Thursday, October 26, 2023

কমিউনিজম

লিখন: বিজিৎ প্রশান্থা

এই পোস্টটিতে আমি ভারতীয়তার মতো একটি all-inclusive ধারণার প্রেক্ষিতে বামপন্থার মত একটি বাইনারি ধারণার অসারতা নিয়ে লিখছি, যাতে পরের বছর এলিট বাঙালিরা ওয়াইন চাটতে চাটতে 'আমি বামপন্থী'-জাতীয় স্লোগান দেবার আগে একটু ভেবে দেখার সুযোগ পান যে এই রক্তবীজের ঝাড় আমাদের রাজ‍্যের কতদূর সর্বনাশ করার ক্ষমতা রাখে এবং পরের বছর নির্বাচনে এদের বিলুপ্তি বাঙালিদের জন‍্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

কমিউনিস্ট ম্যানিফেস্টো- মূলতত্ত্ব:
কমিউনিজম এমনই একটি বাইনারি আইডিয়া যেখানে মানবসভ‍্যতার ইতিহাসকে শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস হিসাবে তত্ত্বায়িত করা হয়েছে। কমিউনিজম যেকোনো সমাজকে আড়াআড়ি দুটি সম্প্রদায়ে বিভাজিত করে, বুর্জোয়া বা অভিজাত এবং প্রলেতারিয়েৎ অর্থাৎ (মূলতঃ) শ্রমজীবী। কমিউনিজমের মতে বুর্জোয়া মূলতঃ সুবিধাভোগী সম্প্রদায় যারা প্রলেতারিয়েতের শ্রমলব্ধ উৎপাদন এবং সম্পদ বে-লাগামভাবে উপভোগ করে এবং এজন‍্য যেন-তেন-প্রকারেন রাজনৈতিক এবং আর্থিক ক্ষমতা নিজেদের কুক্ষিগত রাখতে চায়। ফলতঃ প্রলেতারিয়েৎ সম্প্রদায় তাদের শ্রমের প্রাপ‍্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হতে থাকে এবং ক্রমশঃ সর্বহারা একটি সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। এরই প্রেক্ষিতে কমিউনিস্ট ম‍্যানিফেস্টো দুনিয়ার সমস্ত মজুরদের এক হয়ে একটি শ্রেণীসংগ্রামের সূচনা করতে বলে।

এই ম‍্যানিফেস্টোর একটি আপাত আদর্শবাদ আছে যা শ্রমিকদরদী এবং গরীবদরদী যেকোনো মানুষকে আকৃষ্ট করতে বাধ‍্য। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলে এই মতবাদটির অসারতা, অসংগতি, এবং বিপজ্জনক সম্ভাবনা উপলব্ধি করা যায়।

ক. দ্বিত্বতা:
কমিউনিজম একটি বাইনারি অর্থাৎ দ্বিত্ববাদ। এই মতবাদ সমাজকে দুটি শ্রেণীতে ভেঙে ফেলে। এবং তা করতে গিয়ে কমিউনিজম সেই সমাজের অার্থিক, রাজনৈতিক এবং চিন্তাধারার স্পেকট্রাম এবং বিভিন্নতা অস্বীকার করে। সমাজের সাংস্কৃতিক বিবিধতা, বিভিন্ন অংশের মানুষের ব‍্যক্তিগত স্তরে সম্পর্ক, রীতি-রেওয়াজ, এমনকী একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং অখন্ডতা- কমিউনিজম এর কোনোটিরই পরোয়া করে না। সুতরাং, মানুষকে সাদা-কালোয় বিভাজিত করার এই মতবাদ একটি বহুত্ববাদী সমাজের আদর্শ হতে পারে না। 'বিবিধের মাঝে মহান মিলনের' যে মন্ত্র, কমিউনিজম তা স্বীকার করে না।

খ. লঙ্ঘিত সার্বভৌমত্ব:
কমিউনিস্ট ম‍্যানিফেস্টোর দ্বিতীয় অধ‍্যায়ে লেখা আছে, "In the national struggles of the proletarians of the different countries, they point out and bring to the front the common interests of the entire proletariat, independently of all nationality." আপাতভাবে আদর্শবাদী মনে হলেও বর্তমান দুনিয়ায়, যেখানে প্রতিটি দেশের স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল, এই ধরনের চিন্তাধারার যৌক্তিকতা প্রশ্নাতীত নয়। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে কমিউনিজম অবলম্বন করার প্রেক্ষিতে এই সুপ্ত দ্বন্দ্ব অনেক ক্ষেত্রেই আঞ্চলিক অশান্তির জন্ম দিয়েছে, রাশিয়া এবং চীনের মতো দেশগুলি (এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ‍্য) যার জ্বলন্ত সাক্ষী। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার প্রাক্কালে কমিউনিস্ট পার্টিগুলি (পড়ুন: গঙ্গাধর অধিকারী থিসিস) ভারতবর্ষকে দুই বা তিন নয়, সতেরটি খন্ডে ভাগ করার প্রস্তাব পেশ করে। আপনারা অনুমান করতেই পারেন, ভারতীয় ভূখন্ড সতেরটি খন্ডে ভেঙে গেলে তা এই উপমহাদেশের স্থিতিশীলতার পক্ষে কতটা বিপজ্জনক হত এবং আজ পর্যন্ত ভারতের কোনো বামপন্থী দল এই 'অধিকারী থিসিস' খন্ডন করেননি বা এর প্রকাশ‍্যে মতবিরোধ করেননি!

গ. অবাঞ্ছিত বিভাজন এবং পার্টিসর্বস্বতা:
যেহেতু এই কমিউনিস্ট অ‍্যাজেন্ডা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোনো একটি রাজনৈতিক পার্টি দ্বারা পরিচালিত হয়, তাই এই বুর্জোয়া-প্রলেতারিয়েৎ বিভাজন মূলতঃ কমিউনিস্ট -নন-কমিউনিস্ট বিভাজন হয়ে দাঁড়ায়। অর্থাৎ যে শ্রেণীগত বিভাজনের অনুমানের উপর ভিত্তি করে কোনো কমিউনিস্ট পার্টির যাত্রা শুরু হয়, তা ক্রমশঃ একটি রাজনৈতিক দলগত বিভাজন হয়ে পড়ে। দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর মতো একটি আদর্শবাদী ধারণা ধীরে ধীরে পার্টিসর্বস্ব কার্যকলাপে পর্যবসিত হয়।

ঘ. কাঁকড়া-প্রব‍ৃত্তি (crab mentality):
কমিউনিজমের মূল ধারণা শ্রেণীসংগ্রাম যা একটি সমাজে শ্রেণীবিদ্বেষ সৃষ্টি করতে বাধ‍্য। সমাজের তথাকথিত উপরতলার মানুষের সাথে তথাকথিত নীচুতলার মানুষের প্রতিনিয়ত দ্বন্দ্ব এবং লড়াইয়ের পটভূমিতেই কমিউনিজমের ফুলে-ফলে বিকাশ ঘটে। কিন্তু এই সামাজিক লড়াই সমাজের সামূহিক বৃদ্ধি ব‍্যাহত করে। কমিউনিজম আদতে একটি কাঁকড়ার মানসিকতা যা নিজেকেও এগোতে দেয় না, উপরন্তু অন‍্য কেউ এগোতে চাইলে তাকেও টেনে নামায় (if I can't have it, neither can you)। কমিউনিজম না 'বুর্জোয়া' গোষ্ঠীকে উৎপাদন বাড়াতে অনুপ্রেরণা দেয়, না 'প্রলেতারিয়েৎ'-দের ব‍্যক্তিগত বিকাশের সুযোগ দেয়। সুতরাং কমিউনিজম যোগ‍্যতাতন্ত্র এবং গুণতন্ত্রের প্রবল বিরোধী একটি মতবাদ।

ঙ. কুক্ষিগত সম্পদ:
কমিউনিজমের আর একটি ধারনা ব‍্যক্তিগত সম্পত্তির বিলোপ:

"In this sense, the theory of the Communists may be summed up in the single sentence: Abolition of private property." - Communist Manifesto

কমিউনিস্টরা এই ধারনাটির প্রয়োগ করতে গিয়ে তর্কাতীতভাবে ছড়িয়েছে। সম্পত্তির সরকারিকরন যেমন একদিকে সম্পদের সার্বিক বৃদ্ধি ব‍্যাহত করেছে, তেমনই মানুষের স্বকীয়তাকে (individuality) পরিকল্পিতভাবে বিনষ্ট করেছে। এবং এর মাধ‍্যমে কমিউনিজমের সুবিধেই হয়েছে কারণ কমিউনিস্ট দেশগুলি নিজেদের দারিদ্র‍্যের জন‍্য উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশগুলিকে দোষারোপ করতে পেরেছে এবং এ যে এক বৃহত্তর শ্রেণীসংগ্রাম- এই ধারণা তুলে ধরে মানুষকে হগওয়াশ করতে পেরেছে। সম্পদই সম্পদ সৃষ্টি করে এবং মুক্ত বাজার সম্পদের আঞ্চলিক বৈষম‍্য ঘোচাতে পারে। অন‍্যদিকে সমস্ত সম্পদ কুক্ষিগত করে আষাঢ়ে আইন দ্বারা বাজার-নিয়ন্ত্রণ না বুর্জোয়ার মঙ্গলসাধন করে, না প্রলেতারিয়েতের। এখানে পাঠক বলতে পারেন, মুক্ত বাজারে কোনো বিশেষ একটি সম্পদে কোনো বিশেষ একটি কোম্পানির মনোপলি বা একাধিপত‍্যের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, সেক্ষেত্রে 'মুক্ত বাজার বৈষম‍্য কমায়' জাতীয় কথাবার্তা কতটা যুক্তিযুক্ত? এপ্রসঙ্গে বলে রাখি, পরিস্থিতির হিসেবে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা আমি করছি না। কিন্তু একটি রাষ্ট্রের সমস্ত সম্পদে, এমনকী তার অতীত-বর্তমান-ভবিষ‍্যত নির্ধারণে সরকারের মনোপলির আমি ঘোর বিরোধী।

চ. ইতিহাস ও সংস্কৃতির বিলোপ:
কমিউনিস্টরা এই 'abolition of private property' যুক্তিটিকে একরকম অসভ‍্য পর্যায়ে নিয়ে যায়। তাঁদের মতে, যেহেতু এই সমাজ (মানে যেকোনো সমাজ যা কমিউনিস্টদের কব্জাগত নয় আর কী!) গুণগতভাবে বুর্জোয়া সমাজ, তাই এখানে অতীতই বর্তমানকে শাসন করে। সুতরাং এই সমাজের যা কিছ অতীত এবং যা কিছু উত্তরাধিকার, কমিউনিজম সেই সমস্ত কিছু বিলোপ এবং ধ্বংস করার কথা বলে। কমিউনিজম এভাবে সমস্ত জাতির সাংস্কৃতিক ধ্বংস-সাধনের পক্ষে কথা বলে। এই ধারনাটি কতটা বিপজ্জনক, তা বর্তমান যুগে চীনা সরকার কর্তৃক সাধিত উইগুর মুসলমানদের সাংস্কৃতিক বিনাশের কর্মকান্ড দেখলেই বোঝা যায়। প্রসঙ্গতঃ, মধ‍্যপ্রাচ‍্যের মুসলিম সংস্কৃতি ধ্বংসের স্বার্থে রাশিয়ার কর্মকান্ডও এখানে স্মর্তব‍্য।

ছ. প্রপাগ‍্যান্ডা:
সুতরাং এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষের শিক্ষাব‍্যবস্থায় বামপন্থী চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ ভারতীয়তার মূলস্রোত থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবার প্রয়াস করেছে। যে মাও-সে-দঙ চীনে লক্ষ লক্ষ নরসংহার করেছে, যে মাও-সে-দঙের নেতৃত্বে চীন ভারতকে উনিশশো বাষট্টিতে আক্রমণ করে ভারতের মাটি কব্জা করে নিয়েছে, সেই মাও-য়ের প্রশস্তি আমি অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস বইতে পড়েছি। ভারতীয় ইতিহাসকে বিকৃত করার এই যে প্রয়াস, তা যে আসলে কমিউনিস্ট প্রপাগ‍্যান্ডা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

জ. কমিউনিস্ট সমাজের পরিণতি:
এখন তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, কমিউনিজম সর্বহারাদের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে ভাবে এবং সমাজে সাম‍্য আনার জন‍্য প্রতিনিয়ত আন্দোলন করে যায়, তাহলে আমরা এই নিখিল বিশ্বে তো একটা উদাহরণ খুঁজে পাব যেখানে কমিউনিজম বিদ‍্যমান, মানুষ ধনবান, সমাজে সমতা আছে এবং সব মানুষের মত প্রকাশের মুক্ত অধিকার আছে। কিন্তু নাহ্! ইতিহাস ভূগোল সব ঘেঁটে একটি উদাহরণও কেউ খুঁজে পাবে না যেখানে কমিউনিজম তার প্রতিশ্রুত ইউটোপিয়া জনগণকে ডেলিভার করেছে। মানুষ মূলতঃ একটি ক্ষমতালোভী প্রজাতি এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই কমিউনিজমের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা মানুষ সব ক্ষমতা এবং অধিকার কুক্ষিগত করে হয় মানুষের মগজধোলাই করেছে, নয়তো বঞ্চনা, দারিদ্র্য, হিংসা, গৃহযুদ্ধ, গণহত‍্যার দিকে মানুষকে ঠেলে দিয়েছে।

ঝ. পশ্চিমবঙ্গ এবং কমিউনিজম:
কমিউনিজমের সারকথা: 'লড়াই লড়াই লড়াই চাই'। এবং সমাজে এই লড়াই, বিভেদ, যুদ্ধ জিইয়ে রাখতে কমিউনিস্টরা যে কোনোরকমের শয়তানিতে সিদ্ধহস্ত। ভারতবর্ষের প্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই, তথাকথিত বামপন্থী দলগুলি পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ‍্যটির কী অপরিসীম সর্বনাশ করেছে! ভোটের লোভে অবাধে অনুপ্রবেশ করিয়েছে, শিক্ষাব‍্যবস্হায় মধ‍্যমেধাকে প্রাধান‍্য দিয়ে উঁচুপদগুলিতে পার্টি-ক‍্যাডারদের বসিয়েছে, বঙ্গসংস্কৃতির যথেচ্ছ বিকৃতি করেছে, দেশবিরোধী বাইরের শক্তিগুলির সাথে হাত মিলিয়েছে, বামবিরোধী মানুষদের অবাধে হত‍্যা করেছে, পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির মেরুদন্ড ভেঙে ফেলেছে ইত‍্যাদি।

ভারতের প্রেক্ষিতে কমিউনিজম:
ভারতের মতো একটি দেশ যা মোটের ওপর শান্তিপ্রিয়, সর্বংসহ এবং যে দেশ যুগ-যুগান্ত ধরে সর্ব-পন্থা-সমন্বয়ের জয়গান গেয়ে চলেছে, সেখানে কমিউনিজমের মত একটি চতুর, দ্বিত্ববাদী, ধ্বংসাত্মক মতবাদ না থাকলেও খুব একটা ক্ষতি হবে না। আমাদের সমাজকে অবশ‍্যই আরও বেশী মানবদরদী হতে হবে, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন‍্য আমাদের অবশ‍্যই লড়ে যেতে হবে, কিন্তু তার জন‍্য কমিউনিজমের হাত ধরার কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।

বাঁচুন। বাঁচতে দিন। কমিউনিজম এড়িয়ে চলুন।: কমিউনিজম ধর্মের মতোই এক আফিম। মানুষকে ইউটোপিয়ার স্বপ্ন দেখায়। দলবদ্ধ হতে বলে। সাম‍্যের জন‍্য লড়াই করতে বলে। কালক্রমে বর্গবিদ্বেষ মাথাচাড়া দেয়। কমিউনিস্টরা ক্ষমতাসীন হয়। এবং ধীরে ধীরে একটি সমাজের ঐক‍্য, সম্প্রীতি, ইতিহাস, সাংস্কৃতিক নিজস্বতা সমস্ত কিছু নির্মমভাবে ধ্বংস করে ফেলে।

তাই মানুষের মত মানুষ হোন। শিক্ষিত, বিবেচক, সহমর্মী হোন। এই গুণগুলির অভ‍্যাস করতে হলে কমিউনিস্ট হওয়ার প্রয়োজন হয় না।

English Education Act ১৮৩৫, ম্যাকলেবাদ এবং ভারতভাগের দোষী (কা)পুরুষবৃন্দ:

লিখন: বিজিৎ প্রশান্থা

"We must at present do our best to form a class who may be interpreters between us and the millions whom we govern; a class of persons, Indian in blood and colour, but English in taste, in opinions, in morals, and in intellect..." - Thomas Macaulay, Minute Upon Indian Education

একবিংশ শতাব্দীর বিশ্বময় কর্মকান্ডে আমাদের অর্থাৎ ভারতবাসীদের অংশদারিত্ব বাড়ার সাথে সাথে আমরা প্রতিনিয়ত কয়েকটি মৌলিক এবং কয়েকটি বেশ অস্বস্তিকর জাতীয় প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি. আমরা কারা? আমাদের জাতিগত পরিচয় কী? ভারতীয়তার অর্থ কী? ধর্মগত পরিচয়গুলির প্রেক্ষিতে ভারতীয়তার স্থান কোথায়?

বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, এই প্রশ্নগুলিই আজকের ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ন্যারাটিভগুলি স্থির করে দিচ্ছে। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার এই যে, এই প্রশ্নগুলির উত্তর বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই জাতীয় আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ দ্বারা স্থির হয়ে যাওয়া উচিত ছিল। আর যাই হোক, একটি দেশের আইডেন্টিটি সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে না পারলে সেই আইডেন্টিটি রক্ষা ও প্রতিপালনের স্বার্থে জাতীয় আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ঠিকঠাক তৈরী করতে পারা যায় না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তৎকালীন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতাদের নির্বুদ্ধিতা, ক্ষমতা-লোভ এবং অদূরদর্শিতার কারণে ভারতবর্ষের মানুষ এই প্রশ্নগুলির যথাযথ এবং সম্মিলনকামী উত্তর নিয়ে আজও বিবাদমান।

এই প্রশ্নগুলি নিয়ে সেসময় কেউ ভাবেননি বা তীক্ষ্ণবুদ্ধি দিয়ে কেউ উত্তর খুঁজে যাননি, এটা বলা কিন্তু ভুল হবে। ভেবেছিলেন অগ্নিতাপস শ্রী অরবিন্দ, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, অবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য, দেবব্রত বসু, বিপিনচন্দ্র পাল প্রমুখ। এবং তাঁদের ভাবনা তাঁরা লিপিবদ্ধ করে গেছেন 'যুগান্তর', 'বন্দেমাতরম', 'নিউ ইন্ডিয়া' ইত‍্যাদি পত্রিকা এবং শতসহস্র প্রবন্ধগুচ্ছে। ওই ১৯০৭-০৮ এর দিকে। বস্তুত, শ্রী অরবিন্দের জীবনের একটা বিশাল বড় অধ্যায় (১৮৯৩-১৯১০) এই প্রশ্নগুলির জবাব খুঁজতে এবং সেই ব্যাখ্যা এবং জবাবগুলি দিয়ে বাংলার বিপ্লবীদের উদ্বুদ্ধ করতে কেটে গিয়েছিল। আজকাল আমরা যে হিন্দুত্ববাদী আইকনদের সাথে সাথে প্যান-ইন্ডিয়ান আইকনও খুঁজছি তার প্রমাণ পাওয়া যায় এই নব-হিন্দুত্ব আন্দোলনে হিন্দুদের মুখে বারংবার অরবিন্দ ঘোষের প্রাসঙ্গিক অবতারণা ও উল্লেখ দেখে।

১৮৩৫ সালে English Education Act যখন পাস করানো হয়, তখন এর উদ্দেশ্য ছিল যে ব্রিটিশ কলোনী-গুলিতে এক শ্রেণীর 'শিক্ষিত' শ্রেণী তৈরী করা যারা নিজেদের সংস্কৃতি-কে ঘৃণা করবে, যা কিছু ইউরোপিয়ান তার অন্ধ সমর্থক হবে এবং ব্রিটিশ প্রভুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সারা ভারতবর্ষে প্রচার করবে। Macaulay নামক শয়তানটির এব‍্যাপারে সাংস্কৃতিক ঔদ্ধত্য তাঁর নিম্নোক্ত উদ্ধৃতিটি থেকে বোঝা যায়: "I have never found one among them who could deny that a single shelf of a good European library was worth the whole native literature of India and Arabia... when we pass from works of imagination to works in which facts are recorded, and general principles investigated, the superiority of the Europeans becomes absolutely immeasurable."

