ‘अस्टादशोक्तमबरं येशु कर्म’ in Mundak Upanishad 1:2:7 has been referred in the eighteenth chapter of Bhagavad Gita. 2:20 of Bhagavad Gita uses the famous phrase ‘न हन्यते हन्यमाने शरीरे’ which is cited from 1:2:18 of Katha Upanishad. Even in the end of each chapter, the word ‘श्रीमद्भगवद्गीतासूपनिषत्सु’ used in the final shloka refers to Bhagavad Gita as nothing but Upanishad.

Fourthly, Mahabharat mentions instances where the Vedic gods such as Agni, Indra are being worshipped. The Bhagavad Gita within Mahabharat considers Vishnu as the primary Aaditya; it does not consider Vishnu and Vasudev as the one and the same, neither does it tell us about Vasudev being an avatar of Vishnu. Bhagavad Gita within Mahabharat uses the word ‘nirvaan’ 5 times (2:72, 5:24, 5:25, 5:26, 6:15) but it relates the state of nirvaan with the eternal Brahman, and not with the Buddhist ‘Shunya’. This point, together with the third one, implies that Gita was conceived at a time when the spiritual traditions in India was transitioning from the Vedic to Vedantic period along with Mahabharat. This was a time period much earlier than the time when Astādhyāyī was given by Panini who predates Buddhism.

To understand the chronology of the history of ancient India, it is essential to understand Sanskrit and its evolution in ancient India. Ignorance or the lack of knowledge in Sanskrit can evidently lead to confusion and meaningless ruckes. But Romila Thapar claims to be an historian of ancient India without having much knowledge in Sanskrit.

Much irony!

Reference: Swami Suhitananda, Shrimadbhagvadgita, Vol. I (2019), Udbodhan Karyalaya, Kolkata

Saturday, November 4, 2023

সনাতন ধর্ম এবং সভ্যতা কত পুরাতন...??

সনাতন ধর্ম এবং সভ্যতা কত  পুরাতন...?? 
রচনা :- অরিন্দম রায়। 

"সনাতন বৈদিক ধর্ম ও সভ্যতা মাত্র ৫০০০ বছর পুরাতন হতে....." :- এমনটি আমাদের দেশের অনেক বড় বড় বিশাল পন্ডিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাই পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে প্রায়ই বলে থাকেন যে :- সনাতন বৈদিক সভ্যতা এবং ধর্ম নাকি 5000 বছরের পুরাতন....?? যা আমাকে শুধুমাত্র মানসিক যন্ত্রণাই দেয় না, নিজেকে এই অশিক্ষিত নেতাদের কারনে, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যবান বোধ হয়....। এই খানে ২/১ টি ইতিহাস নথিভুক্ত করছি, এখন আপনারা দয়া করে নিজেরাই বিচার করুন, ভারতীয় সভ্যতা এবং সনাতন বৈদিক ধর্ম কতটা প্রাচীনী হতে পারে............ ☆প্রভু শ্রী রাম 10 জানুয়ারী 12.05 ঘন্টা, 5114 খ্রিস্টপূর্বাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ☆শ্রী হনুমান জী 12 সেপ্টেম্বর, 5076 খ্রিস্টপূর্বাব্দে লঙ্কার অশোক বাটিকায় সীতার সাথে দেখা করেছিলেন। ☆প্রভু শ্রী কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন 19 জুলাই 3228 খ্রিস্টপূর্বাব্দে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ 126 বছর 5 মাস বেঁচে ছিলেন। তাঁর মহা-প্রয়াণ হয়েছিল :- ১৮ই ফেব্রুয়ারি ৩১০২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। (ঠিক এই তারিখ থেকে বর্তমান কলিযুগের সূচনা) আর্য বিতর্ক : 200 বছরের পুরনো প্রশ্ন..... 24 জুলাই, 2014 তারিখে :- ডঃ এন. এস. রাজারাম জানাচ্ছেন, কিভাবে "আর্য বিতর্ক" কে বিজ্ঞানের সাহায্যে সম্পূর্ণ ধংস করে দেওয়া হয়েছে। যা কমিউনিস্ট ইতিহাস লেখকরা আমাদের পড়িয়ে এসেছিল। তিনি বলেছেন, "এটা আর কোনো বিতর্কের বিষয়ই নয়"।  জেনেটিক্স এবং মানব অভিবাসনের উপর সর্বশেষ গবেষণা ব্যাখ্যা করে নিয়ে, - ডঃ এন. এস. রাজারাম দাবি করেন যে, আর্য অনুপ্রবেশ ভারতে কখনোই ঘটেনি.....।।  কারন আমরা মানে, সনাতন বৈদিক সভ্যতার প্রতিটি নর নারীই হলাম আসল "আর্য"।
তিনি জানিয়েছেন যে, আফ্রিকা হল মানুষের আদি বাসভূমি (হোমো সাপিয়েন্ট) যেখান থেকে মানুষ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে  পড়েছিল। 
এই নতুন জেনেটিক গবেষণা প্রমাণ করে যে আফ্রিকার থেকে প্রথম কিছু মানুষ কিভাবে ভারতে আসে এবং যেখানে এটি মহান ভারতীয় সভ্যতার জন্ম দেয়। ইন্দোনেশিয়ার "টোবা আগ্নেয়গিরি"র বিস্ফোরণে ৭৪ হাজার বছর আগে পুরো পৃথিবী জলের নিচে তলিয়ে যায়।  শুধুমাত্র তার মধ্যে আফ্রিকান নাগরিকরাই জীবিত ছিলেন। পরে তারা ভারতীয় উপমহাদেশে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং সেখান থেকে তারা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েন।
ভারত থেকেই প্রথম সভ্যতার সূচনা হয়েছিল। যে সভ্যতার নাম আজকের ভাষায় "সনাতনী বৈদিক সভ্যতা"।
লিঙ্ক:- https://youtu.be/qPaCUJsZyPU