এই উক্তিটি, বিজ্ঞান হোক বা কলা, কোনোক্ষেত্রেই সত্যি নয় তা বলাই বাহুল্য। পাঠকরা এব্যাপারে তর্ক করতে চাইলে আমি রাজি আছি।

সে যাই হোক, এই Macaulayism ধীরে ধীরে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার এত গভীরে চলে গেছে যে আমরা চাইলেও এটা সম্পূর্ণ উৎপাটন করতে এক-দুটো প্রজন্ম লাগবে। এবং এই Macaulayism এমন একটি ক্লাস তৈরী করেছে, যারা মাতৃভাষায় দক্ষ নয়, মাতৃভাষায় লিখতে পড়তেও পারে না, তবে ইংরেজিতে চোস্ত। এই শ্রেণীটি পাশ্চাত্য সভ্যতার সব কিছুকেই অপার শ্রদ্ধার সাথে দেখে এবং গুনাগুন, কনটেক্সট, ইতিহাস বিচার না করেই পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণে ব্যস্ত থাকে। এই শ্রেণীটি টিভি-তে, রেডিও-তে, ইউটুবে তর্ক-বিতর্কে অংশ নেয় এবং নিজ-আইডেন্টিটি, নিজ-সংস্কৃতি, নিজ-ঐতিহ্যের টুইস্টেড, অর্থহীন সমালোচনা করতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠিত হয় না। এই শ্রেণীটির কয়েকটি মূল লক্ষণ আমি নিচে লিপিবদ্ধ করছি:

১. ভয়/সংকোচ: কে কী ভাববে তা নিয়ে এঁরা সতত দুশ্চিন্তায় থাকেন। politically অত্যন্ত কারেক্ট।

২. কম আত্মপ্রত্যয়: প্রচুর পড়াশুনো করেও এঁরা তর্কবিতর্কের ঠিক লাইনটা যেন কোনোদিন খুঁজে পায়!

৩. নিজের মতামত সুস্পষ্টভাবে ব‍্যক্ত করার পরিবর্তে যখন-তখন ট্যাঁকে গুঁজে রাখা গুচ্ছের কিছু মনীষী থেকে বৈপ্লবিক quote আওড়ে দেয়।

৩. নিজ-সংস্কৃতির তুখোড় সমালোচক: এরা ভাবে এটা করে বেশি পয়েন্ট পাওয়া যায় (পয়েন্টগুলো কে দেয়, ভগবান জানে!)

৪. তর্কের সময় ধর্ম, স্পিরিচুয়ালিটি, বিজ্ঞান, মার্ক্সবাদ সব একেবারে ঘেঁটে ফেলে। (Macaulayism-এর স্থূলবুদ্ধি দিয়ে অবশ‍্য এই টপিকগুলির সূক্ষ্মতা বা সম্বন্ধ কিছুই ঠিকভাবে বোঝা যায় না)।

৫. হতোদ্যম: এঁরা কিন্তু আসলে ভীষণ অলস এবং বেশির ভাগ সময় কথা বেচে খায়। সুপারনোভা বিস্ফোরণ হোক বা তিমিমাছের প্রজনন, টিভিতে লাইভ ডিবেটে এরা মতামত রাখতে অত‍্যন্ত তৎপর।

৬. রাজনৈতিক ভিক্ষাবৃত্তি (political mendicancy): সেহেতু এদের কোনো শক্ত বিশ্বাস নেই, তাই এরা random রাজনৈতিক শক্তির কাছে ছোট ছোট কারণে ফেভার চাইতে পিছপা হয় না।

যাই হোক, ব্যক্তি-সমালোচনা করা এই প্রবন্ধটিতে আমার মূল লক্ষ্য নয়। হাজার হোক, ম‍্যাকৌলে-পুত্রদেরও নিজস্ব ওপিনিয়ন আছে এবং ভারতীয় সংবিধান সেই ওপিনিয়ন মুক্ত-কণ্ঠে ব্যক্ত করার অধিকার সব্বাইকে দেয়।

সমস্যাটা আসলে অন্য জায়গায়। এই শ্রেণীটির দেশপ্রেম শূন্য বা ঋনাত্মক হওয়া সত্ত্বেও এঁরা আপাতভাবে ভারতবর্ষের 'শিক্ষিত' শাসক, এবং বুদ্ধিজীবী শ্রেণীকে রিপ্রেসেন্ট করে. ফলস্বরূপ, দেশের সংকটের মুহূর্তগুলিতে এদের সঠিক এবং সাহসী নেতৃত্বের সর্বোচ্চ স্তরে দরকার পড়লেও এদের গলা থেকে 'দেশের জন্য জান দিয়ে দিতে পারি'-জাতীয় স্লোগান বা মানসিকতা কখনোই প্রতিধ্বনিত হয় না.

এই ম‍্যাকৌলে-পুত্ররাই ১৯৪৬-এর শেষ দিকে নিজেদের নির্বুদ্ধিতা, দুষ্টুবুদ্ধি, কাপুরুষতা, লো সেলফ-এস্টিমের কারণে ভারত ভেঙেছিল এবং এই ম‍্যাকৌলে-পুত্ররাই দেশবাসীকে রক্ষা করার বদলে ভয়ঙ্কর দাঙ্গার দিকে দেশবাসীকে ঠেলে দিয়েছিল।

যখন মুসলিম লীগ এবং জিন্নাহ ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-তে ঘোষনা করে ফেলেছে, "we shall have either a divided India or a destroyed India", তখন এই Macaulay-র অবৈধ সন্তান কংগ্রেসি-রা মিটিংগুলিতে কিভাবে টাইম পাস করছিলেন, তা শুনলে রক্ত গরম হয়ে যায়!

আমি নীচে কংগ্রসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং-টির একটি বিবরণ রামমনোহর লোহিয়া-র 'Guilty Men of India's Partition' থেকে অনুবাদ করলাম। উনি লিখছেন:

" এটাই স্বাভাবিক যে ব্রিটিশরা এমনভাবে ভারতবর্ষ ভাগ করতে চাইবে যা তাদের পক্ষে সর্বাধিক লাভজনক হবে, তা সে ভারতের পক্ষে যতই ক্ষতিকর হোক না কেন...যত সময় গড়াবে, এই দেশভাগের কলঙ্ক স্বাধীনতালাভের গর্ব এবং চাকচিক্যকে গ্রাস করে ফেলবে। ঐতিহাসিকরা বিস্মিত হবে যে, কীভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের সাথে নির্লজ্জভাবে হাত মিলিয়েছিল...

স্বাধীনতার লড়াইতে ভারতীয় নেতৃত্ব, তাঁদের প্রস্তাব এবং পরিকল্পনায় এক সার্বিক ঔদাসীন্য দেখে অবাক হতে হয়। তারা হঠাৎ হঠাৎ প্রস্তাব পেশ করেন, চুপচাপ বসে মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখেন এবং আশা করেন যে তাঁদের কোনো প্রচেষ্টা ছাড়াই মানুষের মধ্যে সংগ্রামী চেতনা এবং উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়বে....

আমি এপ্রসঙ্গে সেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং-এর বিস্তৃত বিবরণ দিতে চাই যে মিটিং-এ দেশভাগের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হয়েছিল। সেই মিটিং-এ আমি এবং জয়প্রকাশ নারায়ণ- এই দুজন সোসালিষ্ট নেতাকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল এবং সেই মিটিং-এ আমরা দুজন, মহাত্মা গান্ধী এবং খান আব্দুল গফ্ফার খান ছাড়া আর কেউই দেশভাগের বিরুদ্ধে একটা শব্দ উচ্চারণ করেননি।

মিটিংয়ের দুই দিনই মৌলানা আজাদ ছোট্ট রুমটার এককোনে একটা ছোট্ট চেয়ার-এ চুপচাপ অবিরাম সিগারেট ফুঁকছিলেন. হয়তো উনি খুব ব্যাথা পেয়েছিলেন..কিন্তু উনি মিটিং-এ শুধু প্রবলভাবে নিশ্চুপই থাকেননি, টুকরো হয়ে যাওয়া ভারতের এক দশকের বেশি সময় ধরে শিক্ষা-মন্ত্রক সামলেছেন..উনি নাকি এর আগে মুখোমুখি মিটিং-এ দেশভাগের প্রতিবাদ করেছিলেন, কিন্তু উনি বরাবরই 'opposition' এবং 'service'-এর এক অদ্ভুত ককটেল বজায় রেখে গেছেন। It might be interesting to explore Maulana Azad's conscience, as I sometimes suspect that wisdom and elasticity go together…"

"আচার্য কৃপালানি সেইসময় কংগ্রেস পার্টি-র প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি মিটিং-টিতে নিদ্রালু হয়ে নুয়ে পড়ছিলেন( He sat drowsily and reclined at this meeting)। মাঝে মাঝে মহাত্মা গান্ধী ক্লান্ত প্রেসিডেন্ট-এর নাম নিচ্ছিলেন এবং আমাকে অত্যন্ত বিরক্তির সাথে আচার্যকে ঠেলে জাগাতে হচ্ছিলো...

খান আব্দুল গফ্ফার খান বড়জোর দু-একটি বাক্য বলেছিলেন..তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন যে তার সহকর্মীরা দেশভাগ মেনে নিচ্ছেন। ছোট্ট দয়া হিসেবে তিনি জানতে চাইছিলেন, গণভোট দ্বারা নর্থ-ওয়েস্ট প্রভিন্স-এর (বর্তমানে খাইবার-পাখতুনবা) জনগণদের কাছে ভারত বা পাকিস্তান যোগ দেওয়ার বিকল্প আছে কিনা। আমি নিশ্চিত, উনি পুরো বিষয়টিতে খুব দুঃখ পেয়েছিলেন...

আমি এখানে বিশেষভাবে গান্ধীজির দুটি পয়েন্ট তুলে ধরতে চাই: মিটিংটিতে গান্ধীজি মিস্টার নেহেরু এবং সর্দার প্যাটেলকে মৃদু স্বরে অভিযোগ করলেন, তাঁকে না জানিয়েই এই দুজন দেশভাগের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেছেন। গান্ধীজি আর কিছু বলার আগেই নেহেরু ব্যাতিব্যস্তভাবে ওনাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলেন যে গান্ধীজিকে এই ব্যাপারে সবকিছু janano হয়েছিল। গান্ধীজি বারবার নেহরুর এই দাবি প্রত্যাখ্যান করতে থাকেন। নেহেরু তার পূর্ব-ব্যক্ত দাবি থেকে একটু সরে গিয়ে বলেন, নোয়াখালী অনেক দূরে ছিল এবং এই প্রস্তাব ডিটেলস-এ না জানালেও মোটা মোটা ভাষায় তিনি গান্ধীজিকে এব্যাপারে লিখেছিলেন...স্পষ্টতই নেহেরু এবং সর্দার প্যাটেল দেশভাগের বিষয়টি নিজেদের মধ্যে স্থির করে নিয়েছিলেন এবং গান্ধীজি ভড়কে যাবেন এই ভেবে পুরো কর্মকান্ড সম্পন্ন করার আগে গান্ধীজিকে দেশভাগের বিষয়ে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেছিলেন। এরপর গান্ধীজি ওনার দ্বিতীয় বক্তব্য ব্যক্ত করেন। তিনি বাকি সকলকে কংগ্রেস নেতামণ্ডলীর প্রস্তাবিত দেশভাগের সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে বলেন…"

"আমি এপ্রসঙ্গে ১৯৪৬ সালে নোয়াখালীর আশেপাশে কোনো এক স্থানে নেহরুর সাথে আমার একটি ব্যক্তিগত কথোপকথন উল্লেখ করতে চাই। নেহেরু আমায় পূর্ব-বঙ্গে তাঁর দেখা জলাশয়, পাঁক, ঝোপ-ঝাড়, গাছপালা ইত্যাদির কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে তাঁর অভিমত জানান যে এই পূর্ব-বাংলা তাঁর চেনা-জানা ভারতবর্ষ নয়। এই যুক্তিতে তিনি প্রবলভাবে পূর্ব-বাংলাকে ভারতবর্ষের মূল ভূখণ্ড থেকে কেটে ফেলতে চেয়েছিলেন (He said that that was not the India he or I knew and wanted with some vehemence to cut East Bengal away from the main land of India)।
"

মানে বুঝুন, নেহেরু-চাচার পূর্ব-বঙ্গ ভালো লাগেনি বলে উনি পুরো দেশটাই ভেঙে ফেললেন!

এরকম মাকাউলি-পুত্রের বর্তমান আদর্শ উদাহরণ হলো: শশী থারুর। ভদ্রলোক দু-বছরে পিএইচডি শেষ করেছেন, UNO তে প্রায় ৩০ বছর কাজ করেছেন. প্রচন্ড ইন্টেলচ্যুয়াল! কিন্তু সেই একই ভদ্রলোক রাহুল গান্ধীর subservient! বস্তুত, মালিকের ক্রীতদাস হয়ে থাকো, মুখের ওপর কথা বোলো না, প্রতিবাদ করা ভুলে যায়..ইহাই Macaulayism!

হিন্দুত্ব without বিজেপি এবং একম সনাতন ভারত

লিখন: বিজিৎ প্রশান্থা

সম্প্রতি এক উঁচুস্তরের দিল্লী মহলের নেতা JNU -এর এক হিন্দুবাদী প্রফেসর আনন্দ রঙ্গনাথনের কাছে নাকি এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে [১], এই হিন্দু-মুসলিম আগুন যত লেগে থাকবে, বিজেপি-র পক্ষে ততই মঙ্গল। ড: রঙ্গনাথনের এই হাটে-হাঁড়ি-ভাঙা বক্তব্য যে সত্যি,- মানে বিজেপি যে এটাই চায়- তা নিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে দেশের কোনো নাগরিকেরই কোনো সন্দেহ নেই।

কিন্তু একটা স্বার্থপর, সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন : এই আগুনে কে জ্বলছে,আর কে আঁচ পোহাচ্ছে? বিজেপির পলিটিক্সে যদি হিন্দুত্বের লাভ হয়ে থাকে, তাহলে স্বার্থপর,সাম্প্রদায়িক, গর্বিত হিন্দু হিসেবে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? বিজেপি কি সত্যিই হিন্দুত্ববাদী পার্টি? বিজেপি নেতারা কি সত্যিই হিন্দুত্বের জন্য, হিন্দুত্বের হয়ে, হিন্দু হিসেবে লড়ে? এই যে জি*হাদি শক্তিগুলোর সামনে হিন্দু বাঙালিকে আগের চেয়েও বেশি অসহায় দেখায়, এটা কি হিন্দুদের চরম আত্মবিশ্বাসহীনতা, নাকি এটা বিজেপি হাই-কম্যান্ড-এর পূর্ব-পরিকল্পিত, সাজানো ব্যর্থতা - যাতে বিজেপি হিন্দু-লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ফোবিয়ার রাজনীতি করতে পারে এই বলে যে, 'বিজেপি-কে ভোট দাও নয়তো তোমাদের বাকি সবাই মেরে ফেলবে'? সর্বোপরি, হিন্দুরাষ্ট্র নামক খুড়োর কলে অসংগঠিত হিন্দু সমাজকে টাঙ্গিয়ে, সারাক্ষন গণ-মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম চেঁচিয়ে বিজেপি নেতারা যে হিন্দুদের কাছে হিন্দুত্ববাদের স্বার্থে ভোটের জন্য আবদার করে, বিজেপি সেই হিন্দুত্ববাদের বিষয়ে কতটা আন্তরিক?

'তুষ্টিকরণ' নয়, 'তৃপ্তিকরণ' রাজনীতি:

২০১৪-এ মোদির স্লোগান ছিল 'সবার বিকাশ, তুষ্টিকরণ কারো নয়'। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ২০১৯ লোকসভা জেতার পর ঘোষণা করেন, এবার 'তুষ্টিকরণ' রাজনীতির দিন শেষ এবং 'তৃপ্তিকরণ' রাজনীতির শুরু। নরেন্দ্র মোদী নতুন নতুন শব্দাবলী চয়ন করার জন্য গোবলয় রাজ্যগুলিতে সুপ্রসিদ্ধ। কিন্তু এই তৃপ্তিকরণ রাজনীতির পরিসংখ্যান, বলা বাহুল্য, খুবই ভয়াবহ। ২০১৯-এর স্লোগান বিজেপি-র পূর্ব সংখ্যালঘু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নাকভি-র গলাতেও বেশ দৃপ্তভাবে শোনা যায় [২]: 'কংগ্রেস ৭০ বছরে মুসলিমদের জন্য যা করেনি, মোদী ৭ বছরে তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ মুসলিমদের জন্য করে দিয়েছে'। কারণ:

ক) কংগ্রেস যদি সত্তর বছরে টোটাল ৩ কোটি মুসলিমদের ছাত্রবৃত্তি দিয়ে থাকে, তাহলে বিজেপি সাত বছরে পাঁচ কোটিরও বেশী মুসলিমদের স্কলারশিপ দিয়েছে।

খ) টেকনিকাল চাকরি কংগ্রেস যদি ২০০০০ মুসলিমদের দিয়ে থাকে, তাহলে বিজেপি সাড়ে-২১ লক্ষ মুসলিমদের দিয়েছে।

গ) কংগ্রেস জমানায় মাত্র ৫% মুসলিম সরকারি চাকরি পেয়েছিল, সাত সালেই এই হার ১০% পৌঁছে গেছে।

ঘ) টোটাল জনসংখ্যার মাত্র ১৫% হওয়া সত্ত্বেও মোদী ৩৭-৩৮% কেন্দ্রীয় সম্পদে মুসলিমদের অধিকার দিয়ে ফেলেছে, যদিও এই বিশাল পরিমাণ অসামঞ্জস্যতা আসলে হিন্দু দলিত এবং জনজাতি সমাজকে ক্রমশ পেছনে ঠেলে দিচ্ছে।

ঙ) বর্তমানে মোদী সরকার মুসলিমদের জন্য প্রকাশ্যে কয়েক ডজন প্রকল্প চালাচ্ছে: 'নিকাহ শগুন', 'হুনর হাট', মাদ্রাসা অনুদান, হজ হাউস, ছাত্রবৃত্তি, মুফত IAS কোচিং, মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়,'নয়ি মঞ্জিল', 'নয়ি উড়ান', 'নয়ি রোশনি', 'নয়া সবেরা', 'গরীব নাওয়াজ', সস্তা দেনা, 'পড়ো পরদেশ' ইত্যাদি। কিন্তু মোদির চালানো 'হিন্দু'-স্পেসিফিক প্রকল্প, যা শুধুমাত্র হিন্দু পরিচয়ের ভিত্তিতে দেওয়া হয়,- এর সংখ্যা শূন্য।

বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-এর লঘুকরণ:

নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম বড় কীর্তি হলো গুজরাটে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দাপট লাঘব করা। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হবার সুবাদে হিন্দুদের রাজনীতি-ব্যতিরেকে একত্রিত করতে প্রচেষ্ট ছিল। এর প্রমাণ ছিলেন স্বয়ং প্রবীন তোগাড়িয়া, যার অরাজনৈতিক জনসভায় যেকোনো বিজেপি নেতার চেয়ে বেশী ভীড় হতো এবং যার দাপটে ইসলামিক মৌলবাদী শক্তিগুলি গুজরাটে মাথাচাড়া দিতে পারতো না। মোদী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং আরএসএস-এর মতো অরাজনৈতিক সংগঠনগুলিকে বিজেপি-এর দলদাসে পরিণত করে ফেলে, যারা কালক্রমে বিজেপি-এর ভোট জোগাড় করার যন্ত্রে পরিণত হয় এবং স্বতন্ত্র হিন্দুকণ্ঠ হারিয়ে ফেলে। পরিণামস্বরূপ, মোদীর দশ বছরের কেন্দ্রীয় শাসনে হিন্দুরা বিজেপির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে এবং স্বতন্ত্র হিন্দু ইস্যুগুলি বিজেপির পলিটিক্স-এর আবর্তে তলিয়ে যায়। তাই যখন আজকাল গুজরাটে রামনবমীতে ভয়ঙ্কর দাঙ্গার খবর আসে, আমরা আর অতটাও আশ্চর্য হই না।

আবার অন্যদিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং আরএসএস-কে মোদীর মুসলিম তৃপ্তিকরণ বা হিন্দুত্ব-বিরোধী পলিসি-গুলিতে যেভাবে চুপ থাকতে দেখা যায়, তাতে নিঃসন্দেহে মনে হয় বিজেপি-আরএসএস-VHP ত্রয়ী সংস্থানগুলি বিরোধী দল হিসেবেই হিন্দুত্বের পক্ষে ভালো কাজ করে, - কিন্তু শাসক দল হিসেবে এদের চেয়ে বড় হিন্দু-ঘাতক সংস্থান আর কিছু নেই।

'ভাজপা-র মানে ভগবা নয়':

বিজেপির অধ্যক্ষ জেপি নাড্ডা কয়েক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করে যে, ভাজপা আর ভগবা এক নয়। বস্তুত এই হিন্দুত্ববাদ-সেক্যুলারিজম দ্বৈততাই বিজেপি-র রাজনীতির মূল রেসিপি। এজন্যই এরা জেনেবুঝে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে একজন সেক্যুলার নেতা বসিয়ে রেখে রাজ্য লেভেলে রেখেঢেকে হিন্দুত্ব রাজনীতি করে। তাই তো কেন্দ্রে যখন 'সেক্যুলার' বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকে, তখন 'হিন্দুবাদী' আডবাণী,মোদী-আদি নেতারা রথযাত্রায় বেরোয়। আবার কেন্দ্রে যখন 'সেক্যুলার' মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে চলে আসে, তখন উত্তরপ্রদেশে গেরুয়াবস্ত্র-ধারী যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে হিন্দুত্বের নাটক শুরু করে দেয়।

বিজেপি-র এই 'জলে-নামবো-কিন্তু-বেণী-ভেজাবো-না'-বাদী হিন্দুত্ব রাজনীতি আসলে প্রমাণ করে যে বিজেপি হিন্দুত্ববাদ নিয়ে আসলে অতটাও গম্ভীর নয় যতটা কংগ্রেস-কমিউনিস্ট-ইসলামিস্ট আঁতাত দাবি করে। এর মূল কারণ বিজেপি নামক সংস্থাটির প্রতিষ্ঠার গোড়া থেকেই নীতিগতভাবে বড় গলদ রয়ে গেছে। বিজেপি-র নিজস্ব বুদ্ধিজীবী কোষ (intellectual cell) বলে কিছু নেই, এদের নিজস্ব স্বদেশী বাস্তুতন্ত্র (eco-system) সম্পূর্ণ বায়বীয়, এদের অর্থনৈতিক মতাদর্শের সাহিত্যের মূল কথা গান্ধীবাদী সমাজবাদ (Gandhian Socialism) যা স্বয়ং কংগ্রেসও বিশ বছর আগে ত্যাগ করেছে , এদের হিন্দুত্ব 'ভারতমাতা', 'অখন্ড ভারত', 'সব ভারতবাসীই হিন্দু', 'One Nation One Religion' - এসব ফালতু gimmick-এ আটকে গেছে। একবিংশ শতাব্দীর ক্রম-পরিবর্তনীয় narrative-এর যুগে বিজেপি-র এই মান্ধাতা হিন্দুত্ববাদ সমর্থন করা হিন্দুদের জন্য বোকামো নয় - বরং বিপজ্জনক। কারণ এরকম হিন্দুত্ববাদ হিন্দু ধর্মের মৌলিক অবধারণাগুলি থেকে দূরে করে হিন্দুদের ক্রমশ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

স্বাধীনতার পর থেকে বামপন্থী কংগ্রেস-কমিউনিস্টদের ক্রমাগত অবমাননা সহ্য করার পরই হিন্দু সমাজ খেটেখুটে যখন বিশ্বমঞ্চে খাড়া হওয়ার চেষ্টা করছে, যখন ব্রিটিশ-দের নির্মিত বিষাক্ত জাতিবাদের ওপরে উঠে একত্রিত হয়ে দিল্লির মসনদের সামনে স্বাভিমান, সম্মান এবং অধিকার দাবি করছে, তখন তাদের বিরুদ্ধে একরকম ষড়যন্ত্র করেই বিজেপি Ambedkarite আন্দোলন খাড়া করে হিন্দুত্ব থেকে দলিত সমাজকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র করছে, টিভি চ্যানেল-এ চরম মৌলবাদী AIMIM দলের সদস্যদের জায়গা দিয়ে মুসলিমদের মৌলবাদের শিক্ষা দিচ্ছে এবং একই সাথে হিন্দু সমাজে ভীতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।

তাই জেপি নাড্ডাকে উদ্ধৃত করেই বলা যায়, বিজেপি মানেই ভগবা নয়। বরং ঐতিহাসিকভাবে বিজেপি ভগবা ইস্যুগুলি থেকে নিজেদের শত যোজন দূরে সরিয়ে রেখেছে। বিজেপি আসলে চায় যে, হিন্দু সমাজ হয় বিজেপির অনুগত এবং নমনীয় থাকুক,- নয়তো বিজেপি-কর্তৃত্ব-বিরোধী হলে একান্তই দুর্বল থাকুক। শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ হিন্দুত্ববাদ কংগ্রেসের পক্ষে যতটা অবাঞ্ছনীয়, বিজেপি-র কাছে ততটাই পরিত্যাজ্য।

'One Nation One Religion' তত্ত্ব:

PPSSC (পরম পূজ্য সার-সংঘ চালক) মহান ভাগবতের মতো কিছু 'দরকারি', 'দরবারি' গর্দভের মাধ্যমে বিজেপি বেশ কয়েক বছর ধরে সনাতনী হিন্দুত্বকে বিকৃত এবং অপসারণ করে সংঘি হিন্দুত্ব আমদানি করার চেষ্টা করছে। এর মূল লক্ষ্য হলো হিন্দুত্বকে শরিয়া-অনুগত করা, যাতে 'One Nation One Religion'-এর মতো দিবাস্বপ্নবাদী আদর্শ ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠা করা যায়। ভাগবত এপ্রসঙ্গে সম্প্রতি ‘One DNA theory’ নামক আর একটি বায়বীয় তত্ত্বের প্রবর্তন করেন, যার মূল কথা যে, হিন্দু-মুসলিম ঐক্য কেবল মরীচিকা নয় কারণ হিন্দু এবং মুসলিমদের DNA এক। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, মোদীর 'তৃপ্তিকরণ' রাজনীতির দরুন ভাগবত আশরাফ-মুল্লা-মুফতি সমাজকে ই*সলামিক সাহিত্যে আজ্ঞাপিত জি*হাদি, হিংস্র মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন করে না, ই*সলামের মূর্তি-ভাঙার 'আধ্যাত্মিক' প্রথা নিয়ে আওয়াজ তুলতে পারে না, মূর্তিপূজকদের প্রতি কো*রানে আদিষ্ট ঘৃণার ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলে পারে না, অমানবিক শরিয়া আইন-কানুন নিয়ে তর্ক করতে পারে না। মোহন ভাগবত শুধু হিন্দুদেরই অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত করতে ওস্তাদ: হিন্দুদের কেন মূর্তিপূজা করা উচিত নয়, হিন্দু সেনাপতি হংস এবং ডিম্বক কি আসলে সমকামী ছিলেন, কেন হিন্দুদের জ্ঞানবাপী এবং বাকি কনভার্টেড মন্দিরগুলি থেকে দাবিদাওয়া ছেড়ে দেওয়া উচিত, ইত্যাদি!

এই চরম 'পবিত্র' One DNA ঐক্যের ঠেলায় বিজেপি যা-কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী মতাদর্শী, - জি*হাদি, কমিউনিস্ট, আজাদী activist, বহুজনবাদী, নব-বুদ্ধিস্ট,আম্বেদকরবাদী, খালিস্তানি - সবাইকেই বাকস্বাধীনতার অধিকার দিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু নুপুর শর্মা বা টি রাজা সিং যখন ই*সলামিক সাহিত্য থেকেই লাইন উদ্ধৃত করে ই*সলামের সত্য জনসমক্ষে আনেন, তখন এদের মৌলবাদী নেকড়েদের মুখে ছুঁড়ে দিতে বিজেপি বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না।

বরং, যখন 'সার তান সে জুদা' হুমকি ছুঁড়ে দেওয়া ধর্মান্ধ জনতা ভারতের রাস্তাগুলিতে ভিড় করেছিল, যখন নূপুর শর্মার কুশপুত্তলিকাকে অপমান করে রাস্তায় পোড়ানো হয়েছিল, যখন বিজেপির নিজস্ব সংখ্যালঘু মোর্চার সদস্যরা এবং আজমীর দরগার খাদিমরা পরিকল্পনা করে কানহাইয়া লালের গলা কেটে ফেলে (কথিত আছে, আজমিরের একজন খাদিম,- গওহর চিস্তি, আজমীর দরগায় কানহাইয়া লালের খুনিদের একজনের সঙ্গে দেখা করে। গওহর বিজেপির প্রাক্তন মুখপাত্র নুপুর শর্মাকে 'ব্লাসফেমি' করার অভিযোগে শিরশ্ছেদের ডাক দিয়েছিল), যখন নূপুর শর্মার সমর্থনে এগিয়ে আসার 'অপরাধে' বজরং দলের সদস্য হর্ষ হিন্দুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছিল- তখন 'হিন্দু-হৃদয়-সম্রাট' মোদি নীরবতাই বেছে নিয়েছিলেন.. বরং তিনি আজমীর দরগায় চাদর পাঠিয়ে ধর্মান্ধ খাদিমদের এই 'সাহসী' কর্মকাণ্ড সানন্দে উদযাপন করেছিলেন।

যখন ধর্মান্তরণের নোংরা উদ্দেশ্য নিয়ে দরগার 'চাদর' এবং গীর্জার 'ফাদার' ভারতের প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে, এবং Covid-এর করাল গ্রাসে ইতিমধ্যেই বিধ্বস্ত গ্রামীণ রাজনীতির সুযোগ নিয়ে মৌলবী আর খ্রীষ্টান যাজকরা বিদেশী ফান্ডিং-এর জোরে গ্রামের সিধেসাধা হিন্দুদের সবার প্রকাশ্যে ধর্মান্তরিত করছে, এবং অপ্রয়োজনীয় বর্ণবিদ্বেষ, হিংসা, অস্থিরতা ও অশান্তির অন্ধকার গর্ভে ভারতীয় গ্রামীণ সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে - তখন মোদী এবং বিজেপি এই সমস্ত বিষয়েই অদ্ভুতভাবে নীরব। এমনকি ধর্মান্তরণ রেকেট-এর বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে লড়াই করে নিহত বিজেপি কর্মীদের থেকেও বিজেপি হাইকমান্ড নিজেদের নিষ্ঠুরভাবে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। হিন্দুদের সাথে এরকম বিমাতৃসুলভ আচরণ বিজেপির শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের নজর এড়াচ্ছে না।

মন্দির-ধ্বংসের কর্মকান্ড:

নরেন্দ্র মোদীর মন্দির বিধ্বংস করার রাজনীতির শুরু হয় সম্ভবত ২০০৮ সালে, যখন সড়ক সম্প্রসারণের দোহাই দিয়ে তার সরকার গান্ধীনগরে ৮০-খানা মন্দির ধ্বস্ত করে ফেলে [৩]। স্বাধীন ভারতে কোনো সরকারি কর্মকান্ড এতো বড় দুঃসাহস দেখাতে পারেনি। এই প্রজেক্টের ফলে হিন্দু ধর্মস্থান বিনাশের প্রতিযোগিতায় মোদী এক ঝটকায় কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট পার্টিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে যায়।

বিজেপি কর্নাটকে আসার পর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১-এর মধ্যেই ২৬০০ মন্দির ধ্বংস করে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ না এলে বিজেপির কর্নাটকে আরো ৬৫০০ মন্দির ধ্বংস করার পরিকল্পনা ছিল [৪]। কর্নাটকে এই রেকর্ড টিপু সুলতানের আছে কিনা সন্দেহ।

কাশী বিশ্বনাথ করিডোর বানাতে কয়েক ডজন সুপ্রাচীন মন্দির ধ্বংস করা হয়। বিশ্বেশ্বর শিবের দর্শন করার পথে পঞ্চায়তন ঈশ্বর - গণেশ, দুর্গা, শিব, বিষ্ণু, সূর্য - এই পাঁচ ভগবানের মন্দির দর্শন করা মঙ্গল মনে করা হত। এই পাঁচ মন্দির পরিক্রমা ছাড়া কাশী বিশ্বনাথ দর্শন অসম্পূর্ণ মনে করা হতো। মোদির কাশী করিডোর এই পাঁচটি মন্দিরকেই নির্মমভাবে ধস্ত করে দেয় [৫]। কাশী সংকট-মোচন মন্দিরের পুরোহিত এবং IIT বারাণসীর ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান বিশ্বম্বর নাথ মিশ্রের মতে, হিন্দু পুরাণে কাশী বিশ্বেশ্বর মন্দিরের আশেপাশে ১৪৩টি অতি পবিত্র স্থল ছিল, যার কোনো পরোয়া মোদী করেনি এবং করিডোর বানিয়ে এই ১৪৩টি স্থল করিডোর পরিসর থেকে সম্পূর্ণভাবে মিটিয়ে ফেলা হয়। হিন্দু সংস্কার অনুযায়ী, ৮৪ রকমের তীর্থযাত্রা ব্যাসপীঠে সমাপন হতো যা বিশ্বেশ্বরের নন্দী মহারাজ থেকে কিছু দূরেই অবস্থিত ছিল। মোদী এই ব্যাসপীঠ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। এছাড়াও মূল মন্দিরের আশেপাশে অসংখ্য শিবলিঙ্গ ছিল, যেগুলি নির্মমভাবে উৎখাত করা হয় এবং কিছু দূরেই নোংরা নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়।

অযোধ্যার পবিত্র রাম মন্দির নির্মাণকালে মোদী-যোগীর ডাবল-ইঞ্জিন উত্তরপ্রদেশ সরকার রামায়ণ-এর কাহিনীর সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত কয়েক ডজন অত্যন্ত সুপ্রাচীন মন্দির সম্পূর্ণভাবে মিটিয়ে ফেলে। এদের মধ্যে উল্লেখ্য : সীতা কূপ, সীতা রসুই, রঙ্গনাথ মন্দির, মানস ভবন, রাম খাজানা মন্দির, জটায়ু স্থান (স্বয়ং শ্রীরাম কর্তৃক নির্মিত), নল-নীলের টিলা, অঙ্গদ টিলা, জম্বুবান টিলা, রাম চত্বর, কথা ভবন, গবাক্ষ কিলা মন্দির, গওয়াই কিলা মন্দির, সুষেন জির মন্দির ইত্যাদি। এগুলি ছাড়াও আরো ১০০-২০০ মন্দির ধ্বংস করার পরিকল্পনা রয়েছে যার বেশ কয়েকটি ২০০-৩০০ বছর প্রাচীন।

কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের গর্ভগৃহ হিন্দুদের দানের ১২৫ কোটি টাকার খাঁটি সোনা দিয়ে বাঁধানো ছিল। মন্দির সংস্কারের নামে সরকার দ্বারা এই সমস্ত সোনা চুরি করে গর্ভগৃহে পিতল সেঁটে দেওয়া হয়।

মার্চ ২০২৩-এ বিজেপি-শিবসেনা ডাবল-ইঞ্জিন সরকার মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার তেহসিল মহলে গভীর রাত্রিতে সবার অগোচরে অতি সুপ্রাচীন জগদম্বা মন্দির ধ্বংস করে। যেসব গ্রামবাসীরা বাধা দিতে আসে, তাদের বিরুদ্ধে কেস দায়ের করা হয়। এরপর Archeology ডিপার্টমেন্ট-এর অফিসার এসে ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে দেবীর মূর্তি সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

২০২২ সালে রাজস্থানের আলবার জেলায় ৩০০ বছরের পুরোনো এক শিব মন্দির বুলডোজার দিয়ে ধসিয়ে দেওয়া হয় [৬]। অনুসন্ধান করে জানা যায়, বিজেপির মণ্ডল সভাপতি ২০১৮ সালে চিঠি লিখে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরকে মন্দির ধ্বংস করার এই প্রস্তাব দিয়েছিলো।

বিজেপি বিগত দশ বছরে পুরো ভারত জুড়ে হিন্দুত্বের সংস্কারের নামে এরকম কয়েক হাজার মন্দির ধ্বংস করেছে। মোদির মতো এতো ব্যাপক মন্দির ধ্বংসের ইতিহাস স্বয়ং ঔরংজেবেরও নেই।

২০২১ বাংলা নির্বাচনে হিন্দু গণহত্যা এবং জেপি নাড্ডার মিথ্যা শপথ:

সমগ্র সভ্যতাগত অস্তিত্বের ইতিহাসে হিন্দু বাঙালির গর্ব এতটা ভূলুন্ঠিত হয় নি, যা 2021 সালের বাংলার রাজ্য নির্বাচনের পরে হয়েছিল। যখন জেপি নাড্ডা কলকাতায় এসি রুমের আরামে TMC -র বিরুদ্ধে লড়াইতে মৃত হিন্দুদের 'বিচার' দেওয়ার মিথ্যা শপথ নিচ্ছিলেন, তখন হিন্দুদের কাছে TMC-র দেওয়া মাত্র তিনটি বিকল্প ছিল [৭]:

ক) অর্থ প্রদান - 10,000 থেকে লক্ষাধিক টাকার মধ্যে যেকোনো কিছু,

খ) বাড়ির মেয়েদের টিএমসিতে পাঠান এবং এই জিহাদি উপাদানগুলি তাদের ধর্ষণের জন্য,

গ) টিএমসিতে যোগ দিন।

মোদী ও তার ৫৬ ইঞ্চি হিন্দুত্বকে সমর্থন করার এই মূল্য হিন্দু বাঙালিদের ঐতিহাসিকভাবে ২০২১-এ দিতে হয়েছে!