তাই আমাদের বীর হিন্দু সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকার  শিকাগোতে 1893-এ "পার্লামেন্ট অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস রিলিজিয়নস"-এ যোগ দিয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজ আত্মপরিচয় দিতে গিয়ে বলেছিলেন "আমি সেই ধর্মের থেকে এসেছি যেটি, পৃথিবীর সমস্ত মজহব্ বা পন্থের জননী। আমি সেই দেশ থেকে এসেছি যেখানে প্রথম সভ্যতার জন্ম হয়েছিল"।
লিঙ্ক:- https://youtu.be/QIyxnm4-d8k

যে সভ্যতার বিকাশ শুরু হয়েছিল আজ থেকে 197 কোটি বছর আগে। যে সনাতন ভারতীয় সভ্যতা সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি কোনে ছড়িয়ে পড়েছিল। যে সনাতন সভ্যতা পৃথিবীর সমস্ত প্রকার প্রজাতি কে সুসভ্য করে তুলেছে।

কিন্তু আমি একা কেমন ভাবে এই সমগ্র বিশ্বের 800(আট) কোটি জনগন কে জানাবো, সারা বিশ্ব যদি ছেড়েও দিই, শুধু ভারতবর্ষের 150 কোটি(Unofficially) জনগন কেও কি জানাতে পারবো...??

যদি আপনারা সকলে মিলে এই মহান তথ্য কে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য না করেন....???
কারন এই গর্ব শুধু মাত্র আমার একার নয়, আপনাদের সকলের। সমস্ত সনাতন বৈদিক ধর্মাম্বলী মানব মানবী বা নর নারীরই....
🙏🕉🙏🕉🙏🕉
🚩🚩🚩🚩🚩🚩

"আপনাকে,ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে...."

"আপনাকে, ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে...." রচনা :- অরিন্দম রায়। পৃথিবীর একমাত্র সর্বশ্রেষ্ঠ জাতিতে জন্ম আপনার। যে সনাতন হিন্দু ধর্ম এবং সভ্যতা ১৯৭ কোটি বছরের প্রাচীন। আর এটাও কি জানেন আপনি...?? "বেদ" শ্রুতির থেকে লিখিত আকারে প্রথম কবে উৎপত্তি হয়..? এর উত্তর হলো, প্রায় ১ বিলিয়ন বছর আগে। সঠিক করে বললে বলতে হয়, ৯৬ কোটি ৮ লক্ষ ৫৩ হাজার ১২৩ বছর আগে।
"হিন্দু" শব্দের উৎপত্তি :-
আনুমানিক ২য় শতাব্দিতে রচিত শব্দ ‘কল্পদ্রুম’, তাতে মন্ত্র আছে হীন্ দুষ্যতি ইতি হিন্দু জাতি বিশেষ অর্থাৎ অজ্ঞানতা এবং হীন কাজকে যে ত্যাগ করে, তাকেই ‘হিন্দু’ বলা হয়।
হীন + দু = হীন( হীন ভাবনা) + থেকে দূর।

অন্যদিকে ‘অদ্ভুত কোষে’ মন্ত্র পাওয়া যায় হিদূঁ: হিন্দুশ্চ প্রসিদ্ধ দুশতানাম চ বিঘর্ষণে
(হিদূঁ আর হিন্দু দুটো শব্দই এক)। অথাৎি হিন্দু হলেন তারাই, যারা দুষ্টকে নাশ করে।

বৃহস্পতি আগমে শ্লোকে আছে
হিমালয় সমারভ্য য়বাদ ইঁদূ সরোবঁ।
তঁ দেব নির্বিতঁ দেশম হিন্দুস্থানম প্রচ্ক্ষেত।
অর্থাৎ হিমালয় পর্বত থেকে হিন্দ মহাসাগর পর্যন্ত দেব পুরুষ দ্বারা নির্মিত ক্ষেত্রকে হিন্দুস্থান
বলা হয়।

অন্য দিকে, খ্রিস্টের জন্মের ১০০০ বছরের আগে লবি বিন অখতাব তুর্ফা নামে আরবের এক কবির
গ্রন্থে লেখা আছে
অয়া মুবার্কেল অরজ য়ু শোয়ে নোহা হিন্দে।
ব অরাদাকল্লাহ মন্য়োঁজ্জেল জিকর্তুঁ।।
অর্থাৎ হে হিন্দ পুণ্য ভুমি তুমি ধন্য, ঈশ্বর জ্ঞানের জন্য তোমায় বেছে নিয়েছেন।

"হিন্দু" শব্দ ঋগ্বেদে, "পারিজাত হরণ" গ্রন্থে, "মাধব দীগ্বিজয়" গ্রন্থ এবং শৈব গ্রন্থে এই ভাবেই উল্লেখ রয়েছে।
🚩🚩🚩
জয় মা দূর্গা দুর্গতি নাশিনী,
হর হর মহাদেব।

"পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং ধর্মে জন্ম আপনাদের..."

"পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং ধর্মে জন্ম আপনাদের..."
রচনা :- অরিন্দম রায়।

গর্বের সঙ্গে প্রতিটি সনাতনী হিন্দুদের দাবী করবার সময় এসে গেছে :-
"পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা, সংস্কৃতি এবং ধর্মে" জন্ম তাহাদের......!!!
সনাতন হিন্দু ধর্ম এবং সভ্যতা যা ১৯৭ কোটি বছরের প্রাচীন।
হিন্দুদের সর্ব প্রাচীন ক্যালেন্ডারের নাম হলো "ব্রক্ষ ক্যালেন্ডার" বা "ব্রক্ষ সম্বৎ"। এই ব্রক্ষ ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সনাতনী হিন্দুদের জন্য এখন 197 কোটি বছর চলছে।
Google অনুযায়ী, অত্যন্ত কিছু দুরূহ গাণিতিক সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে,
একদম সঠিক তারিখ যা পাওয়া যায় :-
এখন,
সনাতনী হিন্দু জনগণের জন্য, "১৯৬ কোটি, ৮ লক্ষ, ৫৩ হাজার, ১২৩ বছরের আশ্বিন মাস চলছে।

আর এটা কি, প্রতিটি সনাতনী হিন্দুদের জানা আছে, তাদের  প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ প্রথম কবে "শ্রুতির" থেকে লিখিত আকারে উৎপত্তি হয়েছিল...???