হিন্দুত্বের সপ্ত-সংকল্প এবং একম সনাতন ভারত:

হিন্দু সমাজের মধ্যে ভীতি তৈরি করা বহুদিন ধরেই বিজেপির কৌশল ছিল। সম্প্রতি এই কৌশল বিজেপি-র অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। 'বিজেপিকে নির্বাচিত না করলে হিন্দু ও হিন্দুত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে' - এই ফোবিয়া থেকে হিন্দু সমাজ খুব শীঘ্রই বেরিয়ে যাবে। এবং সমগ্র ভারতের একত্রিত হিন্দু চেতনপটে এই হাওয়া ইতিমধ্যেই বইতে শুরু করেছে। এই একত্র হিন্দুচেতনার ফলস্বরূপ শঙ্করাচার্য-সমেত সমস্ত হিন্দু সাধু-সন্ন্যাসীরা বিজেপি-র কার্যকলাপের প্রখর সমালোচনা শুরু করেছেন, গোবলয়ের বিদ্দজন সমাজ বিজেপি-র ভন্ড হিন্দুত্বের প্যাঁচ-ট্যাঁচ খুলে বিজেপি-র রাজনৈতিক পচন নিয়ে লেখালেখি শুরু করেছে, বিজেপি-র নিচুতলার হিন্দু সনাতনী যোদ্ধারা 'একম সনাতন ভারত ' নামক দল বানিয়ে সনাতনী হিন্দুত্বের মঙ্গলার্থে 'সপ্ত সংকল্প' নিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে, যেগুলি এখানে উল্লেখ্য :

1) দেশের মোট জনসংখ্যার 5% এর কম সংগঠিত একটি ধর্মীয়/ভাষাগত জনগোষ্ঠী গুলিকে "সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে" রূপে সংজ্ঞায়িত করার জন্য সংবিধান সংশোধন করা। ভারতবর্ষে কে বিশ্ব-সনাতনীদের জন্য "প্রাকৃতিক হোমল্যান্ড" হিসাবে ঘোষণা করা এবং তাদের জন্য পূর্ণ নাগরিকত্বের অধিকার কে সক্ষম করা।

2) হিন্দু মন্দির/মঠের উপর থেকে রাজ্য/সরকারি নিয়ন্ত্রণ শেষ করা। কাশ্মীরের প্রাচীন সূর্য মন্দির "মার্তান্ড মন্দির" এর অবিলম্বে পুনর্গঠন এবং পুনঃপ্রতিষ্ঠা; মথুরায় "শ্রীকৃষ্ণ জন্মভূমি" এবং কাশীতে (বারানসী) জ্ঞানবাপি তীর্থক্ষেত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা।

3) কাশ্মীর থেকে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু প্রদেশকে আলাদা করা; কাশ্মীরকে 2টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন রাজ্য হিসাবে জম্মু প্রদেশের প্রতিষ্ঠা এবং গঠন।

4) গোহত্যার উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা। এবং পবিত্র গাভী মাতা, মা গঙ্গা এবং শ্রী রাম সেতুকে জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক হিসাবে ঘোষণা করা।

5) অবিলম্বে ওয়াকফ আইন, উপাসনার স্থান আইন 1991 এবং সাচ্চার কমিটির সুপারিশগুলির অবিলম্বে বাতিল/সমাপ্তি; ভারতের সংবিধানের 30 অনুচ্ছেদের সংশোধন করে হিন্দুদের তাদের পছন্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও স্বায়ত্তশাসিতভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম করা।

6) সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় জনসংখ্যাগত ভারসাম্য অবিলম্বে পুনরুদ্ধারের সাথে জনসংখ্যাগত আক্রমণকে ওল্টানো এবং আটক করা।

7) শুধু উন্নয়ন নয়, সত্য এবং বাস্তবিক ইতিহাসের সুদৃঢ় বলিষ্ঠ স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে সামগ্রিক উন্নয়ন। ইতিহাস, সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতা, স্থানীয় ভাষা এবং পরিবেশ সম্পর্কিত সচেতনতা নিয়ে পরিপূর্ণ বিকাশ!

বিজেপি ভুলে যাচ্ছে যে হাজার বছরের জেনোসাইড হিন্দুরা জনসংখ্যার হিসেবে এখনও এই বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ। মধ্যযুগের চরম অন্ধকার সময়ে হিন্দুরা যখন খিলজি ও মুঘলদের সাথে যুদ্ধ করছিল তখন বিজেপির মতো জিম্মি পার্টি সেখানে ছিল না। হিন্দু ইতিহাসে বিজেপি তুলনামূলকভাবে নতুন ঘটনা। রাজনীতি এবং প্রশাসন এবং এজেন্ডায় বিজেপিকে অবশ্যই হিন্দুদের প্রতি নম্র ও অনুগত হতে হবে - অন্যথায় বিজেপি মুঘলদের মতোই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবে।

তবে মুসলিম তৃপ্তিকরণ এবং অন্যান্য ধরনের প্রতারণামূলক হিন্দুবিরোধী রাজনীতিতে বিজেপি যেভাবে সক্রিয় অংশ নিয়েছে,- তাতে হিন্দুত্বের মুখোশ পরা বিজেপি হিন্দুত্বের কালনেমি হয়ে দাঁড়িয়েছে! জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে হিন্দুরা আর একটি কংগ্রেস চায় না! কমিউনিস্ট এবং ইসলামিস্টদের সাথে বিজেপির বেশে সংসদের ভেতর আর একটি কংগ্রেস হিন্দুদের জন্য মৃত্যুর সমার্থক।

আর সনাতন হিন্দুত্বের যেহেতু মৃত্যু নেই, তাই এবিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকুন যে বিজেপির শেষ সন্নিকটে!

[১] https://www.youtube.com/watch?v=98Sy-ব্যসককক [২] https://www.youtube.com/watch?v=OD3QcRvvm2g [৩] https://timesofindia.indiatimes.com/india/80-temples-demolished-in-modis-capital/articleshow/3706244.cms [৪] https://twitter.com/vasukinaag/status/1653429591078502400 [৫] https://scroll.in/article/1027645/why-many-varanasi-residents-are-unimpressed-by-the-furore-around-the-gyanvapi-mosque [৬] https://munsifdaily.com/bulldozer-brings-down-300-yr-old-shiva-temple-in-rsthan-triggers-controversy/ [৭]N. K. Azad, How Mamata’s Bengal became revenge rape capital (organiser.org), 2 May 2022

রাজপুতানার(রাজস্থান) ক্ষত্রিয় রাজবংশের দূর্গা পূজা।



রচনা :- অরিন্দম রায়।


আমাদের "রায় পরিবারের" পারিবারিক দূর্গা পূজা......। 
হুগলি জেলার হরিপাল থানার অন্তর্গত "তারকেশ্বর" যাবার পথে "নালিকুল স্টেশন"(প্রাচীন নাম ছিলো "নদী-কুল{নদী টির নাম "কুশি নদী"} অপভ্রংস হয়ে পরিণত হয়েছে 'নালিকুল') এই স্টেশনের থেকে 3.21 কিলোমিটার দুরত্বে অবস্থিত  "বন্দিপুর" এক প্রাচীন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ গ্রাম। বন্দিপুরের সবথেকে সুপরিচিত প্রাচীন বংশ হলো আমাদের "রায় বংশ"।
আমাদের পরিবারের "বিস্তৃত সু-মুদ্রিত কুলপঞ্জী" আজও আছে এবং আমার কাছেও আছে।
তার থেকে জানা যায় যে, আমাদের বংশের আদি পুরুষ ছিলেন রাজপুতানা বা আজকের রাজস্থানের "রানা লক্ষণ সিংহ"। 
তার পরবর্তী বংশধর "রায় রায়ান রাঘব রাম" তৎকালীন অবিভক্ত বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিলেন, "মুঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরের" রাজত্বকালে 1605 থেকে 1627
খ্রিস্টাব্দের মধ্যে।  
তাঁর পরবর্তী বংশধর খ্যাতনামা জমিদার "রায় মধুসূদন সিংহ," যিনি ছিলেন অষ্টাদশ পুরুষ।  তিনি বন্দিপুরে অনেক ব্রাহ্মণ, কায়স্থ পরিবারকে বহু ভূসম্পত্তি দান করেছিলেন। ওই সকল নিষ্কর(অথাৎ Tax নিতাম না আমারা) জমি-জমার বর্তমান মালিকরা গত ইংরেজ আমলে জরিপের সময় যেসব দলিলপত্র দাখিল করেন, সেই সব কাগজে ঐ জমি গুলির ''দাতা'' হিসাবে আমাদের পরিবারের নাম লিখিত আছে। "রায় রায়ান রাঘব রামের" চতুর্দশ বংশধর ছিলেন খ্যাতনামা জমিদার "রায় কুঞ্জলাল সিংহ"।
তিনি "তৎকালীন অবিভক্ত  বঙ্গদেশীয় কায়স্থ সম্মেলনে" পশ্চিমবঙ্গের পক্ষ থেকে
প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি "রয়েল এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য ছিলেন" এবং "সরস্বতী" উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। ইংরাজির 1926 খ্রিস্টাব্দে তিনি অমৃতলোকের উদ্দেশে পঞ্চভূতে বিলীন হন।
বন্দিপুর এর শ্রীবৃদ্ধি ও প্রসিদ্ধিতে, আমাদের 'রায় বংশের' অবদান যথেষ্ট।। 
রায় বংশোদ্ভূত জমিদারেরা এই গ্রামে এবং তার আশপাশে কামার, কুমোর, ধোপা, নাপিত, মালি, মুচি, ডোম, বাইতি, গোয়ালা ইত্যাদি মানুষজন কে ভূমি দান করে তাদের বসবাসের পাকাপাকি ব্যাবস্থা করে দিয়ে গ্রামবাসীদের অসীম উপকার সাধন করেছিলেন। তা ছাড়া এই গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় আজ যে বসু, আচার্য, ঘটক, চক্রবর্তী, চট্টোপাধ্যায় প্রভৃতি যে সমস্ত বনেদি হিন্দু পরিবার রয়েছেন তাদেরকেও এককালে জমি দান করে বসিয়েছিলেন আমাদের রায় বংশীয় জমিদাররাই। রায় বংশীয় জমিদারগণ পূজা-পার্বণ, 
দেব-দরিদ্র সেবা ইত্যাদি বাবদ ব্যয় নির্বাহের জন্য 360 বিঘা ভূসম্পত্তি "দেবোত্তর" করে দিয়েছিলেন বলে
আমার পিতামহের(Grand Father) নামে যে 'জীবনী গ্রন্থ' আছে তার থেকে এবং অন্যান্য  সরকারী দলিল দস্তাবেজ থেকেও এই কথা জানা যায়। 
আমার, পিতামহ(Grand Father) স্বর্গত বিজয়কৃষ্ণ রায় মহাশয়, অত্যন্ত উচ্চশিক্ষিত(MA, MSC, BA, BT) ইংরাজি, হিন্দি, বাংলা ভাষা ব্যতীত সংস্কৃত, পালি এবং নেপালি ভাষায় তাঁর বিশেষ পাণ্ডিত্য ছিলো। স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ, অধ্যক্ষ এবং সমাজ সংস্কারক হিসাবে হুগলি জেলায় তিনি অত্যন্ত খ্যাতনামা ব্যাক্তিত্ব ছিলেন।
1975 সালে
তাঁর মহাপ্রয়াণের সময় আমি পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। আজও সেই দিনটি অত্যন্ত পরিষ্কার ভাবে আমার স্মৃতিপটে ধরা রয়েছে। পরবর্তীতে "বিজয়কৃষ্ণ রায় জন্মশতবর্ষ উদযাপন সমিতি" স্থাপিত হয়।
এমন একটি বংশের উত্তরাধিকারী("বড় নাতি) হিসাবে জন্মগ্রহণ করতে পেরে আমি সত্য সত্যই "ধন্য".....!!!

আমাদের এই পারিবারিক মহাপূজা প্রায় 350 বছরে ধরে মহাআড়ম্বরে পূজিত হয়ে আসছে। হিসাব মতো 1670 খ্রিস্টাব্দের থেকে আমাদের এই পারিবারিক পূজা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে স্বমহিমায় চলে আসছে। তখন মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমল।
আমাদের প্রতিমার এই বছর মহা নবমী এবং মহা দশমী দিনের (23/10/2023) স্থিরচিত্র এবং দ্বিতীয়টি 24/10/2023 "মহা দশমী" দিনের" স্থিরচিত্র এবং ভিডিও এখানে সংযোজিত করেছি।

এখানে উল্লেখ্য বিষয় এই যে আমাদের পারিবারিক দূর্গা প্রতিমা হলেন চতুর্ভূজা। কারন "রাজপুতানায়" অথাৎ আজকের "রাজস্থানে" দেবী দূর্গা, "অম্বিকা" বা "অম্বা" নামে পূজিতা হন। যেহেতু আমাদের বংশের আদি উৎস "রাজপুতানা" অধুনা "রাজস্থানের" থেকে, তাই আমাদের আরাধ্য পারিবারিক দূর্গা প্রতিমা, রাজস্থানি পরম্পরা মেনে দেবী "চতুর্ভুজা"। অথাৎ তিনি হলেন রাজস্থানি "দেবী অম্বা"।
আর একটি বিষয় না বললেই নয়, রাজপুতানার প্রাচীন পরম্পরা মেনে আজও দেবীর বিদায় বেলায় "বরন" শুধু মাত্র পুরুষ সদস্যরাই করতে পারেন। কারন সেই যুগে "ক্ষত্রিয় রাজবংশের নারীগণ" রাজ্যের সাধারণ নাগরিকদের সামনে আবির্ভূতা হতেন না।
এখানে আরো একটি বিশেষ উল্লেখ যোগ্য বিষয় হলো আমাদের মহিষাসুর এর গাত্রবর্ণ সম্পূর্ণ সবুজ। কারন আমরা রাজপুত ক্ষত্রিয় বংশোদ্ভূত  প্রতিটি নারী ও পুরুষের জন্মগত জাতশত্রু হলো বহিরাগত মরুদস্যু
আক্রমণ-কারিরা। যারা আমাদের মাতৃভূমি ভারতবর্ষেকে তিন টুকরো করে দিয়েছে, আফগানিস্তান কে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে এবং এখনো আরো খন্ডিত করবার নানা চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারতবর্ষের মধ্যে রাজস্থানের মাটিতে দেশপ্রেম এবং সনাতন বৈদিক হিন্দু ধর্মের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ও আস্থা বিশেষভাবে শত শত বছর ধরে পরিলক্ষিত হয়।
সর্বশেষ হিন্দু রাজপুত রাজা পৃথ্বীরাজ চৌহান 1192 খ্রিস্টাব্দে  তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে মুহাম্মাদ ঘৌরির হাতে পরাজিত ও বন্দি হন। এর ফলে  ভারতবর্ষ আগত আটশো বছরের জন্যে এই আসুরিক শক্তির দ্বারা পরাধীন হয়ে যায়। কিন্তু এই পরাধীনতাকে হিন্দু বীরের জাত রাজপুতগন কোনো দিনই মেনে নিতে পারেননি। তাই তাঁরা অসুররূপী এই দানব গোষ্ঠী কে দেবীর পদতলে  সবুজ রঙের মহিষাসুর রূপে ত্রিশূল বিদ্ধ করে, মা এর বিচারের প্রতীক্ষায় তাঁর চরণ তলে স্থাপনা করেছেন। এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম মাথা উঁচু করে লড়াই চালিয়ে গেছেন আর আজও যাচ্ছেন এই অসুর কুলের বিরুদ্ধে।
আর সেই জন্যেই একসময় বাদশাহ আকবর কে পর্যন্ত রাজপুতগনের সাথে মিত্রতা স্থাপনা করে
যোধাবাঈ কে বিবাহ বা নিকাহ্ করতে বাধ্য হতে হয়। কারন আকবর অনুভব করতে পেরেছিল, রাজপুতগন এমনই বীরের জাত যে, তারা নিজেদের মাথা কাটাতে পছন্দ করবে, কিন্তু তবু তাঁরা আসুরিক শক্তির সামনে মাথা নত করবে না।
আর সেই কারনেই রাজস্থানি রীতি মেনেই "আমাদের অসুরের রঙ সবুজ"।
যেহেতু এই অসুর কুলের মজহব্ বা Religion এর মান্যতা প্রাপ্ত "রঙ" হলো "সবুজ"। তাই আমাদের মাতৃ প্রতিমার নীচে ত্রিশূলে বিদ্ধ যে অসুর কে দেখা যাচ্ছে তার দেহের রঙও সবুজ।
আর দেবীর বাহন সিংহ কিছুটা ঘোড়া ও সিংহের মিলিত রূপ। একে "করাল সিংহ" বলা হয়।
দেবী দুর্গার বাহন হিসেবে সিংহ শৌর্য এবং বীর্যের  প্রতীক।  
রাজার রাজকীয়তায় এবং যুদ্ধবিগ্রহের প্রধান সঙ্গী হলো ঘোড়া। 
যুদ্ধের দেবী হলেন আজকের এই মহিষাসুরমর্দিনী আর তার বাহন সিংহের বিশেষত পিছনের অংশটি ধীরে ধীরে ঘোড়ার আকার ধারণ করলো মৃৎশিল্পীর হাতের কলা কৌশলে। যার নাম হলো "করাল সিংহ"। এই ঘোড়া এবং সিংহের সংমিশ্রণ ঘটেছিল খ্রিস্টপূর্ব বেশ কিছু শতাব্দী পূর্বে। 
সেই ধারা আজও আমাদের মাতৃ প্রতিমা বহন করে 
চলেছেন। 
এছাড়া বাংলার অনান্য কিছু বনেদি বাড়ির দূর্গা পূজা গুলিতেও এই একই ধারা লক্ষিত হয়।

এখানে আর একটি কথা না বললেই নয়, সেটি হচ্ছে যে আমাদের কুলদেবতা হচ্ছেন 
শ্রীশ্রী গোপীজনবল্লভ জীউ।  তাই বৈষ্ণব রীতি মেনেই আমাদের বাড়িতে দুর্গাপূজা করা হয়।
এখানে স্বাভাবিক ভাবেই যে কোনো মানুষ প্রশ্ন করতেই পারেন, তাহলে নিশ্চয় আপনাদের দেবীর পূজা পদ্ধতিতে পশু বলি বা ছাগ বলি  নিষিদ্ধ ? 
এক্ষেত্রে আমাদের উত্তর হল এই যে, বৈষ্ণব পদ্ধতিতে মেনে পূজা হলেও আমাদের পশুবলি দেবার প্রথা রয়েছে। এর এক মাত্র কারণই হল, আমাদের আদি উৎস রাজস্থানের রাজ ঘরানা, রানা লক্ষন সিংহের পরিবার। তাঁর তৃতীয় পুত্র অনঙ্গদেব সিংহের আমরা Direct বংশধর। সুতরাং রাজা বৈষ্ণব হলেও তার রাজত্ব এবং রাজসিংহাসন ও প্রজাগন কে রক্ষা করবার জন্যে, তিনি কোনো ভাবেই "যুদ্ধ" এবং "রক্তক্ষয়" থেকে দূরে থাকতে পারেন না। তাই যুদ্ধের দেবী মা মহিষাসুরমর্দিনীর সামনে রাজ পরম্পরার হেতু রক্তের আহুতি দিয়ে শক্তি, বাহুবল এবং বীরত্বের কামনা জানানো হয়।

তাই আমাদের বৈষ্ণব মতে পুজা হলেও নবমীর দিনে পশুবলির প্রথা আজও প্রচলিত রয়েছে।

অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য, হিন্দুশাস্ত্রে "দুর্গা" শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে:-
‘দ’ অক্ষর দৈত্যনাশক, উ-কার বিঘ্ননাশক, ‘রেফ’ রোগনাশক, ‘গ’ অক্ষর পাপনাশক ও অ-কার ভয়-শত্রুনাশক। অর্থাৎ, দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও ভয়-শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই "দেবী দুর্গা"........

Wednesday, October 25, 2023

Long-term evolution of multiparty democracy and its adverse effect on the native Sanatani culture:

-Bijith Prasantha

How many parties to make before we finally get one who would call a spade a spade, will take the bull of jihaad by the horns, and will work towards the declaration of India as the Hindu Rashtra? Allegedly, Hindus created Congress and hoped that it would unify India across caste and creed. But then Congress gave birth to an uncultivated and stupid political leader like Mohandas Gandhi whose infertile political brain threw the Hindu populace of this country to the deep jaw of jihaad in the name of Pakistani movement and killed millions of Sanatanis before it chopped off both the arms of India, disconnecting it from all neighbours and the nations beyond.

Then Hindus created Janata Party to get rid of the atrocities of the Gandhis. But the Janata Party gifted India the Minority Commission – and legalized again the existence of the jihaadi state within a state. By the time the chaos of Babri issue was dispelled, Hindus found that the State of India had gifted them with a bunch of Sharia-compliant acts to break the teeth of Hindu consolidation phenomena! The Places of Worship Act 1991 prohibited conversion of any place of worship which effectively meant that Hindus could never recover again the Krishna Janmasthan temple, Kashi Vishwanath Temple, Adhai Din ka Jhopda in Ajmer, Adinath temple in Bengal, and the countless temples which were demolished and converted by the jihaadi Ashraafi marauders of Turkey, Arab, and Afghanistan. The Waqf Act 1995 was strengthened in favor of Muslims that, over time, made the Waqf Board the third biggest landowner of India after the Army and the Railways. According to the data of Waqf Management System of India, at present there are a total 8,54,509 properties with Waqf Boards which are spread over more than eight lakh acres of land. The UPA government gifted 123 prime Central Delhi properties to Waqf and withdrew the claim of government right before UPA was kicked out of office in 2014. Right now 77% of Delhi is on Waqf land including the Central Vista, Delhi High Court, CGO Complex and Jawaharlal Nehru Stadium.

The judiciary could not be far behind in this drive! Justice Anands of the Supreme Court, in its 1998 judgement, Case No. 4372 SCR 398, proudly proclaimed the iconic line: ‘Once Waqf, always Waqf’. The Delhi High Court opined that Waqf land is Allah’s and Allah's alone and that the government cannot be the owner of these lands. All this nonsense after giving away one-third of the Akhand Bharat to the Islamists to create Pakistan!

What is the issue here? Where are we getting it wrong? Why is it that the Hindus, in spite of being in majority, are always at the receiving end even after the creation of hundreds of parties after 1947? To understand this, we have to dig up colonial history because this scam really started right after 1857.

Continuity of Muslim Triptikaran Since the British Era:

The Ashraaf monopoly in the important administrative offices was diminished within a few decades after the fall of the radical jihadi Emperor named Aurangzeb. Within one and half centuries from there, the British East India Company captured most parts of the Indian subcontinent. In that empire, from the data of distribution of state power patronage in Bengal in April 1871, it is found that the ratio of Hindu to Muslim in important positions in different offices got reduced to 7 to 1. In 1869, the number of Law Officers of the Crown was 6: 4 Englishmen, 2 Hindus, and 0 Muslim; among the Officers of the High Court, 7 Hindus and 0 Muslim; among the Barrister-at-Law were 3 Hindus or more and 0 Muslim. Among the Attorneys, Proctors and Solicitors of the High Court, there were 27 Hindus and 0 Muslim. Among the graduates in Medicine in 1869, there were 3 Hindus, 1 Englishman, and 0 Muslim; among the Bachelors of Medicine, there were 10 Hindus and 1 Englishman; among Licentiates of Medicine there were 98 Hindus, 5 Englishmen, and 1 Muslim.

When Hindus were beating the Muslim community in all conceivable aspects of life and were presenting themselves as the torchbearers of enlightenment amidst all the chaos of the subcontinent, the British were hatching some other plan.The British identified three key short-comings in Hindu society:

a. Hindus do not have political unity,
b. Hindus are not brave and wise enough in their political demands,
c. Hindus do not have practical knowledge of how to govern a country.

The British opined that, talent, passion, knowledge and dedication could not be good enough criteria to secure a government job because it was leading to a scenario where the timid and docile Hindus were dominating in almost all the government job sectors and the potential nuisance-makers were lagging behind in the competition. Rather than adopting a meritocratic approach and giving special attention to the community that was lagging behind for various historical or socio-political constraints, the British vouched for offering the jobs discriminately to a community that had the potential of being a greater bully and a stronger creator of nuisance otherwise. Hunter argues in his book [The Indian Musalmans: Are They Bound in Conscience to Rebel Against the Queen?, p. 102],

“Is it that the Hindus have all along been better men than the Musalmans, and only required a fair field in order to outstrip them in the race? Or is it that the Musalmans have so many careers open to them in non-official life, that they are indifferent to Government employment, and leave the Hindus to walk over the course? The Hindu has unquestionably a high order of intellect; but an universal and immeasurable superiority on the part of the Hindus, such as would be required to explain their monopoly of official preferment, is unknown at the present day, and is in direct contradiction to their past history. The truth is that when the country passed under our rule, the Musalmans were the superior race, and superior not only in stoutness of heart and strength of arm, but in power of political organization, and in the science of practical government.”

As a result, the British started to appease the most nuisance faction of the country, i.e. the Muslims by giving them jobs disproportionately in police and army, and by funding madrassas and other Ashraafi institutions that were built in the mediaeval age to retain control over the native Muslim populace. The wise use of the Muslims to control the majority Hindu community of India is thus an old playbook of the British Era which was effectively used by the Gandhi family as well in the final half of the twentieth century,-- and now is being used by Modi in the most cunning ways!

A close observation of the current political discourse convinces us of two things. In the coming years: (i) Congress is going to drag the Overton window to the extreme left in coming days to appease the demands of the Ashraafs and radical Islam, (ii) BJP is going to surrender to the same faction in the name of ‘Pasmaanda triptikaran’. In just 75 years after partition, Congress under Rahul Gandhi has declared that Muslim League is a secular organization, while Narendra Modi has opined that Aligarh Muslim University, a college in UP that historically led the Pakistan movement, has played a key role in India’s independence. All these deceits and lies imply that Congress is trying to catch the secular and radical Islamist crowd, while BJP is trying to take a centrist position. Noone cares to keep their focus on catering to the crowd on the right– the oppressed, fragmented, meek, laborious Hindus who have been degraded to second class citizens of India over the last 75 years through various constitutional amendments and law reforms that are inherently communal against the interest of Hindus– the silent slaves who readily pay taxes without ever asking for their rights.

Because BJP is in the process of shaking hands with the Ashraafs in the garb of Pasmaanda appeasement, they have shown no intent to bring to an end the sharia state that exists within the state of India itself. This means that BJP is least interested in the implementation of UCC. BJP have also probably hypothesized some similar short-comings in Hindu society: (1) Hindus do not have political unity, hence Hindutva is always at the behest of BJP, (2) Hindus are not brave and wise enough in their political demands, (3) a common Hindu does not have either any sense of his/her identity or any practical knowledge of governance as much as a common Muslim does, (4) in terms of partisan Hindutva politics, BJP has reached saturation. No more Hindu can be duped by their bogus Hindutva narrative that runs in the media day in and day out but does not serve any practical purpose in the interest of Hindus. These hypotheses have steered the BJP to play the soft card of appeasement and insist their root level karyakartas, many of whom are staunch pro-Hindutva, to knock the door of radical Sufis and Mullas in search of plausible political associations. If we dissociate ourselves momentarily from the mindscape that BJP is trying to build with the venom served by their propaganda news channels, we see that there is not even a single Hindutva issue that Modi’s BJP have touched upon or have been actively vocal about in the last four years since they were re-elected in 2019. Stricting speaking, BJP has addressed only one through abrogating Article 370. But what many don’t know: Article 370 has made a reentry in the Kashmir valley in the form of domicile law. Rest of all the political decisions that BJP has taken in the last four years are mostly anti-Hindu and occasionally pro-Islamic.

Hindu - a silent majority who can be easily fooled:

If religion is the opium of the masses, Hindu Dharma definitely ‘sedates’ the Hindus before they can come to streets and create riot-like situations to blackmail the government with unjustifiable demands. Also, Hindu Dharma is the least political of all ideologies conceived in the history of mankind. It does not have the ambition of world domination, it does not agitate or intimidate its followers with the heaven-hell duality, and it does not have the priest or maulvi class who can toil day in and day out to expand the cult into the house of the kafirs. This makes Hindu Dharma the least aggressive ideology and makes Hindus a peaceful (in the real sense of this word) and silent majority. Moreover, the Hindu institutions and practices have been going through a thousand years of deprecation and destruction. While the Ashraafs converted people with the power of sword, the British subverted the very ethos, the culture, and the core values of Hindu Dharma.

In the absence of continuing passionate discussions and research, the power of Hindu Dharma to captivate the human mind is gradually fading away. Hindu Dharma also does not have the idea of apostasy or blasphemy, therefore no fear of death for maligning and polluting Hindu Dharma unlike Christianity or Islam. This gives the stooges and the enemies to further subvert the Dharma to their political and religious benefits. Instead of being punished, these enemies get rewarded by the international cabals for being the ‘brave reformers of Hinduism’.

Because Hindus do not go to temples very often now-a-days, the government is also least worried about any form of Hindu mass mobilization that could potentially pose a security threat to the existence of the Hindu-hating Indian State. No wonder leaders like Narendra Modi can vow to avenge a certain faction of Hindu through his ‘Hisaab Chukta Abhiyaan’, or Udaynidhi Stalin can give a genocidal call to wipe out Sanatana Dharma, or Owaisi can give a call to Muslims to kill 100 crore Hindus in 15 minutes, or Judiciary can decide who will get entry into the garva-griha of Sabrimala temple, or when and how Visanjan activities of Durga Pratima would take place if Muharram and Dusserah are on the same date.

Hindus cannot mass-mobilize to cause havoc on the nation and the state, therefore Hindus are that silent majority who can be tricked and manipulated at whim by the political parties, and the judiciaries, and the Abrahamic ideologues.

Infinite Division of the Hindu Votebank and the ever-stronger Consolidation of the Muslim Votebank:

In spite of countless genocides to wipe out Hindus from the earth, Hindus are still 80% of the total population of India. Therefore, the political consolidation of Hindus brings the greatest uncertainties in the electoral calculations of the big parties like Congress or BJP.

Noone likes to live a life of unpredictability - especially the political Hyenas of India. Congress thinks that, after bagging the 15% Muslim votes, it is beneficial for them to divide Hindus along various fault lines like castes, food, language, Aryan-Dravidian binaries- to name a few. But BJP wants Hindutva to remain either loyal and confused, or rebel but weak. This is why BJP wants to subvert and manipulate Hinduism - its doctrine, symbols, stories, and Devtas. BJP destroys the ageless temples of Kashi, Ayodhya and Ujjain to replace them with stupid idols of Bharatmata - a concept which does not even exist in Hindu Dharma. BJP wants to see Shri Ram as a Mahapurush- a mortal human and not Bhagwan. BJP wants to support Ambedkarite movement and vows to avenge the so-called upper caste Hindus through Hisaab Chukta Abhiyaan and remains silent over the massacre of at least a dozen Brahmin families across India in the caste conflicts– just because OBC and SC-ST community are greater in population than the Brahmin communities.

Be it Congress or BJP, no party wants Hindu vote consolidation because it takes away the power from their elite few and gives the Hindu community the control to drive the polity in the Dharmik direction – the direction which has the capacity to resolve all binaries and hence the potential to destroy the venomous identity politics which is the oxygen of hitherto Indian politics.

Within India, it is not the Muslims who lead the jihaad in the twenty-first century– I mean the jihaad by the Muslims is atavist and predictable. It is the jihaad by BJP and Congress which is more worrisome – especially BJP because Hindus tend to think BJP is a Hindutva-vaadi party which it is not.

BJP is not fighting jihaad. BJP IS THE JIHAAD!

More the Number of Parties in the Left, More the ways to Subvert Hindutva:

This may sound paradoxical but imagine a situation where we have dozens of parties to the left of the political Overton window and only one party, e.g. Ekam Sanatan Bharat, to the right. Given that Hindu votes consolidate under the umbrella of Ekam Sanatan Bharat to elect this party to form the government, we might think that it is a Hindu conservative party that is in power, hence Hindus should be relieved of the fact that it can work seamlessly towards making Bharat a Hindu Rashtra.

But one should keep in mind that the resistance comes not from the ruling party but from the opposition. A dozen parties in the opposition means a dozen destructive narratives – destructive from the Hindu perspective because India has not given birth to a Hinduvaadi party yet (except Ekam Sanatan Bharat which is in its nascent stage as of now). More parties on the left, more ways there will be to subvert Hindutva. Hindus, being the meek and silent majority, would rarely oppose or even intimidate the parties for being anti-Hindu. This is a much more fatal scenario which will potentially lead to disintegration of the consciousness and unity of India because this unity, in the canonical sense, is the Hindu unity and nothing else.

What is the way out? The only way is the precedence of the Dharmik and not merely political consolidation of Hindus. Dharma is long term polity and polity is short-term Dharma, therefore it is Dharma that should guide the Hindus and their polity. Conversely, the Indian polity should engage itself in Hindu Triptikaran. It should declare Hindus as the generationally genocided global minority, and then offer schemes for Hindus based on his/her Hindu identity solely. It should declare scholarships to do research on Hindu genocides and find out how it can be reversed, for the Teerth Yatra across Holy Hindu sites, it should invest to rejuvenate the Hindu crafts and artefacts which bore the brunt of rampant destruction by the jihaadis, and lastly it should vow to the Hindus that it will work towards making India a Hindu Rashtra!

Thursday, October 19, 2023

ভারতীয় রাজনীতির হিন্দুঘাতী, শরীয়াপন্থী চরিত্র

লিখন: বিজিৎ প্রশান্থা

হিন্দুদের এবং হিন্দুত্বের বেশ কয়েকটি ডক্ট্রিন আছে যেগুলি খুব সহজেই হিন্দুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়। হাজার বছর ধরে আব্রাহামিক মজহবগুলি কেবল ভারতের সম্পদ লুঠ করেই ক্ষান্ত হয়নি, ঘুণপোকার মতো ধীরে ধীরে ভারতীয় ভাবাদর্শ, নান্দনিকতা, অধ্যাত্মবোধকে বিকৃত এবং কলুষিত করে ভারতীয় সমাজবোধের ধারণাকে subvert করেছে।

সেই খিলজির সময় থেকেই হিন্দুত্বের গায়ে ছিল গেরুয়া - যা আসলে হিন্দুত্বের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রাঙ্গনে সর্বস্ব ত্যাগ করে মৃত্যু পর্যন্তু ভীষণ লড়াই-এর প্রতীকী। তবে এর সাথে সাথে হিন্দু সমাজে বরাবরই ছিল বাৎসল্যবোধ এবং অতিথি সৎকারের আন্তরিকতা। যখন থেকে মধ্যযুগীয় হিন্দু সমাজ এই সংস্কারবশেই মরুভূমির কিছু গণহত্যাকারী ডক্ট্রিনকে অধ্যাত্মবোধ ভেবে ভারতের বুকেই জায়গা দিতে শুরু করেছিল এবং ঊনবিংশ ও দ্বাদশ শতাব্দীতে শাসকের জায়গা ছেড়ে দিতেও কুন্ঠাবোধ করেনি, তখন থেকেই ভারতীয় সমাজে হাইব্রিড, সাময়িকতা-বাদী, ছিঁচকে সমাজবোধের উদ্ভব হয়। এই অগভীর সমাজচেতনা আর Macaulay-প্রবর্তিত ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা ভারতের শ্রেষ্ঠ মনীষাদের মানস হরণ করে সমাজের উঁচুতলার মানুষদের ব্রিটিশদের কেরানি এবং গোলাম বানিয়ে দেয়, এবং কালক্রমে ব্রিটিশদেরই মদতপুষ্ট একটি আপোসবাদী রাজনৈতিক সংগঠনের জন্ম দেয়, যার নাম ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, এবং যার সদস্য হওয়ার অলিখিত শর্ত ছিল ক্লীবতা এবং আত্মসমর্পণ।

সিপাহী বিদ্রোহের পর থেকেই ব্রিটিশরা এটাও উপলব্ধি করতে শুরু করে যে ভারতের মুসলিম সমাজ আসলে যেকোনো শাসনতন্ত্রের পক্ষেই নুইসেন্স এলিমেন্ট। এদের শিক্ষা-দীক্ষা, আইন-কানুন, চিকিৎসা-সেবা-দাঙ্গা-ফ্যাসাদ সব কিছুই কুরআন এবং হাদিসে বর্ণিত মধ্যযুগীয় বর্বর ইসলামিক ডক্ট্রিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। বস্তুত ভারতের কনভার্টেড মুসলিম সমাজ, যাদের কিনা পাসমান্দা বলা হয়, আসলে আরবি আশরাফদের narrative-এর অধীনে কয়েক শতক ধরে বিনা প্রশ্নে দাসত্ব করে আসছে।

আঠারো শতক পর্যন্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ দফতরে আশরাফ ও কিছু স্থানীয় মুসলমানদের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল, যা মুঘলদের পতনের পর এক শতাব্দীর মধ্যে ক্রমশ কমে যায়। আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর দেড় শতাব্দীর মধ্যেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় উপমহাদেশের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নেয়। সেই সাম্রাজ্যে, থেকে 1871 সালের এপ্রিল মাসে বাংলায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতা বিতরণের তথ্য [১], এটি পাওয়া যায় যে ব্রিটিশ আমলের বিভিন্ন অফিসে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলিতে অনুপাতের হিসেবে হিন্দুদের থেকে মুসলিম যারপরনাই কম ছিল। সব মিলিয়ে এই অনুপাত ছিল ৭:১। ১৮৬৯-এ Law অফিসার ছিলেন ৬ জন, যাঁর মধ্যে ৪ জন ইংলিশ, ২ জন হিন্দু, এবং শূন্য মুসলিম; হাইকোর্ট-এর অফিসারদের মধ্যে ৭ জন হিন্দু এবং শূন্য মুসলমান; ব্যারিস্টারদের মধ্যে তিনজন হিন্দু এবং শূন্য মুসলমান; অ্যাটর্নি, প্রক্টর, এবং সলিসিটরদের মধ্যে ২৭ জন হিন্দু এবং শূন্য মুসলিম; মেডিসিন গ্রাডুয়েটদের মধ্যে ১০ জন হিন্দু, ১ জন ইংলিশ, এবং শূন্য মুসলিম; মেডিসিন লাইসেনসিএট-দের মধ্যে ৯৮ জন হিন্দু, ৫ জন ইংলিশ, এবং ১ জন মুসলিম। তদানীন্তন ব্রিটিশ সিভিল সার্ভিস অফিসার W W Hunter এপ্রসঙ্গে মন্তব্য করেন,

“The Musalmans of Bengal do not want intelligence, and the spur of poverty constantly goads them to do something to better their condition. The Government has covered Bengal with schools, and many of its Districts are peopled with Muhammadans; yet the Government schools fail to develop a class of Musalmans who can compete successfully at the University, or find an entrance into any of the professions. The same schools send forth every year a vast body of well-read, ambitious, and intellectual Hindu youths, who distinguish themselves as young men at the university, and in after-life monopolize every avenue to wealth or distinction.

The truth is that our system of public instruction, which has awakened the Hindus from the sleep of centuries and quickened their inert masses with some of the noble impulses of a nation, is opposed to the traditions, unsuited to the requirements, and hateful to the religion of the Musalmans.”