এর উত্তর হলো, প্রায় 1 বিলিয়ন বা 100 কোটি বছরের কিছু আগে। সঠিক করে বললে, বলতে হয়, ৯৬ কোটি ৮ লক্ষ ৫৩ হাজার ১২৩ বছর আগে।

আর ঠিক এই জন্যই,
1893 খ্রিস্টাব্দে শিকাগোর "দ্য ওয়ার্ল্ড রিলিজিয়ন্স পার্লামেন্টে" এর সভাতে ভাষণ দেবার সময়, আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, "আমি সেই ধর্মের পক্ষ থেকে এখানে বক্তব্য রাখতে এসেছি, যে ধর্ম বিশ্বের সমস্ত মজহব্ এবং Religion এর "মাতৃ স্বরূপা"।
আমি সেই ভূখেন্ডর থেকে এসেছি যেখানে বিশ্বের "প্রথম সভ্যতা" জন্মগ্রহণ করেছিল"।
স্বামী বিবেকানন্দের ভাষায়, সমস্ত সনাতনী হিন্দুরা হলেন সেই সভ্যতার মানুষ, যখন সমস্ত পৃথিবী অজ্ঞানতার অতল অন্ধকারে ডুবে ছিল, তখন সনাতনী হিন্দুরাই সমস্ত পৃথিবীতে জ্ঞানের আলো প্রজ্জ্বলিত করে, তাদেরকে সুসভ্য করে তুলেছিলেন......!!

আজকের দিনের সনাতনী হিন্দুরা হলেন, বিশ্বের সবথেকে প্রাচীন, "সনাতন বৈদিক হিন্দু সভ্যতার" "ধরোহর" অথাৎ পরবর্তী বংশধর।
"বৈদিক আর্যাবর্ত" অথাৎ "ভারতবর্ষ" না থাকলে, বিশ্বের অনান্য দেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠী আরো যে কত হাজার বছর পরে সভ্যতার দীপশিখাকে প্রজ্জ্বলিত করতে পারতো, তা সবটুকুই তর্ক সাপেক্ষে বিষয়।

তাই,
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, "প্রত্যেক সনাতনী, গর্বের সঙ্গে বলুন, হ্যাঁ আমি হিন্দু"...।

🕉🕉🕉
🚩🚩🚩
জয় মা দূর্গা দুর্গতি নাশিনী...
হর হর মহাদেব।


Thursday, October 26, 2023

কমিউনিজম

লিখন: বিজিৎ প্রশান্থা

এই পোস্টটিতে আমি ভারতীয়তার মতো একটি all-inclusive ধারণার প্রেক্ষিতে বামপন্থার মত একটি বাইনারি ধারণার অসারতা নিয়ে লিখছি, যাতে পরের বছর এলিট বাঙালিরা ওয়াইন চাটতে চাটতে 'আমি বামপন্থী'-জাতীয় স্লোগান দেবার আগে একটু ভেবে দেখার সুযোগ পান যে এই রক্তবীজের ঝাড় আমাদের রাজ‍্যের কতদূর সর্বনাশ করার ক্ষমতা রাখে এবং পরের বছর নির্বাচনে এদের বিলুপ্তি বাঙালিদের জন‍্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো- মূলতত্ত্ব:
কমিউনিজম এমনই একটি বাইনারি আইডিয়া যেখানে মানবসভ‍্যতার ইতিহাসকে শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস হিসাবে তত্ত্বায়িত করা হয়েছে। কমিউনিজম যেকোনো সমাজকে আড়াআড়ি দুটি সম্প্রদায়ে বিভাজিত করে, বুর্জোয়া বা অভিজাত এবং প্রলেতারিয়েৎ অর্থাৎ (মূলতঃ) শ্রমজীবী। কমিউনিজমের মতে বুর্জোয়া মূলতঃ সুবিধাভোগী সম্প্রদায় যারা প্রলেতারিয়েতের শ্রমলব্ধ উৎপাদন এবং সম্পদ বে-লাগামভাবে উপভোগ করে এবং এজন‍্য যেন-তেন-প্রকারেন রাজনৈতিক এবং আর্থিক ক্ষমতা নিজেদের কুক্ষিগত রাখতে চায়। ফলতঃ প্রলেতারিয়েৎ সম্প্রদায় তাদের শ্রমের প্রাপ‍্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে এবং ক্রমশঃ সর্বহারা একটি সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। এরই প্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট ম‍্যানিফেস্টো দুনিয়ার সমস্ত মজুরদের এক হয়ে একটি শ্রেণীসংগ্রামের সূচনা করতে বলে।

এই ম‍্যানিফেস্টোর একটি আপাত আদর্শবাদ আছে যা শ্রমিকদরদী এবং গরীবদরদী যেকোনো মানুষকে আকৃষ্ট করতে বাধ‍্য। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলে এই মতবাদটির অসারতা, অসংগতি, এবং বিপজ্জনক সম্ভাবনা উপলব্ধি করা যায়।

ক. দ্বিত্বতা:
কমিউনিজম একটি বাইনারি অর্থাৎ দ্বিত্ববাদ। এই মতবাদ সমাজকে দুটি শ্রেণীতে ভেঙে ফেলে। এবং তা করতে গিয়ে কমিউনিজম সেই সমাজের অার্থিক, রাজনৈতিক এবং চিন্তাধারার স্পেকট্রাম এবং বিভিন্নতা অস্বীকার করে। সমাজের সাংস্কৃতিক বিবিধতা, বিভিন্ন অংশের মানুষের ব‍্যক্তিগত স্তরে সম্পর্ক, রীতি-রেওয়াজ, এমনকী একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং অখন্ডতা- কমিউনিজম এর কোনোটিরই পরোয়া করে না। সুতরাং, মানুষকে সাদা-কালোয় বিভাজিত করার এই মতবাদ একটি বহুত্ববাদী সমাজের আদর্শ হতে পারে না। 'বিবিধের মাঝে মহান মিলনের' যে মন্ত্র, কমিউনিজম তা স্বীকার করে না।

খ. লঙ্ঘিত সার্বভৌমত্ব:
কমিউনিস্ট ম‍্যানিফেস্টোর দ্বিতীয় অধ‍্যায়ে লেখা আছে, "In the national struggles of the proletarians of the different countries, they point out and bring to the front the common interests of the entire proletariat, independently of all nationality." আপাতভাবে আদর্শবাদী মনে হলেও বর্তমান দুনিয়ায়, যেখানে প্রতিটি দেশের স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল, এই ধরনের চিন্তাধারার যৌক্তিকতা প্রশ্নাতীত নয়। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কমিউনিজম অবলম্বন করার প্রেক্ষিতে এই সুপ্ত দ্বন্দ্ব অনেক ক্ষেত্রেই আঞ্চলিক অশান্তির জন্ম দিয়েছে, রাশিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলি (এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ‍্য) যার জ্বলন্ত সাক্ষী। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার প্রাক্কালে কমিউনিস্ট পার্টিগুলি (পড়ুন: গঙ্গাধর অধিকারী থিসিস) ভারতবর্ষকে দুই বা তিন নয়, সতেরটি খন্ডে ভাগ করার প্রস্তাব পেশ করে। আপনারা অনুমান করতেই পারেন, ভারতীয় ভূখন্ড সতেরটি খন্ডে ভেঙে গেলে তা এই উপমহাদেশের স্থিতিশীলতার পক্ষে কতটা বিপজ্জনক হত এবং আজ পর্যন্ত ভারতের কোনো বামপন্থী দল এই 'অধিকারী থিসিস' খন্ডন করেননি বা এর প্রকাশ‍্যে মতবিরোধ করেননি!

গ. অবাঞ্ছিত বিভাজন এবং পার্টিসর্বস্বতা:
যেহেতু এই কমিউনিস্ট অ‍্যাজেন্ডা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোনো একটি রাজনৈতিক পার্টি দ্বারা পরিচালিত হয়, তাই এই বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েৎ বিভাজন মূলতঃ কমিউনিস্ট -নন-কমিউনিস্ট বিভাজন হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ যে শ্রেণীগত বিভাজনের অনুমানের উপর ভিত্তি করে কোনো কমিউনিস্ট পার্টির যাত্রা শুরু হয়, তা ক্রমশঃ একটি রাজনৈতিক দলগত বিভাজন হয়ে পড়ে। দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর মতো একটি আদর্শবাদী ধারণা ধীরে ধীরে পার্টিসর্বস্ব কার্যকলাপে পর্যবসিত হয়।

ঘ. কাঁকড়া-প্রব‍ৃত্তি (crab mentality):
কমিউনিজমের মূল ধারণা শ্রেণীসংগ্রাম যা একটি সমাজে শ্রেণীবিদ্বেষ সৃষ্টি করতে বাধ‍্য। সমাজের তথাকথিত উপরতলার মানুষের সাথে তথাকথিত নীচুতলার মানুষের প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব এবং লড়াইয়ের পটভূমিতেই কমিউনিজমের ফুলে-ফলে বিকাশ ঘটে। কিন্তু এই সামাজিক লড়াই সমাজের সামূহিক বৃদ্ধি ব‍্যাহত করে। কমিউনিজম আদতে একটি কাঁকড়ার মানসিকতা যা নিজেকেও এগোতে দেয় না, উপরন্তু অন‍্য কেউ এগোতে চাইলে তাকেও টেনে নামায় (if I can't have it, neither can you)। কমিউনিজম না 'বুর্জোয়া' গোষ্ঠীকে উৎপাদন বাড়াতে অনুপ্রেরণা দেয়, না 'প্রলেতারিয়েৎ'-দের ব‍্যক্তিগত বিকাশের সুযোগ দেয়। সুতরাং কমিউনিজম যোগ‍্যতাতন্ত্র এবং গুণতন্ত্রের প্রবল বিরোধী একটি মতবাদ।

ঙ. কুক্ষিগত সম্পদ:
কমিউনিজমের আর একটি ধারনা ব‍্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ:

"In this sense, the theory of the Communists may be summed up in the single sentence: Abolition of private property." - Communist Manifesto

কমিউনিস্টরা এই ধারনাটির প্রয়োগ করতে গিয়ে তর্কাতীতভাবে ছড়িয়েছে। সম্পত্তির সরকারিকরন যেমন একদিকে সম্পদের সার্বিক বৃদ্ধি ব‍্যাহত করেছে, তেমনই মানুষের স্বকীয়তাকে (individuality) পরিকল্পিতভাবে বিনষ্ট করেছে। এবং এর মাধ‍্যমে কমিউনিজমের সুবিধেই হয়েছে কারণ কমিউনিস্ট দেশগুলি নিজেদের দারিদ্র‍্যের জন‍্য উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশগুলিকে দোষারোপ করতে পেরেছে এবং এ যে এক বৃহত্তর শ্রেণীসংগ্রাম- এই ধারণা তুলে ধরে মানুষকে হগওয়াশ করতে পেরেছে। সম্পদই সম্পদ সৃষ্টি করে এবং মুক্ত বাজার সম্পদের আঞ্চলিক বৈষম‍্য ঘোচাতে পারে। অন‍্যদিকে সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত করে আষাঢ়ে আইন দ্বারা বাজার-নিয়ন্ত্রণ না বুর্জোয়ার মঙ্গলসাধন করে, না প্রলেতারিয়েতের। এখানে পাঠক বলতে পারেন, মুক্ত বাজারে কোনো বিশেষ একটি সম্পদে কোনো বিশেষ একটি কোম্পানির মনোপলি বা একাধিপত‍্যের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, সেক্ষেত্রে 'মুক্ত বাজার বৈষম‍্য কমায়' জাতীয় কথাবার্তা কতটা যুক্তিযুক্ত? এপ্রসঙ্গে বলে রাখি, পরিস্থিতির হিসেবে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা আমি করছি না। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদে, এমনকী তার অতীত-বর্তমান-ভবিষ‍্যত নির্ধারণে সরকারের মনোপলির আমি ঘোর বিরোধী।