এই বিস্তর ফারাক সত্ত্বেও আশরাফরা ভারতবর্ষে মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য সবল তোলেনি। বরং 'দূরবীন' জাতীয় কিছু সংবাদপত্র এই বলে প্রচার করতে শুরু করে যে, হিন্দু এবং ব্রিটিশরা অবৈধভাবে মুসলিমদের চাকরি ছিনিয়ে নিচ্ছে। ব্রিটিশরাও হিন্দুদের ব্যাপারে কয়েকটি বিষয় বুঝতে শুরু করে:

১। হিন্দুদের রাজনৈতিক ঐক্য নেই।
২। হিন্দুরা রাজনৈতিক দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে হিন্দুরা সাহসী এবং বিচক্ষণ নয়।
৩। দেশ কীভাবে চালাতে হয় সেব্যাপারে হিন্দুদের কোনো ব্যবহারিক জ্ঞান নেই।

এসব দেখে ব্রিটিশরা উপলব্ধি করতে শুরু করে যে, মুসলিম সম্প্রদায়ের তুষ্টিকরণ করে মুসলিমদের বাগে আনতে পারলে ওদের ব্যবহার করেই সংখ্যাগুরু হিন্দু সমাজকে নির্বিঘ্নে শাসন করা যাবে। সেই কারণেই মেধাভিত্তিক একটা ব্যবস্থা প্রবর্তন করার বদলে ব্রিটিশরা এই তথাকথিত সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে কোনোরকম বৈষম্যবাদের পরোয়া না করেই চাকরি দিতে শুরু করে। W.W. Hunter মন্তব্য করেন,

“Is it that the Hindus have all along been better men than the Musalmans, and only required a fair field in order to outstrip them in the race? Or is it that the Musalmans have so many careers open to them in non-official life, that they are indifferent to Government employment, and leave the Hindus to walk over the course? The Hindu has unquestionably a high order of intellect; but an universal and immeasurable superiority on the part of the Hindus, such as would be required to explain their monopoly of official preferment, is unknown at the present day, and is in direct contradiction to their past history. The truth is that when the country passed under our rule, the Musalmans were the superior race, and superior not only in stoutness of heart and strength of arm, but in power of political organization, and in the science of practical government.”

আরবি আশরাফ সমাজ যে দেশজ পাসমান্দা মুসলিমদের 'mind control' করার ক্ষমতা রাখে, এই বাস্তবতা অনুধাবন করেই ব্রিটিশ আশরাফ-ইংলিশ নেক্সাস বানাতে তৎপর হয়। এজন্য প্রথমে তারা মক্কার তিনটি বিখ্যাত সম্প্রদায়ের নেতাদের কাছ থেকে একটি বিচিত্র ফতোয়া জোগাড় করে আনে যে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য আসলে 'দেয়ার-উল-হারাব' (যুদ্ধের দেশ, যেখানে কাফিররা ক্ষমতাসীন) নয়। সেজন্য ভারতীয় মুসলিমদের জন্যে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ওয়াজিব (কর্তব্য) নয়। এই একটি পদক্ষেপ ভারতে জিহাদের হাওয়া ব্রিটিশদের বদলে হিন্দুদের বিপক্ষে ঘুরিয়ে দেয়। ভারতের পাসমান্দা মুসলিমরা যখন ইসলামিক দিকনির্দেশের জন্য আশরাফ-মোল্লা-মাওলানা সমাজের মুখাপেক্ষী হয়, তখন আশরাফ-মোল্লা-মাওলানারা পাসমান্দাদের ম্যানিপুলেট করার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক লক্ষ্য অনুযায়ী ইচ্ছেমতো ইসলামিক গ্রন্থের ব্যাখ্যা এবং নতুন ইসলামিক হাদিস গড়তে শুরু করে। এই ব্যাপারটি W.W. Hunter -এর নজর এড়িয়ে যায়নি [১]:

"The danger to British rule comes from the ‘fanatic masses’, who take their religion seriously unlike the ‘well-to- do Musalmans’ who contrive to evade the clear prescriptions of the Quran to flee or to rebel."

এদিকে ব্রিটিশদের পোষ্য সংগঠন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস,- যার মূলমন্ত্র ছিল ক্লীবতা এবং আত্মসমর্পণ, কালক্রমে জন্ম দেয় মহাত্মা গান্ধী নামক এক পৌরুষহীন নেতার, যে নির্দ্বিধায় ঘোষণা করে [২]:

"মুসলমানরা যদি হিন্দুদের হত্যা করতে উদ্যত হয় তবুও হিন্দুদের মুসলমানদের বিষয়ে বিরূপ মনোভাব পোষণ করা উচিত নয়। মুসলমানরা যদি আমাদের হত্যাও করতে চায়, তাহলে আমাদের সাহসের সাথে মৃত্যুকে বরণ করা উচিত। হিন্দুদের হত্যা করে মুসলমানরা যদি তাদের সাম্রাজ্য স্থাপন করে, তাহলে আত্মদানদের মাধ্যমে আমরা নতুন যুগের সূচনা করব।"

এই চরম আত্মঘাতী শরিয়া-আপোষী রাজনীতিই মোহনদাস গান্ধী তথা ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল। এই অবান্তর মুসলিমপ্রেম এবং শারিয়াপ্রেমের বশে মোহনদাস গান্ধী কংগ্রেসের অসহযোগ আন্দোলনকে মুসলিমদের সেই খিলাফত আন্দোলনের সাথে জুড়ে দেয়, যে খিলাফত আন্দোলন ভারতের বুকে খলিফাতন্ত্র অর্থাৎ মুসলিম শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মৌলবাদী উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, কেরালার মালাবারে যখন মোপলাহ মুসলমানরা স্রেফ খলিফাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হাজার হাজার হিন্দুর গণহত্যা করছিলো, তখন গান্ধী হিন্দু গণহত্যাকে এই বলে জাস্টিফাই করে যে [৩],

"মোপলাহ সমাজের এই ধর্মান্ধতার কারণ আমাদের খোঁজা উচিত। হিন্দুরা নিশ্চয়ই মোপলাহ মুসলিমদের সাথে বন্ধু বা প্রতিবেশীর মতো ব্যবহার করেনি। এখন আর মোপলাহদের ওপর অভিমান করে কোনো লাভ নেই।"

মোপলাহ হিন্দু গণহত্যার অন্যতম নায়ক মাওলানা হাসরাত মোহানি সম্পর্কে গান্ধী বলেন,

"Everything is fair in love and war with the Maulana. He has made up his mind that the Moplahs have fought for their religion. And that fact (in his estimation) practically absolves the Moplahs from all blame.....I advise my Malabar friends not to mind the Maulana. Despite his amazingly crude views about religion, there is no greater nationalist nor a greater lover of Hindu-Muslim unity than the Maulana. His heart is sound and superior to his intellect, which, in my humble opinion, has suffered aberration."

কোরান এবং হাদিসে বর্ণিত ইসলামের পয়গম্বর হাজরাত মোহাম্মদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে যখন মহাশয় রাজপাল 'রঙ্গীলা রসুল' নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন, তখন গান্ধী 'ইয়ং ইন্ডিয়া' নামক পত্রিকায় ক্রমাগত লেখা ছেপে মুসলিম সমাজকে উত্তেজিত করতে থাকেন, যার ফলস্বরূপ কিছুদিনের মধ্যেই মহাশয় রাজপালের হত্যা হয়।

শুধু তাই নয়, ১৯০৫ থেকে ১৯৪৬ পর্যন্ত মুসলিম লীগের প্রতিটি মৌলবাদী, শরীয়াপন্থী দাবিদাওয়া কংগ্রেস কায়মনোবাক্যে মেনে নেয়, যার মধ্যে ১) ১৯০৯ সালে মুসলিমদের জন্য পৃথক ইলেক্টরেট গঠন, ২) উর্দুর মতো আশরাফি, বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি ভাষাকে সরকারি এবং আইনি ভাষার মর্যাদা প্রদান, ৩) কংগ্রেসের বৈঠকে 'বন্দে মাতরম' স্লোগানের ওপর নিষেধজ্ঞা, ৪) হিন্দু এবং মুসলিম ভারতের জন্য পৃথক পতাকার সম্মান, ৫) সিন্ধু, বেঙ্গল, পাঞ্জাবের মতো প্রদেশকে মুসলিমদের হাতে শাসনের জন্য ছেড়ে দেওয়া, অবশেষে ৬) মুসলিম লীগের শর্ত মেনে ভারতের বিখন্ডনের মতো অজস্র পাগলাটে দাবিদাওয়া ছিল।

ভারতীয় রাজনীতির এই হিন্দুঘাতী, শরীয়াপন্থী চরিত্র কিন্তু ভারত বিভাজনের পরও এতটুকুও বদলায়নি। কংগ্রেস স্বাধীনতার পরে আরবি-আশরাফ এবং ব্রিটিশদের সহায়তায় ভারতেরই অভ্যন্তরে একটি ভাসা-ভাসা political স্টেট তৈরি করেছিল। এই শয়তানি নেক্সাস কংগ্রেসের অত্যাচারী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করেছিল এবং ভারতের নেতা-আমলাদের সস্তা জনপ্রিয়তা এবং বৈভবশালী হতে সাহায্য করেছিল। এই কংগ্রেসই স্বাধীনতার পর থেকে মুসলিমদেরকে রাজনৈতিকভাবে একত্রিত করার এবং হিন্দুদের চিরতরে বিভক্ত করার জঘন্য কর্মসূচী শুরু করে, যাতে এই সংখ্যালঘু এলিট বাবু-সমাজ দীর্ঘ সময়ের জন্য সংখ্যাগুরু হিন্দুদের ওপর নির্বিঘ্নে ছড়ি ঘোরাতে পারে। এর জন্য কংগ্রেস, কমিউনিস্ট, এবং ইসলামিস্টরা বেশ কয়েকটি এজেন্ডা বেছে নেয়:

(i) বর্ণ ব্যবস্থাকে Caste সিস্টেম-এ পরিবর্তন করা এবং Caste identity politics প্রবর্তন,
(ii) তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে সংখ্যালঘু অধিকার প্রবর্তন,
(iii) হিন্দু অনুভূতিকে হেয় করে এমন মিথ্যা ইতিহাস শেখানো এবং জিম্মি হিন্দু তৈরি করা, যারা নিজেদেরই হিন্দু ইতিহাস, হিন্দু ঐতিহ্য, এবং হিন্দু মূল্যবোধকে ঘৃণা করবে।

যেহেতু হিন্দু সমাজের কাছে বরাবরই সাহসী, দৃপ্ত হিন্দুত্ব ন্যারেটিভের অভাব ছিল, তাই কংগ্রেস-বিরোধী পার্টিগুলিও কংগ্রেস-কমিউনিস্টদের এই ফাঁদে পা দেয়। কালক্রমে হিন্দু সমাজের ঐক্যখণ্ডন এবং সংখ্যালঘু সমাজের একত্রীকরণের এই বিষাক্ত রেসিপি ভারতীয় রাজনীতির মূল রেসিপি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটের জাঁতাকলে পড়ে তথাকথিত হিন্দুবাদী দলগুলিও এই ধ্বংসাত্মক খেলায় মেতেছে। তাই তো যখন বিজেপি ওড়িশার BJD সরকারকে caste census করতে প্ররোচনা দেয়, বা মোদী আম্বেদকারবাদীদের সভায় তথাকথিত উচ্চবর্ণের মানুষদের বিরুদ্ধে 'হিসাব বরাবর করা'-র কথা বলে, বা মন্দিরের দৈব সম্পত্তি চুরি করে হজযাত্রার জন্য ভর্তুকি দেয়, বা কানহাইয়া লাল-এর গলা কেটে গেলেও ভারতের সমস্ত দল নিশ্চুপ থেকে যায়, তখন বুঝতে অসুবিধে হয় না যে ভারতের রাজনীতি,শাসনতন্ত্র এবং ন্যায়বিচারের ঝোঁক সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুর বিরুদ্ধাচারে মত্ত।

এর সাথে যোগ হয়েছে সংখ্যাগুরু হিন্দু সমাজের ট্যাক্সের টাকায় সংখ্যালঘু সমাজের মাত্রাতিরিক্ত পোষণ এবং তুষ্টিকরণ - সাথে সাথে হিন্দুদের শিক্ষা- এবং ধর্ম-সংস্থান নির্মাণ, হিন্দু ধর্ম প্রচার ও প্রসার ইত্যাদি থেকে আইনিভাবে হিন্দুদের বঞ্চিত করা। এর ফলস্বরূপ শহুরে হিন্দু, SC এবং ST হিন্দুসমাজ ধীরে ধীরে হিন্দুত্বের মূল ধারা থেকে দূরে সরে গেছে। সেজন্য এই সমাজকে ধর্মান্তরিত করা এবং হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধাচারণে ব্যবহার করা রাষ্ট্র এবং মুল্লা-মিশনারির মতো সাম্প্রদায়িক শক্তিদের জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছে। আর সেই ধর্মান্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডিং এই শক্তিগুলি সরকার থেকে ভর্তুকির নামে আদায় করে - যে ভর্তুকি কালান্তরে সরকারের কব্জা করা হিন্দু মন্দিরগুলির অবাধ লুঠ থেকে আসে।

একম সনাতন ভারতের মূল লক্ষ্য এসমস্ত স্থবিরতা এবং ষড়যন্ত্র থেকে হিন্দু সমাজকে রাজনৈতিকভাবে টেনে বের করা, যাতে হিন্দু সমাজ নিজের আত্মরক্ষা এবং আত্মসম্মানের কঠিন লড়াই মাথা উঁচু করে লড়তে পারে। আমরা একদিকে যেমন বিগত এক সহস্রাব্দ ধরে ঘটে চলা হিন্দুহত্যা এবং হত্যাকারী শক্তিগুলির ডক্ট্রিন এবং ইতিহাস সম্পর্কে হিন্দু সমাজকে ওয়াকিবহাল করে চলেছি, তেমনি জাতি-রাজ্য-ভাষা-নির্বিশেষে সমস্ত হিন্দুদের একত্রিত করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের লড়াইতে প্রখর নেতৃত্ব দিয়ে চলেছি।

আমাদের বিশ্বাস: ভারতের বুকে নিরপেক্ষ, উদারবাদী রাজনীতি সনাতনের শাশ্বত, মানবতাবাদী আদর্শ থেকেই উৎসারিত হতে পারে। সনাতন-ই ভারতের একমাত্র ধর্ম এবং সনাতনের কল্যাণ-ই ভারতের কল্যাণ। সেই নিরীখে সনাতনী হিন্দুত্ববাদই একম সনাতন ভারতের প্রথম এবং একমাত্র মতাদর্শ।

References:

[১] W.W. Hunter, ‘The Indian Musalmans: Are They Bound in Conscience to Rebel Against the Queen?’, AD 1871
[২]Mahatma Gandhi Collected Works Vol 94 (https://www.gandhiashramsevagram.org/gandhi-literature/mahatma-gandhi-collected-works-volume-94.pdf)
[৩] B.R. Ambedkar, Pakistan or The Partition of India, p 153

Monday, October 16, 2023

আঁতেলবাদী, অপ্রাসঙ্গিক, ঋতুমতী দুর্গা এবং মিনসে-হাসির মমতা-মোদী-মদন্মিত্তির vs বঙ্কিমপন্থী সনাতনবাদ:

লিখন: বিজিৎ প্রশান্থা

বাঙালি হিন্দু। যেন সব জমিদারের ছেলে। দুধ-ঘির শ্রাদ্ধ করিতে মজবুত, কাজের বেলা মদন্মিত্তির। সাপ মাটিতে বুক ঘষতে হাঁটে কিন্তু সাপের ঘাড়ে পা দিলে সেও হুশ করে ফনা তোলে ওঠে, কিন্তু বাঙালি হিন্দুর কলার ধরে কষে দু-চার ঘা দিলেও, বা 'তোর কালীমা সিগারেট খায়, তোর রামচন্দ্র মেয়েলি, তোর শিবের মাথায় কন্ডোম দেব' এসব বলে দিলেও এদের ক্রোধ হয় না, আত্মসম্মান এতটুকুও ক্ষুন্ন হয় না। উল্টে সেই পারভার্শন-বাদী শক্তিগুলির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে বাঙালি হিন্দু নিজের মা-বোন-ধর্ম-ঈশ্বরের ইজ্জত হনন করতে রাস্তায় নেমে পড়ে।

আজ বাঙালির বীমায় টাকা রেখে সোয়াস্তি নেই, দোকানে মাল রেখে সোয়াস্তি নেই, সিংহাসনে শালগ্রাম রেখে সোয়াস্তি নেই, মন্দিরে প্রতিমা রেখে সোয়াস্তি নেই, নদীতে বালি রেখে সোয়াস্তি নেই, বাড়ি বানানোর ইঁট-পাথর রেখে সোয়াস্তি নেই, ঘরে মা-বোন রেখে সোয়াস্তি নেই, মা-বোনের পেটে বাচ্চা এলে সোয়াস্তি নেই! বাংলার পলিটিকাল পার্টিগুলো আব্বাসের ছুরি দিয়ে পেট চিরে টাকা বের করে। বাঙালি হিন্দুর ধর্ম গেছে, জাতি গেছে, মান গেছে, কুল গেছে, মেয়ে-বৌ-দের স্বাভিমান গেছে। কালক্রমে এসবের জায়গা নিয়েছে যাদবপুরের comparative literature-এর কিছু নেশাখোর দেড়ে, আর কলিকাতা য়ুনিভার্সিটির কিছু শাড়ী-পরে-লোমওয়ালা-পেট-দেখানো কুৎসিত বামপন্থী ঘড়িয়াল। 'যুদ্ধ আছে, হিংসা আছে' এইসব খেলো অজুহাত দেখিয়ে হিন্দু বাঙালি শাস্ত্র-পুরাণ-পঠন-পাঠন বহুদিন বন্ধ করে দিয়েছে (যদিও বকরা-ঈদের দিন ছাগলের কাটা ধড়ে নিজের মুন্ডু বসিয়ে 'Happy Eid ইনশা-আল্লাহ' সেলফি দিতে ভোলে না), আর এখন আঁতলামোর জেরে সে তার দুর্গাপুজোর মুণ্ডুপাত করতেও পিছপা নয়।

তাই তো বাঙালির চিরকল্পিত মা ভবানী, রুদ্রানীর রূপ ছেড়ে দুর্গা এখন শুধুই ঋতুমতী, তার চারদিনের আবাসরূপী প্যান্ডেল এখন মেনস্ট্রুয়েশন-এর রূপ-রস-গন্ধের কায়াকল্প, শিল্পী-কল্পিত লোহিত রুধির মহিষাসুরের বুক থেকে নয়, মা ভবতারিনীর বন্দনামঞ্চ থেকে উৎসারিত হচ্ছে।

হিন্দুত্বের প্লাবনে বাঙালি জনমানস প্লাবিত করতে ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীতে যখন বঙ্কিম-শরৎ-রবীন্দ্রনাথ-রা বাংলা সাহিত্য লিখেছেন, তখন তাদের জাতীয়তাবাদী কলম স্বপ্ন দেখছে অন্ধকার, শব্দহীন রাত্রি থেকে উত্তরিত আলোকময়, পক্ষী-কূজন-শব্দিত এক আনন্দময় শারদপ্রভাতের, যেখানে ভক্ত মহেন্দ্র ভক্তিভীরু চোখ তুলে দেখছে এক মর্মরপ্রস্তরনির্মিত প্রশস্ত বিশালকায় মন্দির যার গর্ভে এক প্রকাণ্ড মূর্তি -- যাঁর দশভুজা দশদিকে প্রসারিত, যিনি শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারিনী,কৌস্তুভশোভিতহৃদয়া, যাঁর ত্রিনয়নে সর্ববিদারী নিদাঘ অগ্নি, যাঁর পদতলে শত্রু বিমর্দিত, যাঁর পদাশ্রিত বীরকেশরী শত্রুনিপীড়নে নিযুক্ত। সেই বিবিধ-আয়ূধ-ভুজা, দশপ্রহরণধারিনী, বীরেন্দ্রপৃষ্ঠবিহারিণী, - দক্ষিণে আলুলায়িতকুন্তলা, শতদলমালামন্ডিত, ভাগ্যরূপিণী লক্ষ্মী , বামে বাণী বিদ্যা-বিজ্ঞানদায়িনী, - সঙ্গে বলরূপী কার্তিকেয়, কার্যসিদ্ধিরূপী গণেশ। পদতলে লুন্ঠিত, রুধিরপ্লাবিত হচ্ছে সবুজ-গাত্র মধু-কৈটভ-মহিষাসুরের ছিন্ন মস্তক। মাতা জ্যোতির্ময়ী, রুদ্রানী, শিবানী, দুর্গা তখন শত্রুদলনে চিরলিপ্তা - আর সেই মন্দিরের প্রাঙ্গনে গুঞ্জিত হচ্ছে এক-কন্ঠী, ভক্তি-আশ্রিত মন্ত্র :

"সর্ব-মঙ্গল-মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ-সাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোহস্তুতে। ।"

কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর deracinated, উদ্বাস্তু, ভীরু, সিন্ডিকেটবাদী হিন্দু বাঙালি সমাজের কাছে দুর্গামন্ডপ মানে ঋতুমন্ডিত রক্তাক্ত স্যানিটারি প্যাড-এর মেলা, প্যান্ডেল জুড়ে শুধু 'biological process'-এর awareness campaign, অস্ত্রহীন মা দুর্গার হাতে ভারতের পলিটিকাল ম্যাপ -- সেইসাথে মণ্ডপের কোনায় কোনায় মমতা-মদন-মোদী-আদি নেতাবৃন্দের চশমখোরি হাসি এবং দালালখোরি কৌতূহল:

"শিবের মাথায় কন্ডোম দিই,
দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে দিই ঋতুমতীর পেচ্ছাপ।
চিন্টু বাঙালি, কেমন চলছে-
পাশের বাড়ির বৌদির সাথে অবাঞ্ছিত কেচ্ছা?"