চ. ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিলোপ:
কমিউনিস্টরা এই 'abolition of private property' যুক্তিটিকে একরকম অসভ‍্য পর্যায়ে নিয়ে যায়। তাঁদের মতে, যেহেতু এই সমাজ (মানে যেকোনো সমাজ যা কমিউনিস্টদের কব্জাগত নয় আর কী!) গুণগতভাবে বুর্জোয়া সমাজ, তাই এখানে অতীতই বর্তমানকে শাসন করে। সুতরাং এই সমাজের যা কিছ অতীত এবং যা কিছু উত্তরাধিকার, কমিউনিজম সেই সমস্ত কিছু বিলোপ এবং ধ্বংস করার কথা বলে। কমিউনিজম এভাবে সমস্ত জাতির সাংস্কৃতিক ধ্বংস-সাধনের পক্ষে কথা বলে। এই ধারনাটি কতটা বিপজ্জনক, তা বর্তমান যুগে চীনা সরকার কর্তৃক সাধিত উইগুর মুসলমানদের সাংস্কৃতিক বিনাশের কর্মকান্ড দেখলেই বোঝা যায়। প্রসঙ্গতঃ, মধ‍্যপ্রাচ‍্যের মুসলিম সংস্কৃতি ধ্বংসের স্বার্থে রাশিয়ার কর্মকান্ডও এখানে স্মর্তব‍্য।

ছ. প্রপাগ‍্যান্ডা:
সুতরাং এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের শিক্ষাব‍্যবস্থায় বামপন্থী চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ ভারতীয়তার মূলস্রোত থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবার প্রয়াস করেছে। যে মাও-সে-দঙ চীনে লক্ষ লক্ষ নরসংহার করেছে, যে মাও-সে-দঙের নেতৃত্বে চীন ভারতকে উনিশশো বাষট্টিতে আক্রমণ করে ভারতের মাটি কব্জা করে নিয়েছে, সেই মাও-য়ের প্রশস্তি আমি অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস বইতে পড়েছি। ভারতীয় ইতিহাসকে বিকৃত করার এই যে প্রয়াস, তা যে আসলে কমিউনিস্ট প্রপাগ‍্যান্ডা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

জ. কমিউনিস্ট সমাজের পরিণতি:
এখন তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, কমিউনিজম সর্বহারাদের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ভাবে এবং সমাজে সাম‍্য আনার জন‍্য প্রতিনিয়ত আন্দোলন করে যায়, তাহলে আমরা এই নিখিল বিশ্বে তো একটা উদাহরণ খুঁজে পাব যেখানে কমিউনিজম বিদ‍্যমান, মানুষ ধনবান, সমাজে সমতা আছে এবং সব মানুষের মত প্রকাশের মুক্ত অধিকার আছে। কিন্তু নাহ্! ইতিহাস ভূগোল সব ঘেঁটে একটি উদাহরণও কেউ খুঁজে পাবে না যেখানে কমিউনিজম তার প্রতিশ্রুত ইউটোপিয়া জনগণকে ডেলিভার করেছে। মানুষ মূলতঃ একটি ক্ষমতালোভী প্রজাতি এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই কমিউনিজমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা মানুষ সব ক্ষমতা এবং অধিকার কুক্ষিগত করে হয় মানুষের মগজধোলাই করেছে, নয়তো বঞ্চনা, দারিদ্র্য, হিংসা, গৃহযুদ্ধ, গণহত‍্যার দিকে মানুষকে ঠেলে দিয়েছে।

ঝ. পশ্চিমবঙ্গ এবং কমিউনিজম:
কমিউনিজমের সারকথা: 'লড়াই লড়াই লড়াই চাই'। এবং সমাজে এই লড়াই, বিভেদ, যুদ্ধ জিইয়ে রাখতে কমিউনিস্টরা যে কোনোরকমের শয়তানিতে সিদ্ধহস্ত। ভারতবর্ষের প্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই, তথাকথিত বামপন্থী দলগুলি পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ‍্যটির কী অপরিসীম সর্বনাশ করেছে! ভোটের লোভে অবাধে অনুপ্রবেশ করিয়েছে, শিক্ষাব‍্যবস্হায় মধ‍্যমেধাকে প্রাধান‍্য দিয়ে উঁচুপদগুলিতে পার্টি-ক‍্যাডারদের বসিয়েছে, বঙ্গসংস্কৃতির যথেচ্ছ বিকৃতি করেছে, দেশবিরোধী বাইরের শক্তিগুলির সাথে হাত মিলিয়েছে, বামবিরোধী মানুষদের অবাধে হত‍্যা করেছে, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙে ফেলেছে ইত‍্যাদি।

ভারতের প্রেক্ষিতে কমিউনিজম:
ভারতের মতো একটি দেশ যা মোটের ওপর শান্তিপ্রিয়, সর্বংসহ এবং যে দেশ যুগ-যুগান্ত ধরে সর্ব-পন্থা-সমন্বয়ের জয়গান গেয়ে চলেছে, সেখানে কমিউনিজমের মত একটি চতুর, দ্বিত্ববাদী, ধ্বংসাত্মক মতবাদ না থাকলেও খুব একটা ক্ষতি হবে না। আমাদের সমাজকে অবশ‍্যই আরও বেশী মানবদরদী হতে হবে, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন‍্য আমাদের অবশ‍্যই লড়ে যেতে হবে, কিন্তু তার জন‍্য কমিউনিজমের হাত ধরার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।

বাঁচুন। বাঁচতে দিন। কমিউনিজম এড়িয়ে চলুন।: কমিউনিজম ধর্মের মতোই এক আফিম। মানুষকে ইউটোপিয়ার স্বপ্ন দেখায়। দলবদ্ধ হতে বলে। সাম‍্যের জন‍্য লড়াই করতে বলে। কালক্রমে বর্গবিদ্বেষ মাথাচাড়া দেয়। কমিউনিস্টরা ক্ষমতাসীন হয়। এবং ধীরে ধীরে একটি সমাজের ঐক‍্য, সম্প্রীতি, ইতিহাস, সাংস্কৃতিক নিজস্বতা সমস্ত কিছু নির্মমভাবে ধ্বংস করে ফেলে।

তাই মানুষের মত মানুষ হোন। শিক্ষিত, বিবেচক, সহমর্মী হোন। এই গুণগুলির অভ‍্যাস করতে হলে কমিউনিস্ট হওয়ার প্রয়োজন হয় না।

English Education Act ১৮৩৫, ম্যাকলেবাদ এবং ভারতভাগের দোষী (কা)পুরুষবৃন্দ:

লিখন: বিজিৎ প্রশান্থা

"We must at present do our best to form a class who may be interpreters between us and the millions whom we govern; a class of persons, Indian in blood and colour, but English in taste, in opinions, in morals, and in intellect..." - Thomas Macaulay, Minute Upon Indian Education

একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বময় কর্মকান্ডে আমাদের অর্থাৎ ভারতবাসীদের অংশদারিত্ব বাড়ার সাথে সাথে আমরা প্রতিনিয়ত কয়েকটি মৌলিক এবং কয়েকটি বেশ অস্বস্তিকর জাতীয় প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি. আমরা কারা? আমাদের জাতিগত পরিচয় কী? ভারতীয়তার অর্থ কী? ধর্মগত পরিচয়গুলির প্রেক্ষিতে ভারতীয়তার স্থান কোথায়?

বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, এই প্রশ্নগুলিই আজকের ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ন্যারাটিভগুলি স্থির করে দিচ্ছে। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার এই যে, এই প্রশ্নগুলির উত্তর বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই জাতীয় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ দ্বারা স্থির হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। আর যাই হোক, একটি দেশের আইডেন্টিটি সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে না পারলে সেই আইডেন্টিটি রক্ষা ও প্রতিপালনের স্বার্থে জাতীয় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ঠিকঠাক তৈরী করতে পারা যায় না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তৎকালীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতাদের নির্বুদ্ধিতা, ক্ষমতা-লোভ এবং অদূরদর্শিতার কারণে ভারতবর্ষের মানুষ এই প্রশ্নগুলির যথাযথ এবং সম্মিলনকামী উত্তর নিয়ে আজও বিবাদমান।

এই প্রশ্নগুলি নিয়ে সেসময় কেউ ভাবেননি বা তীক্ষ্ণবুদ্ধি দিয়ে কেউ উত্তর খুঁজে যাননি, এটা বলা কিন্তু ভুল হবে। ভেবেছিলেন অগ্নিতাপস শ্রী অরবিন্দ, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য, দেবব্রত বসু, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমুখ। এবং তাঁদের ভাবনা তাঁরা লিপিবদ্ধ করে গেছেন 'যুগান্তর', 'বন্দেমাতরম', 'নিউ ইন্ডিয়া' ইত‍্যাদি পত্রিকা এবং শতসহস্র প্রবন্ধগুচ্ছে। ওই ১৯০৭-০৮ এর দিকে। বস্তুত, শ্রী অরবিন্দের জীবনের একটা বিশাল বড় অধ্যায় (১৮৯৩-১৯১০) এই প্রশ্নগুলির জবাব খুঁজতে এবং সেই ব্যাখ্যা এবং জবাবগুলি দিয়ে বাংলার বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করতে কেটে গিয়েছিল। আজকাল আমরা যে হিন্দুত্ববাদী আইকনদের সাথে সাথে প্যান-ইন্ডিয়ান আইকনও খুঁজছি তার প্রমাণ পাওয়া যায় এই নব-হিন্দুত্ব আন্দোলনে হিন্দুদের মুখে বারংবার অরবিন্দ ঘোষের প্রাসঙ্গিক অবতারণা ও উল্লেখ দেখে।

১৮৩৫ সালে English Education Act যখন পাস করানো হয়, তখন এর উদ্দেশ্য ছিল যে ব্রিটিশ কলোনী-গুলিতে এক শ্রেণীর 'শিক্ষিত' শ্রেণী তৈরী করা যারা নিজেদের সংস্কৃতি-কে ঘৃণা করবে, যা কিছু ইউরোপিয়ান তার অন্ধ সমর্থক হবে এবং ব্রিটিশ প্রভুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সারা ভারতবর্ষে প্রচার করবে। Macaulay নামক শয়তানটির এব‍্যাপারে সাংস্কৃতিক ঔদ্ধত্য তাঁর নিম্নোক্ত উদ্ধৃতিটি থেকে বোঝা যায়: "I have never found one among them who could deny that a single shelf of a good European library was worth the whole native literature of India and Arabia... when we pass from works of imagination to works in which facts are recorded, and general principles investigated, the superiority of the Europeans becomes absolutely immeasurable."

এই উক্তিটি, বিজ্ঞান হোক বা কলা, কোনোক্ষেত্রেই সত্যি নয় তা বলাই বাহুল্য। পাঠকরা এব্যাপারে তর্ক করতে চাইলে আমি রাজি আছি।

সে যাই হোক, এই Macaulayism ধীরে ধীরে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এত গভীরে চলে গেছে যে আমরা চাইলেও এটা সম্পূর্ণ উৎপাটন করতে এক-দুটো প্রজন্ম লাগবে। এবং এই Macaulayism এমন একটি ক্লাস তৈরী করেছে, যারা মাতৃভাষায় দক্ষ নয়, মাতৃভাষায় লিখতে পড়তেও পারে না, তবে ইংরেজিতে চোস্ত। এই শ্রেণীটি পাশ্চাত্য সভ্যতার সব কিছুকেই অপার শ্রদ্ধার সাথে দেখে এবং গুনাগুন, কনটেক্সট, ইতিহাস বিচার না করেই পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণে ব্যস্ত থাকে। এই শ্রেণীটি টিভি-তে, রেডিও-তে, ইউটুবে তর্ক-বিতর্কে অংশ নেয় এবং নিজ-আইডেন্টিটি, নিজ-সংস্কৃতি, নিজ-ঐতিহ্যের টুইস্টেড, অর্থহীন সমালোচনা করতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হয় না। এই শ্রেণীটির কয়েকটি মূল লক্ষণ আমি নিচে লিপিবদ্ধ করছি:

১. ভয়/সংকোচ: কে কী ভাববে তা নিয়ে এঁরা সতত দুশ্চিন্তায় থাকেন। politically অত্যন্ত কারেক্ট।

২. কম আত্মপ্রত্যয়: প্রচুর পড়াশুনো করেও এঁরা তর্কবিতর্কের ঠিক লাইনটা যেন কোনোদিন খুঁজে পায়!