আত্মঘাতের এই সাতপাঁচ মারণযজ্ঞ দেখে এই মুমূর্ষু জাতিকে বলতে ইচ্ছে হয়, 'মিনসে, তোর মরণ হয় না?!'

Saturday, October 14, 2023

রাম মন্দির আন্দোলন (সনাতন হিন্দু সভ্যতা রক্ষার লড়াই)

 মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রামচন্দ্রের মন্দির সম্পূর্ণ হতে চলেছে। মুঘল আমল থেকে শুরু হওয়ায় যুদ্ধ অবশেষে ৯ই নভেম্বর ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে সমাপ্তি ঘটে l এই যুদ্ধ শুধু রাম মন্দির নির্মাণ নয় বরং সনাতনী হিন্দু সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ। ভারতবর্ষকে তার অতীত গৌরবের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়াস মাত্র। রাজনীতিজিবীদের কাছে ভগবান শ্রী রামচন্দ্র জীবিকার উপকরণ হলেও সনাতন হিন্দুদের কাছে এই যুদ্ধ ছিল ধর্ম রক্ষার যুদ্ধ ও ভারত বর্ষকে পরাধীনতা থেকে বাঁচানোর যুদ্ধ। এখন একটু অতীতকে ফিরে দেখা যাক।

১৫২৭- ২৮ সাল বিদেশি হানাদার বাবরের আদেশে তার সেনাপতি মীর বাকী রাম মন্দির ধ্বংস করে মসজিদ তৈরি করে। মন্দির ধ্বংসের সময়  মন্দিরের দায়িত্বে ছিলেন সিদ্ধ মহারাজ শ্যামানন্দ। শ্যামানন্দ ও ভাটি রাজা মহাতাব সিং বদ্রীনারায়ণ বাবরি সেনার সঙ্গে প্রবল যুদ্ধ করেন প্রায় এক লাখ ৭৯ হাজার হিন্দুর রক্তে অযোধ্যার মাটি রঞ্জিত হয়। এরপরে দেবীদিন পান্ডে অতঃপর মহারাজ রণবিজয় সিং মুঘল সেনাদের সঙ্গে প্রবল যুদ্ধ করেন এবং বীরগতিপ্রাপ্ত হন। মহারাজের মৃত্যুর পর তার পত্নী রানী, জয়রাজ কুমারী মুঘল সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন এবং হুমায়ুনের রাজত্বকাল পর্যন্ত যুদ্ধ জারি রাখেন। স্বামী মহেশ্বরানন্দ সন্ন্যাসীদের একটি সেনাদল তৈরি করে রানীর সঙ্গে যোগদান করেন এবং যুদ্ধে উভয়ই বীরগতি প্রাপ্ত হন। রাম জন্মভূমি পুনরায় মুঘলদের দখলে চলে যায়। এরপর ঔরঙ্গজেব প্রায় ১০ বার রাম জন্মভূমি আক্রমণ করে অবশিষ্ট অংশ ও মূর্তি ধ্বংস করে দেয়। গুরু শ্রী রামদাস মহারাজের শিষ্য শ্রী বৈষ্ণব দাস রাম জন্মভূমি উদ্ধারের জন্য প্রায় 30 বার মুঘল সেনাদের আক্রমণ করেন। নবাব ওয়াজিদ আলী শায়ের সময় হিন্দুরা মন্দিরা আক্রমণ করেন এবং দুইদিন ধরে প্রবল যুদ্ধের করে রাম জন্মভূমি উদ্ধার করেন এবং সেখানে একটি ছোট্ট রাম মন্দির নির্মাণ করেন। বিবাদ চলতেই থাকে। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে বাবরি মসজিদ প্রথম ধ্বংস করা হয় তখন ব্রিটিশ কালেক্টর এটাকে পুনরায় নির্মাণ করেন। ১৯ জানুয়ারি ১৮৮৫ সাল মোহন্ত রঘুবীর দাস ফয়জাবাদ আদালতে মামলা করেন রাম জন্মভূমি উদ্ধারের জন্য।পুনরায় ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদ এর কিছু অংশ ধ্বংস করা হয়। এইভাবে চলতে চলতেই ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ স্বাধীন হয়। ১৯৪৭ সালে সরকার মুসলমানদের বিবাদিত জায়গা থেকে দূরে থাকতে বলেন এবং প্রধান দরজায় তালা দিয়ে দেয়। ১৯৫৯ সাল নির্মহী আখারা উত্তর প্রদেশ আদালতে ওয়াকফ বোর্ডের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং আদালতে মূর্তি পূজার অনুমতি চান। ১৯৮৬ সাল উত্তর প্রদেশ হাইকোর্ট রাজীব গান্ধী সরকারকে আদেশ করে রাম মন্দিরের দরজা খুলে দিতে। এরপর নভেম্বর ১৯৮৯ সাল এলাহাবাদ হাইকোর্ট অনুমতি দেয় ২.৭৭ একর জমিতে রাম মন্দিরের শিলান্যাস করার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বুটা সিংকে উত্তর প্রদেশ পাঠান এবং ফয়জাবাদ জেলা কালেক্টর এর কাছে আন্ডারটেকিং নেন যে বাবরি মসজিদের ভিতর কোন শিলান্যাশ হবে না। শুরু হলো নির্বাচনী এজেন্ডা। রাজীব গান্ধী নির্বাচনের সময় প্রচার শুরু করেন এই বলে যে তিনি "রাম রাজ্য" ফিরিয়ে আনবেন।। অন্যদিকে বিজেপি ১৯৮৯ সালে তাদের ইলেকশন ম্যানিফেস্টোতে রাম মন্দির নির্মাণ প্রসঙ্গ আনেন। রাম মন্দিরের আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। এই আন্দোলনের অভিমুখ পরিবর্তন করে কিভাবে ভোটে রূপান্তরিত করা যায় এই ছিল রাজনৈতিক দলগুলির উদ্দেশ্য। ১৯৯০ সাল কর সেবকরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অযোধ্যায় জড় হতে শুরু করে। অন্যদিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বিজেপি এই আন্দোলন নিজেদের হাতে নেবার জন্য রথ যাত্রার সূচনা করে। এই রথযাত্রার নেতৃত্ব দেন এল কে আদবানী। কর সেবকরা অযোধ্যায় রাম মন্দিরে আশেপাশে আন্দোলন শুরু করলে তৎকালীন উত্তর প্রদেশ সরকার এর মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদব  করসেবকদের ওপর গুলি চালানোর আদেশ দেন। ২ নভেম্বর ১৯৯০ সাল মুলায়েম সিং এর পুলিশের গুলিতে বহু রামভক্ত প্রাণ হারান ,অযোধ্যার বাতাস  বারুদের গন্ধে বিষাক্ত হয়ে ওঠে। এর ফল ূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূূস্বরূপ ১৯৯১ সালে তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্থফা দিতে হয়। অবশেষে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ সাল কর সেবক দের প্রচেষ্টায় বাবরি মসজিদ ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নিজেদের কাঁধ থেকে এই দায় ঝেড়ে ফেলে। অটল বিহারী বাজপেয়ি বিবৃতি দেন যে তারা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করতে চাননি। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং ব্যক্তিগতভাবে এই আন্দোলনকে সমর্থন করেন এর ফলে তার সরকার বরখাস্ত হয়। কেন্দ্রে তখন পি ভি নরসীমা রাওয়ের সরকার, তিনিও কর সেবকদের ওপর পুলিশি ব্যবস্থা নিতে অস্বীকার করেন।

২০০৩ সাল হাইকোর্ট অর্ডার দেয় A.S.I কে, বাবরি মসজিদ চত্বরে খনন কার্য করার জন্য। এই খনন কার্যের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন কে কে মোহাম্মদ। খনন কার্যে রাম মন্দিরের স্বপক্ষে প্রচুর প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে এই প্রমাণগুলি রাম মন্দির রায়দানের  স্বপক্ষে কাজে লাগে। ২০১০ সাল এলাহাবাদ হাইকোর্ট রায় দান করে বিতর্ক প্রতিযোগী তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়ার জন্য । সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে এক ভাগ, নির্মহী আখারাকে একভাগ, রামলালা পিটিশনার কে এক ভাগ দেওয়ার জন্য।। ২০১১ সাল সুপ্রিম কোর্ট এই রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দেয়। পুনরায় আবেদন করলে ৬ই আগস্ট ২০১৯ থেকে প্রতিদিন সুপ্রিম কোর্টে শুনানি শুরু হয়। ২০১৯ সালেই তৎকালীন বিজেপি সরকার সুপ্রিম কোর্টে জানায় ৬৭ একর জমি প্রকৃত মালিক কে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। অর্থাৎ তৎকালীন সরকার চাননি রাম মন্দির নির্মাণ হোক। সমস্ত বাধা বিপত্তি পেরিয়ে অবশেষে আসে সেই শুভক্ষণ। ৯ নভেম্বর ২০১৯ সাল সর্বোচ্চ আদালত রায়দান করে ২.৭৭ একর জমিত রাম মন্দির  নির্মাণের জন্য দিয়ে দেওয়া হয় এবং পাঁচ একর জমি মুসলিম পক্ষকে তাদের মসজিদ নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়। বিজেপি সরকার এর কৃতিত্ব নিতে ছুটে আসে কিন্তু রাম মন্দির নির্মাণের জন্য এই সরকারের ন্যূনতম ভূমিকা ও ছিল না। যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া যায় যে তাদের উপস্থিতি এই রায়কে প্রভাবিত করেছে তাহলে অপরপক্ষে বলা যায় পাঁচ একর জমিও এই সরকারের জন্যই মুসলিম পক্ষকে দেওয়া হয়েছে।। তাহলে সত্যিই কি হিন্দুরা ন্যায় বিচার পেয়েছে? নাকি সরকার ও আদালত একটি বোঝাপড়ার মাধ্যমে উভয়পক্ষকে খুশি করেছেন। যাতে দীর্ঘদিনের বিবাদ নিরসন করা যায়।

Wednesday, October 11, 2023

ইজরায়েলের এতো বড় দুর্ভোগের দায় কার ? গোয়েন্দা সংস্থার নাকি সরকারের ??

বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে ইজরায়েলে বিরোধ প্রদর্শন চলছিল | একদল বেনজামিন নেতান্হুর পক্ষে আর একদল নেতান্হুর বিপক্ষে | নেতান্হু ইজরায়েলে জুডিসিয়ারী রিফর্ম করার চেষ্টা করছিলেন | যে রিফর্ম করা হলে তাঁর নিজের বিরুদ্ধে যে করাপশনএর আরোপ আছে সেটার থেকে নিস্পত্তি পাওয়া যেত | তাই রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল | নাফ্তালি সরকার সেই রাজনৈতিক অস্থিরতারই পরিনাম হিসাবে ইজরায়েলে ক্ষমতায় এসেছিল | নাফ্তালি সরকারের পতনের পর আবার নেতান্হু সরকার এসেছে অনেকদিন হলো | কিন্তু বিগত কয়েক বছরে ইজরায়েলের কিছু বন্ধু দেশের মধ্যস্থতায় যে বর ভুল ইজরায়েল করেছে আজ সেই ভুলের মাশুল দিচ্ছে ইজরায়েল | হামাস এই সিচুয়েশনের ভরপুর ফায়দা নিয়েছে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্যে | হামাস এতটাই শক্তি বৃদ্ধি করেছে যে ইজরায়েলের ভিতর ঢুকে ইজরায়েলের জনগণকে মারা, কিডন্যাপ করার মত সাহস দেখাতে পেরেছে | গত ৭ তারিখে হামাস ইজরায়েলের ওপর একসাথে ৫০০০ রকেট হামলা করে আর তারপ থেকে প্রত্যেকদিন ৩০০০ থেকে ৫০০০ রকেট ইজরায়েলে ওপর ফায়ার করেছে হামাস | এমনকি এন্টি ট্যাঙ্ক, এন্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলও রয়েছে হামাসের কাছে | গত ৪৮ ঘন্টায় সেগুলোর খুব ব্যবহারও করেছে হামাস | শুধু তাই নয়, হামাস প্যারাসুট আর হ্যান্ড গ্লাইডারের মাধ্যমে জঙ্গিদের ইজরায়েল আর গাজার মধ্যে যে দেওয়াল আছে সেটা পার করে ইজরায়েলের ভিতরে ল্যান্ড করিয়েছে | সেই জঙ্গিরা দু-তিন দিন ধরে ইজরায়েলে মৃত্যুযজ্ঞ চালিয়েছে, অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষকে মেরেছে, কিডন্যাপ করে গাজায় নিয়ে গেছে | নবজাত শিশুদেরও নির্মম নরসংহার করেছে | 


কিন্তু এসব দেখে আপনার আশ্চর্য লাগছে না ? আশ্চর্যের বিষয় তো অবশ্যই !! কারণ যে গাজা থেকে এত কিছু কন্ট্রোল করা হচ্ছে সেটা নেহাতই একটা ছোট জায়গা, যার একদিকে সমুদ্র, একদিকে ইজিপ্ট আর বাকি দুদিকে ইজরায়েল | গাজা শহরের চৌহুদ্দী ধরে যদি আপনি হেঁটে যান তাহলে মাত্র ৪৫ কিমি হাঁটা হবে | সেই রকম একটা ছোট জায়গা তে যখন এই হামলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, জঙ্গিদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছিল, হামলার mock run করা হচ্ছিল, সেটা কারোর চোখে পড়ে নি ? কারোর বলতে আমি মোসাদ, সিআইএ আর এমআই6 এর কথা বলছি | যেহেতু গাজা একটা অত্যন্ত সেনসিটিভ এলাকা, সেহেতু বেশ কয়েক দশক ধরে গাজার ওপর বিশেষ নজর রাখে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংস্থাগুলির মধ্যে এই তিনটে সংস্থা | কয়েক দশক ধরে তারা নির্ভুলতার সাথে তারা গাজার ওপর সর্বক্ষণের নজর রেখেছে | গাজায় একটা পাখি উড়লেও, ইসরাইল সেটা সম্পর্কে জানতে পারে কারণ সিআইএ নেটওয়ার্ক এবং এমআই 6 নেটওয়ার্ক সর্বদা ইসরায়েলের সাথে সেই তথ্য ভাগ করে। এ ছাড়া গাজার ভেতরে তাদের নিজস্ব একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কও রয়েছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এত কঠোর ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও হামাস জঙ্গিরা এত প্রস্তুতি করে কিকরে ? হামাস দাবি করে যে তাদের কাছে এক লাখের বেশি রকেট রয়েছে এবং আগামীতে তাদের কাছে আরও আসতে চলেছে, এটা তাদের দাবি, এর বাইরে তারা কিছু বিপজ্জনক অস্ত্র তৈরি করে এমনকি তাদের সৈন্যদের প্যারাসুট দিয়ে ল্যান্ড করার প্রশিক্ষণও দেয়। 


এত কিছু তো দু এক দিনে হয় নি, কয়েক মাস বা বছরও লেগেছে হয়তো | এবং এর জন্য গাজা স্ট্রিপের ভিতরে খুব মুভমেন্টও থেকেছে | কিন্তু এটা কীভাবে হতে পারে যে বিশ্বের শীর্ষ তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা এই তৎপরতা শনাক্ত করতে পারেনি, বা ডিকোড করতেও সক্ষম হননি। আরবদেশ হলেও ইজিপ্ট সব সময় ইজরায়েলের সাথে সহযোগিতা করে | সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল যেদিন হামাস আক্রমণ করেছিল, তার পরদিনই ইজিপ্টের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতি দেন যে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সরাসরি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে গাজা উপত্যকার ভেতরে কিছু ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে, এবং তিনি ইজরায়েল কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন । এর পরও নেতানিয়াহু তার কথায় পাত্তা দেননি এবং সেগুলো এড়িয়ে গেছেন। এর ফলে এমন একটি ভয়ঙ্কর হামলা হয়েছে | হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক, শিশু, নারী ও এমনকি নবজাতককেও হত্যা করা হয়েছে। 


বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোতে বিশেষ করে আমেরিকায় আলোচনা চলছে যে কেন আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এর জন্য দায়ী করা উচিত নয়। এই যুদ্ধ যদি আরও বড় হয়, তাহলে এতে হাজার হাজার ইসরায়েলি নিহত হবে, বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হবে। সে অনুযায়ী, এটি মোসাদ এবং সিআইএ-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে মনে করা উচিত। কিন্তু সত্যটা কি? সবটাই কি মোসাদের দোষ? সিআইএর কি কোনো ভুল ছিল? এটা কি অন্য কোনো কারণে হয়েছে? একটু ধারণা দিই। 


সম্প্রতি আমেরিকার একজন খুব বড় গোয়েন্দা কর্মকর্তা যিনি আগে সিআইএ তে ছিলেন, তিনি ব্লুমবার্গকে বলেছেন যে গত কয়েক মাসে ইসরাইল এমন অনেক সংকেত পেয়েছে যার থেকে খুব সঙ্গীন কিছু ষড়যন্ত্র -এর বিষয়ে জানতে পারা যায় এবং সে বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ইনপুট এবং পরামর্শও দিয়েছিল | তারা সরকারের কাছে গাজার ভিতরে একটা ছোট হামলা চালানোর অনুরোধ করেছিল যাতে তারা এই ষড়যন্ত্র-এর পরিকল্পনা আর প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে আর তাতে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে কিছুটা সময়ও বেড়ে যাবে এই ষড়যন্ত্রকে সমূলে ধ্বংস করতে |
 


কিন্তু ইসরায়েল সরকার এই সমস্ত তথ্য ও পরামর্শ গ্রহণ করেনি। কারণ সৌদি আরব। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সৌদি আরব ইসরাইলকে একটি দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছিল এবং সেটা ইজরায়েলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল | কারণ সৌদি আরবকে বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের নেতা দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সৌদি আরব ইসলাম ধর্মের উৎপত্তি। এরকম একটি মুসলিম দেশ যদি ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় তাহলে অন্য মুসলিম দেশগুলোকেও ইসরাইলকে মেনে নিতে হবে। এই ভ্যালিডেশন পাওয়ার রোগ খুব মারাত্মক | যারাই তাদের ঘোষিত শত্রুর কাছ থেকে ভ্যালিডেশন খুঁজতে গেছে তারাই অদূর ভবিষ্যতে দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছে | ইজরায়েলের সাথেও তাই হয়েছে | সৌদির থেকে মান্যতা পাওয়ার জন্যে তারা মুসলিম গাজার ওপর হামলা করার রিস্ক নিতে পারে নি | একদিকে সৌদি আরবের সাথে কথা চলছে আর অন্যদিকে যদি গাঁজায় বোমা বর্ষণ শুরু করে তাহলে সৌদি আরবকে চাপের মুখে পিছু হটতে হতে পারে। এ কারণেই ইসরায়েল সরকার যেকোনো সরকারি পদক্ষেপ স্থগিত করছিল এবং এখন তার ফল ভোগ এখন করতে হচ্ছে | 


সৌদি আরব আর ইরানের দ্বন্দ্বের কথা আমরা সবাই জানি | ইরানও কোনো না কোনোভাবে এই স্বীকৃতির ব্যাপারটা ভেঙ্গে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। কারণ ইসরায়েল এবং সৌদি আরব এই ধরনের আলোচনা যদি এগিয়ে নিয়ে যায় আর সৌদি আরব ইসরায়েলকে মেনে নেয়, তাহলে ফিলিস্তিনের খেলা প্রায় শেষ হয়ে যেত | সেই কারণেই ইরান, হেজবোল্লার মদতে হামাসএর হাত শক্ত করেছে | 


ডিপ্লোম্যাসিতে শত্রুর থেকে ভ্যালিডেশন আর দেশের তাত্ক্ষণিক সুরক্ষার মধ্যে কোনটার স্থান আগে সেটা আজ ইজরায়েল খুব বুঝছে |
তারা "ঠেকে" শিখছে .... আমরা কি "দেখে" শিখছি ?

~ অনিন্দ্য নন্দী 

Thursday, October 5, 2023

নরেন্দ্র মোদীর মন্দির-ধ্বংসের কর্মকান্ড:

-অনুলিখন: বিজিৎ প্রশান্থা

নরেন্দ্র মোদীর মন্দির বিধ্বংস করার রাজনীতির শুরু হয় সম্ভবত ২০০৮ সালে, যখন সড়ক সম্প্রসারণের দোহাই দিয়ে তার সরকার গান্ধীনগরে ৮০-খানা মন্দির ধ্বস্ত করে ফেলে। স্বাধীন ভারতে কোনো সরকারি কর্মকান্ড এতো বড় দুঃসাহস দেখাতে পারেনি। এই প্রজেক্টের ফলে হিন্দু ধর্মস্থান বিনাশের প্রতিযোগিতায় মোদী এক ঝটকায় কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট পার্টিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে যায়।

বিজেপি কর্নাটকে আসার পর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১-এর মধ্যেই ২৬০০ মন্দির ধ্বংস করে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ না এলে বিজেপির কর্নাটকে আরো ৬৫০০ মন্দির ধ্বংস করার পরিকল্পনা ছিল। কর্নাটকে এই রেকর্ড টিপু সুলতানের আছে কিনা সন্দেহ।

কাশী বিশ্বনাথ করিডোর বানাতে কয়েক ডজন সুপ্রাচীন মন্দির ধ্বংস করা হয়। বিশ্বেশ্বর শিবের দর্শন করার পথে পঞ্চায়তন ঈশ্বর - গণেশ, দুর্গা, শিব, বিষ্ণু, সূর্য - এই পাঁচ ভগবানের মন্দির দর্শন করা মঙ্গল মনে করা হত। এই পাঁচ মন্দির পরিক্রমা ছাড়া কাশী বিশ্বনাথ দর্শন অসম্পূর্ণ মনে করা হতো। মোদির কাশী করিডোর এই পাঁচটি মন্দিরকেই নির্মমভাবে ধস্ত করে দেয়। কাশী সংকট-মোচন মন্দিরের পুরোহিত এবং IIT বারাণসীর ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান বিশ্বম্বর নাথ মিশ্রের মতে, হিন্দু পুরাণে কাশী বিশ্বেশ্বর মন্দিরের আশেপাশে ১৪৩টি অতি পবিত্র স্থল ছিল, যার কোনো পরোয়া মোদী করেনি এবং করিডোর বানিয়ে এই ১৪৩টি স্থল করিডোর পরিসর থেকে সম্পূর্ণভাবে মিটিয়ে ফেলা হয়। হিন্দু সংস্কার অনুযায়ী, ৮৪ রকমের তীর্থযাত্রা ব্যাসপীঠে সমাপন হতো যা বিশ্বেশ্বরের নন্দী মহারাজ থেকে কিছু দূরেই অবস্থিত ছিল। মোদী এই ব্যাসপীঠ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। এছাড়াও মূল মন্দিরের আশেপাশে অসংখ্য শিবলিঙ্গ ছিল, যেগুলি নির্মমভাবে উৎখাত করা হয় এবং কিছু দূরেই নোংরা নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়।

অযোধ্যার পবিত্র রাম মন্দির নির্মাণকালে মোদী-যোগীর ডাবল-ইঞ্জিন উত্তরপ্রদেশ সরকার রামায়ণ-এর কাহিনীর সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত কয়েক ডজন অত্যন্ত সুপ্রাচীন মন্দির সম্পূর্ণভাবে মিটিয়ে ফেলে। এদের মধ্যে উল্লেখ্য : সীতা কূপ, সীতা রসুই, রঙ্গনাথ মন্দির, মানস ভবন, রাম খাজানা মন্দির, জটায়ু স্থান (স্বয়ং শ্রীরাম কর্তৃক নির্মিত), নল-নীলের টিলা, অঙ্গদ টিলা, জম্বুবান টিলা, রাম চত্বর, কথা ভবন, গবাক্ষ কিলা মন্দির, গওয়াই কিলা মন্দির, সুষেন জির মন্দির ইত্যাদি। এগুলি ছাড়াও আরো ১০০-২০০ মন্দির ধ্বংস করার পরিকল্পনা রয়েছে যার বেশ কয়েকটি ২০০-৩০০ বছর প্রাচীন।

কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের গর্ভগৃহ হিন্দুদের দানের ১২৫ কোটি টাকার খাঁটি সোনা দিয়ে বাঁধানো ছিল। মন্দির সংস্কারের নামে সরকার দ্বারা এই সমস্ত সোনা চুরি করে গর্ভগৃহে পিতল সেঁটে দেওয়া হয়।

মার্চ ২০২৩-এ বিজেপি-শিবসেনা ডাবল-ইঞ্জিন সরকার মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার তেহসিল মহলে গভীর রাত্রিতে সবার অগোচরে অতি সুপ্রাচীন জগদম্বা মন্দির ধ্বংস করে। যেসব গ্রামবাসীরা বাধা দিতে আসে, তাদের বিরুদ্ধে কেস দায়ের করা হয়। এরপর Archeology ডিপার্টমেন্ট-এর অফিসার এসে ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে দেবীর মূর্তি সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।

২০২২ সালে রাজস্থানের আলবার জেলায় ৩০০ বছরের পুরোনো এক শিব মন্দির বুলডোজার দিয়ে ধসিয়ে দেওয়া হয়। অনুসন্ধান করে জানা যায়, বিজেপির মন্ডল সভাপতি ২০১৮ সালে চিঠি লিখে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরকে মন্দির ধ্বংস করার এই প্রস্তাব দিয়েছিলো।

বিজেপি বিগত দশ বছরে পুরো ভারত জুড়ে হিন্দুত্বের সংস্কারের নামে এরকম কয়েক হাজার মন্দির ধ্বংস করেছে। মোদির মতো এতো ব্যাপক মন্দির ধ্বংসের ইতিহাস স্বয়ং ঔরংজেবেরও নেই।

এমন দুর্বিষহ বঞ্চনা আর আঘাতের বিরুদ্ধে এক হোন। কট্টর এবং একনিষ্ঠ সনাতনী দল *একম সনাতন ভারত* দলে যোগ দিন। কারণ মোদী পসমান্দা এবং জিহাদী 'শান্তির ছেলে'-দের বিকল্প হতে পারে কিন্তু হিন্দুদের একমাত্র বিকল্প: *একম সনাতন ভারত*।

সর্বে সনাতনে ভবন্তু একাত্মম্।

বিজেপি-আরএসএস-এর শরিয়াবাদ এবং One-DNA ঐক্য:

Image Credit: Mojo Story

-অনুলিখন: বিজিৎ প্রশান্থা

PPSSC অর্থাৎ পরম-পূজ্য সর-সংঘ চালক মহান ভাগবতের মতো কিছু 'দরকারি', 'দরবারি' গর্দভের মাধ্যমে বিজেপি বেশ কয়েক বছর ধরে সনাতনী হিন্দুত্বকে বিকৃত এবং অপসারণ করে সংঘি হিন্দুত্ব আমদানি করার চেষ্টা করছে। এর মূল লক্ষ্য হলো হিন্দুত্বকে শরিয়া-অনুগত করা, যাতে 'One Nation One Religion'-এর মতো দিবাস্বপ্নবাদী আদর্শ ভারতবর্ষে প্রতিষ্ঠা করা যায়। ভাগবত এপ্রসঙ্গে সম্প্রতি ‘One DNA theory’ নামক আর একটি বায়বীয় তত্ত্বের প্রবর্তন করেন, যার মূল কথা যে, হিন্দু-মুসলিম ঐক্য কেবল মরীচিকা নয় কারণ হিন্দু এবং মুসলিমদের DNA এক। এখানে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, মোদীর 'তৃপ্তিকরণ' রাজনীতির দরুন ভাগবত আশরাফ-মুল্লা-মুফতি সমাজকে ই*সলামিক সাহিত্যে আজ্ঞাপিত জি*হাদি, হিংস্র মতাদর্শ নিয়ে প্রশ্ন করে না, ই*সলামের মূর্তি-ভাঙার 'আধ্যাত্মিক' প্রথা নিয়ে আওয়াজ তুলতে পারে না, মূর্তিপূজকদের প্রতি কো*রানে আদিষ্ট ঘৃণার ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলে পারে না, অমানবিক শরিয়া আইন-কানুন নিয়ে তর্ক করতে পারে না। মোহন ভাগবত শুধু হিন্দুদেরই অপ্রয়োজনীয় প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত করতে ওস্তাদ: হিন্দুদের কেন মূর্তিপূজা করা উচিত নয়, হিন্দু সেনাপতি হংস এবং ডিম্বক কি আসলে সমকামী ছিলেন, কেন হিন্দুদের জ্ঞানবাপী এবং বাকি কনভার্টেড মন্দিরগুলি থেকে দাবিদাওয়া ছেড়ে দেওয়া উচিত, ইত্যাদি!

এই চরম 'পবিত্র' One DNA ঐক্যের ঠেলায় বিজেপি যা-কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী মতাদর্শী, - জি*হাদি, কমিউনিস্ট, আজাদী activist, বহুজনবাদী, নব-বুদ্ধিস্ট,আম্বেদকরবাদী, খালিস্তানি - সবাইকেই বাকস্বাধীনতার অধিকার দিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু নূপুর শর্মা বা টি রাজা সিং যখন ই*সলামিক সাহিত্য থেকেই লাইন উদ্ধৃত করে ই*সলামের সত্য জনসমক্ষে আনেন, তখন এদের মৌলবাদী নেকড়েদের মুখে ছুঁড়ে দিতে বিজেপি বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না।

বরং, যখন 'সার তান সে জুদা' হুমকি ছুঁড়ে দেওয়া ধর্মান্ধ জনতা ভারতের রাস্তাগুলিতে ভিড় করেছিল, যখন নূপুর শর্মার কুশপুত্তলিকাকে অপমান করে রাস্তায় পোড়ানো হয়েছিল, যখন বিজেপির নিজস্ব সংখ্যালঘু মোর্চার সদস্যরা এবং আজমীর দরগার খাদিমরা পরিকল্পনা করে কানহাইয়া লালের গলা কেটে ফেলে (কথিত আছে, আজমিরের একজন খাদিম,- গওহর চিস্তি, আজমীর দরগায় কানহাইয়া লালের খুনিদের একজনের সঙ্গে দেখা করে। গওহর বিজেপির প্রাক্তন মুখপাত্র নুপুর শর্মাকে 'ব্লাসফেমি' করার অভিযোগে শিরশ্ছেদের ডাক দিয়েছিল), যখন নূপুর শর্মার সমর্থনে এগিয়ে আসার 'অপরাধে' বজরং দলের সদস্য হর্ষ হিন্দুকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছিল- তখন 'হিন্দু-হৃদয়-সম্রাট' মোদি নীরবতাই বেছে নিয়েছিলেন.. বরং তিনি আজমীর দরগায় চাদর পাঠিয়ে ধর্মান্ধ খাদিমদের এই 'সাহসী' কর্মকাণ্ড সানন্দে উদযাপন করেছিলেন।

যখন ধর্মান্তরণের নোংরা উদ্দেশ্য নিয়ে দরগার 'চাদর' এবং গীর্জার 'ফাদার' ভারতের প্রতিটি গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে, এবং Covid-এর করাল গ্রাসে ইতিমধ্যেই বিধ্বস্ত গ্রামীণ রাজনীতির সুযোগ নিয়ে মৌলবী আর খ্রীষ্টান যাজকরা বিদেশী ফান্ডিং-এর জোরে গ্রামের সিধেসাধা হিন্দুদের সবার প্রকাশ্যে ধর্মান্তরিত করছে, এবং অপ্রয়োজনীয় বর্ণবিদ্বেষ, হিংসা, অস্থিরতা ও অশান্তির অন্ধকার গর্ভে ভারতীয় গ্রামীণ সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে - তখন মোদী এবং বিজেপি এই সমস্ত বিষয়েই অদ্ভুতভাবে নীরব। এমনকি ধর্মান্তরণ রেকেট-এর বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে লড়াই করে নিহত বিজেপি কর্মীদের থেকেও বিজেপি হাইকমান্ড নিজেদের নিষ্ঠুরভাবে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। হিন্দুদের সাথে এরকম বিমাতৃসুলভ আচরণ বিজেপির শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের নজর এড়াচ্ছে না।

এমন দুর্বিষহ বঞ্চনা আর আঘাতের বিরুদ্ধে এক হোন। আর কট্টর, একনিষ্ঠ সনাতনী দল *একম সনাতন ভারত* দলে যোগ দিন। কারণ মোদী-র কটাক্ষ 'বিজেপি-র বিকল্প কী'-র একমাত্র জবাব: *একম সনাতন ভারত*।

সর্বে সনাতনে ভবন্তু একাত্মম্।

'ইন্ডিয়ান স্টেট', রাজনীতি, এবং Judiciary হিন্দু বিরোধিতার প্রতিযোগিতায় নামে কেন?

-অনুলিখন: বিজিৎ প্রশান্থা

কংগ্রেস স্বাধীনতার আগে এবং পরে ব্রিটিশদের সহায়তায় ভারতেরই অভ্যন্তরে একটি ভাসা-ভাসা political state তৈরি করেছিল। এই শয়তানি নেক্সাস কংগ্রেসের অত্যাচারী শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করেছিল এবং ভারতের নেতা-আমলাদের সস্তা জনপ্রিয়তা এবং বৈভবশালী হতে সাহায্য করেছিল। এই কংগ্রেসই স্বাধীনতার পর থেকে মুসলিমদেরকে রাজনৈতিকভাবে একত্রিত করার এবং হিন্দুদের চিরতরে বিভক্ত করার জঘন্য কর্মসূচী শুরু করে, যাতে এই সংখ্যালঘু এলিট বাবু-সমাজ দীর্ঘ সময়ের জন্য সংখ্যাগুরু হিন্দুদের ওপর নির্বিঘ্নে ছড়ি ঘোরাতে পারে। এর জন্য কংগ্রেস, কমিউনিস্ট, এবং ইসলামিস্টরা বেশ কয়েকটি এজেন্ডা বেছে নেয়:

(i) বর্ণ ব্যবস্থাকে Caste সিস্টেম-এ পরিবর্তন করা এবং Caste identity politics প্রবর্তন,

(ii) তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে সংখ্যালঘু অধিকার প্রবর্তন,

(iii) হিন্দু অনুভূতিকে হেয় করে এমন মিথ্যা ইতিহাস শেখানো এবং জিম্মি হিন্দু তৈরি করা, যারা নিজেদেরই হিন্দু ইতিহাস, হিন্দু ঐতিহ্য, এবং হিন্দু মূল্যবোধকে ঘৃণা করবে।

যেহেতু হিন্দু সমাজের কাছে বরাবরই সাহসী, দৃপ্ত 'হিন্দুত্ব' ন্যারেটিভের অভাব ছিল, তাই কংগ্রেস-বিরোধী পার্টিগুলিও কংগ্রেস-কমিউনিস্টদের এই ফাঁদে পা দেয়। এই বিষয়ে কংগ্রেসের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য, জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই 1978 সালে সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করেন। কংগ্রেস স্বাভাবিক কারণেই এর বিরোধিতা করতে এগিয়ে আসেনি। 1986 সালে শাহ বান কেস-এর প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে একরকম খারিজ করে কংগ্রেস দ্বারা মুসলিম মহিলা সুরক্ষা আইনটি পার্লামেন্টে আনা হয়েছিল, যা মুসলিম মহিলা শাহ বানোকে ভরণপোষণের ন্যায্য অধিকার থেকে ওনাকে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করে। 1991 সালে সনাতনীদের (হিন্দু, জৈন, বৌদ্ধ এবং শিখদের) সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত তাদের উপাসনালয় এবং তীর্থস্থানগুলিকে আইনত দাবি করা থেকে বঞ্চিত করার জন্য উপাসনা-স্থান আইন (Places of Worship Act) চালু করা হয়েছিল, যা সনাতনীদের জবরদখল করা উপাসনাস্থলগুলি আইনিভাবে পুনরুদ্ধার করার সমস্ত উপায়গুলি অঙ্কুরে নষ্ট করে দেয়। এই প্রসঙ্গে বলি, Places of Worship Act আপাতভাবে সংবিধানবিরোধী, তবু এই আইনের কিছু বিধানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দায়ের করা বহু পিআইএল-এর জবাব দেওয়া থেকে তথাকথিত 'হিন্দুত্ববাদী' মোদি সরকার একাধিকবার বিরত থেকেছে!

মৌনভাবে সহ‍্য করার দিন শেষ। এবার হিন্দুদের রাজনৈতিকভাবে জবাব দেবার পালা। গান্ধীবাদ, মোদীবাদ, সেকুলারবাদ - এসব ছেড়ে কট্টর হিন্দু হোন। কট্টর এবং একনিষ্ঠ হিন্দুত্ববাদী দল একম সনাতন ভারতের সমর্থনে এগিয়ে আসুন।

সর্বে সনাতনে ভবন্তু একাত্মম্।

সনাতন্ হিন্দু ধর্মে পবিত্র সংখ্যা ১০৮ এত মহাত্মপূর্ণ কেন...???

সনাতন্ বৈদিক হিন্দু ধর্মে, ১০৮ সংখ্যা টি অত্যন্ত পবিত্র সংখ্যা রূপে গণ্য করা হয়। কিন্তু কেন...??? কলমে :- অরিন্দম রায়। আমাদের যো...