৩. নিজের মতামত সুস্পষ্টভাবে ব‍্যক্ত করার পরিবর্তে যখন-তখন ট্যাঁকে গুঁজে রাখা গুচ্ছের কিছু মনীষী থেকে বৈপ্লবিক quote আওড়ে দেয়।

৩. নিজ-সংস্কৃতির তুখোড় সমালোচক: এরা ভাবে এটা করে বেশি পয়েন্ট পাওয়া যায় (পয়েন্টগুলো কে দেয়, ভগবান জানে!)

৪. তর্কের সময় ধর্ম, স্পিরিচুয়ালিটি, বিজ্ঞান, মার্ক্সবাদ সব একেবারে ঘেঁটে ফেলে। (Macaulayism-এর স্থূলবুদ্ধি দিয়ে অবশ‍্য এই টপিকগুলির সূক্ষ্মতা বা সম্বন্ধ কিছুই ঠিকভাবে বোঝা যায় না)।

৫. হতোদ্যম: এঁরা কিন্তু আসলে ভীষণ অলস এবং বেশির ভাগ সময় কথা বেচে খায়। সুপারনোভা বিস্ফোরণ হোক বা তিমিমাছের প্রজনন, টিভিতে লাইভ ডিবেটে এরা মতামত রাখতে অত‍্যন্ত তৎপর।

৬. রাজনৈতিক ভিক্ষাবৃত্তি (political mendicancy): সেহেতু এদের কোনো শক্ত বিশ্বাস নেই, তাই এরা random রাজনৈতিক শক্তির কাছে ছোট ছোট কারণে ফেভার চাইতে পিছপা হয় না।

যাই হোক, ব্যক্তি-সমালোচনা করা এই প্রবন্ধটিতে আমার মূল লক্ষ্য নয়। হাজার হোক, ম‍্যাকৌলে-পুত্রদেরও নিজস্ব ওপিনিয়ন আছে এবং ভারতীয় সংবিধান সেই ওপিনিয়ন মুক্ত-কণ্ঠে ব্যক্ত করার অধিকার সব্বাইকে দেয়।

সমস্যাটা আসলে অন্য জায়গায়। এই শ্রেণীটির দেশপ্রেম শূন্য বা ঋনাত্মক হওয়া সত্ত্বেও এঁরা আপাতভাবে ভারতবর্ষের 'শিক্ষিত' শাসক, এবং বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে রিপ্রেসেন্ট করে. ফলস্বরূপ, দেশের সংকটের মুহূর্তগুলিতে এদের সঠিক এবং সাহসী নেতৃত্বের সর্বোচ্চ স্তরে দরকার পড়লেও এদের গলা থেকে 'দেশের জন্য জান দিয়ে দিতে পারি'-জাতীয় স্লোগান বা মানসিকতা কখনোই প্রতিধ্বনিত হয় না.

এই ম‍্যাকৌলে-পুত্ররাই ১৯৪৬-এর শেষ দিকে নিজেদের নির্বুদ্ধিতা, দুষ্টুবুদ্ধি, কাপুরুষতা, লো সেলফ-এস্টিমের কারণে ভারত ভেঙেছিল এবং এই ম‍্যাকৌলে-পুত্ররাই দেশবাসীকে রক্ষা করার বদলে ভয়ঙ্কর দাঙ্গার দিকে দেশবাসীকে ঠেলে দিয়েছিল।

যখন মুসলিম লীগ এবং জিন্নাহ ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-তে ঘোষনা করে ফেলেছে, "we shall have either a divided India or a destroyed India", তখন এই Macaulay-র অবৈধ সন্তান কংগ্রেসি-রা মিটিংগুলিতে কিভাবে টাইম পাস করছিলেন, তা শুনলে রক্ত গরম হয়ে যায়!

আমি নীচে কংগ্রসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-টির একটি বিবরণ রামমনোহর লোহিয়া-র 'Guilty Men of India's Partition' থেকে অনুবাদ করলাম। উনি লিখছেন:

" এটাই স্বাভাবিক যে ব্রিটিশরা এমনভাবে ভারতবর্ষ ভাগ করতে চাইবে যা তাদের পক্ষে সর্বাধিক লাভজনক হবে, তা সে ভারতের পক্ষে যতই ক্ষতিকর হোক না কেন...যত সময় গড়াবে, এই দেশভাগের কলঙ্ক স্বাধীনতালাভের গর্ব এবং চাকচিক্যকে গ্রাস করে ফেলবে। ঐতিহাসিকরা বিস্মিত হবে যে, কীভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের সাথে নির্লজ্জভাবে হাত মিলিয়েছিল...

স্বাধীনতার লড়াইতে ভারতীয় নেতৃত্ব, তাঁদের প্রস্তাব এবং পরিকল্পনায় এক সার্বিক ঔদাসীন্য দেখে অবাক হতে হয়। তারা হঠাৎ হঠাৎ প্রস্তাব পেশ করেন, চুপচাপ বসে মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখেন এবং আশা করেন যে তাঁদের কোনো প্রচেষ্টা ছাড়াই মানুষের মধ্যে সংগ্রামী চেতনা এবং উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়বে....

আমি এপ্রসঙ্গে সেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং-এর বিস্তৃত বিবরণ দিতে চাই যে মিটিং-এ দেশভাগের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হয়েছিল। সেই মিটিং-এ আমি এবং জয়প্রকাশ নারায়ণ- এই দুজন সোসালিষ্ট নেতাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল এবং সেই মিটিং-এ আমরা দুজন, মহাত্মা গান্ধী এবং খান আব্দুল গফ্ফার খান ছাড়া আর কেউই দেশভাগের বিরুদ্ধে একটা শব্দ উচ্চারণ করেননি।

মিটিংয়ের দুই দিনই মৌলানা আজাদ ছোট্ট রুমটার এককোনে একটা ছোট্ট চেয়ার-এ চুপচাপ অবিরাম সিগারেট ফুঁকছিলেন. হয়তো উনি খুব ব্যাথা পেয়েছিলেন..কিন্তু উনি মিটিং-এ শুধু প্রবলভাবে নিশ্চুপই থাকেননি, টুকরো হয়ে যাওয়া ভারতের এক দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষা-মন্ত্রক সামলেছেন..উনি নাকি এর আগে মুখোমুখি মিটিং-এ দেশভাগের প্রতিবাদ করেছিলেন, কিন্তু উনি বরাবরই 'opposition' এবং 'service'-এর এক অদ্ভুত ককটেল বজায় রেখে গেছেন। It might be interesting to explore Maulana Azad's conscience, as I sometimes suspect that wisdom and elasticity go together…"

"আচার্য কৃপালানি সেইসময় কংগ্রেস পার্টি-র প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি মিটিং-টিতে নিদ্রালু হয়ে নুয়ে পড়ছিলেন( He sat drowsily and reclined at this meeting)। মাঝে মাঝে মহাত্মা গান্ধী ক্লান্ত প্রেসিডেন্ট-এর নাম নিচ্ছিলেন এবং আমাকে অত্যন্ত বিরক্তির সাথে আচার্যকে ঠেলে জাগাতে হচ্ছিলো...

খান আব্দুল গফ্ফার খান বড়জোর দু-একটি বাক্য বলেছিলেন..তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন যে তার সহকর্মীরা দেশভাগ মেনে নিচ্ছেন। ছোট্ট দয়া হিসেবে তিনি জানতে চাইছিলেন, গণভোট দ্বারা নর্থ-ওয়েস্ট প্রভিন্স-এর (বর্তমানে খাইবার-পাখতুনবা) জনগণদের কাছে ভারত বা পাকিস্তান যোগ দেওয়ার বিকল্প আছে কিনা। আমি নিশ্চিত, উনি পুরো বিষয়টিতে খুব দুঃখ পেয়েছিলেন...

আমি এখানে বিশেষভাবে গান্ধীজির দুটি পয়েন্ট তুলে ধরতে চাই: মিটিংটিতে গান্ধীজি মিস্টার নেহেরু এবং সর্দার প্যাটেলকে মৃদু স্বরে অভিযোগ করলেন, তাঁকে না জানিয়েই এই দুজন দেশভাগের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেছেন। গান্ধীজি আর কিছু বলার আগেই নেহেরু ব্যাতিব্যস্তভাবে ওনাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলেন যে গান্ধীজিকে এই ব্যাপারে সবকিছু janano হয়েছিল। গান্ধীজি বারবার নেহরুর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করতে থাকেন। নেহেরু তার পূর্ব-ব্যক্ত দাবি থেকে একটু সরে গিয়ে বলেন, নোয়াখালী অনেক দূরে ছিল এবং এই প্রস্তাব ডিটেলস-এ না জানালেও মোটা মোটা ভাষায় তিনি গান্ধীজিকে এব্যাপারে লিখেছিলেন...স্পষ্টতই নেহেরু এবং সর্দার প্যাটেল দেশভাগের বিষয়টি নিজেদের মধ্যে স্থির করে নিয়েছিলেন এবং গান্ধীজি ভড়কে যাবেন এই ভেবে পুরো কর্মকান্ড সম্পন্ন করার আগে গান্ধীজিকে দেশভাগের বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেছিলেন। এরপর গান্ধীজি ওনার দ্বিতীয় বক্তব্য ব্যক্ত করেন। তিনি বাকি সকলকে কংগ্রেস নেতামণ্ডলীর প্রস্তাবিত দেশভাগের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে বলেন…"

"আমি এপ্রসঙ্গে ১৯৪৬ সালে নোয়াখালীর আশেপাশে কোনো এক স্থানে নেহরুর সাথে আমার একটি ব্যক্তিগত কথোপকথন উল্লেখ করতে চাই। নেহেরু আমায় পূর্ব-বঙ্গে তাঁর দেখা জলাশয়, পাঁক, ঝোপ-ঝাড়, গাছপালা ইত্যাদির কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে তাঁর অভিমত জানান যে এই পূর্ব-বাংলা তাঁর চেনা-জানা ভারতবর্ষ নয়। এই যুক্তিতে তিনি প্রবলভাবে পূর্ব-বাংলাকে ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ড থেকে কেটে ফেলতে চেয়েছিলেন (He said that that was not the India he or I knew and wanted with some vehemence to cut East Bengal away from the main land of India)।
"

মানে বুঝুন, নেহেরু-চাচার পূর্ব-বঙ্গ ভালো লাগেনি বলে উনি পুরো দেশটাই ভেঙে ফেললেন!

এরকম মাকাউলি-পুত্রের বর্তমান আদর্শ উদাহরণ হলো: শশী থারুর। ভদ্রলোক দু-বছরে পিএইচডি শেষ করেছেন, UNO তে প্রায় ৩০ বছর কাজ করেছেন. প্রচন্ড ইন্টেলচ্যুয়াল! কিন্তু সেই একই ভদ্রলোক রাহুল গান্ধীর subservient! বস্তুত, মালিকের ক্রীতদাস হয়ে থাকো, মুখের ওপর কথা বোলো না, প্রতিবাদ করা ভুলে যায়..ইহাই Macaulayism!

সনাতন্ হিন্দু ধর্মে পবিত্র সংখ্যা ১০৮ এত মহাত্মপূর্ণ কেন...???

সনাতন্ বৈদিক হিন্দু ধর্মে, ১০৮ সংখ্যা টি অত্যন্ত পবিত্র সংখ্যা রূপে গণ্য করা হয়। কিন্তু কেন...??? কলমে :- অরিন্দম রায়। আমাদের যো...