Wednesday, October 11, 2023

ইজরায়েলের এতো বড় দুর্ভোগের দায় কার ? গোয়েন্দা সংস্থার নাকি সরকারের ??

বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে ইজরায়েলে বিরোধ প্রদর্শন চলছিল | একদল বেনজামিন নেতান্হুর পক্ষে আর একদল নেতান্হুর বিপক্ষে | নেতান্হু ইজরায়েলে জুডিসিয়ারী রিফর্ম করার চেষ্টা করছিলেন | যে রিফর্ম করা হলে তাঁর নিজের বিরুদ্ধে যে করাপশনএর আরোপ আছে সেটার থেকে নিস্পত্তি পাওয়া যেত | তাই রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল | নাফ্তালি সরকার সেই রাজনৈতিক অস্থিরতারই পরিনাম হিসাবে ইজরায়েলে ক্ষমতায় এসেছিল | নাফ্তালি সরকারের পতনের পর আবার নেতান্হু সরকার এসেছে অনেকদিন হলো | কিন্তু বিগত কয়েক বছরে ইজরায়েলের কিছু বন্ধু দেশের মধ্যস্থতায় যে বর ভুল ইজরায়েল করেছে আজ সেই ভুলের মাশুল দিচ্ছে ইজরায়েল | হামাস এই সিচুয়েশনের ভরপুর ফায়দা নিয়েছে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্যে | হামাস এতটাই শক্তি বৃদ্ধি করেছে যে ইজরায়েলের ভিতর ঢুকে ইজরায়েলের জনগণকে মারা, কিডন্যাপ করার মত সাহস দেখাতে পেরেছে | গত ৭ তারিখে হামাস ইজরায়েলের ওপর একসাথে ৫০০০ রকেট হামলা করে আর তারপ থেকে প্রত্যেকদিন ৩০০০ থেকে ৫০০০ রকেট ইজরায়েলে ওপর ফায়ার করেছে হামাস | এমনকি এন্টি ট্যাঙ্ক, এন্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলও রয়েছে হামাসের কাছে | গত ৪৮ ঘন্টায় সেগুলোর খুব ব্যবহারও করেছে হামাস | শুধু তাই নয়, হামাস প্যারাসুট আর হ্যান্ড গ্লাইডারের মাধ্যমে জঙ্গিদের ইজরায়েল আর গাজার মধ্যে যে দেওয়াল আছে সেটা পার করে ইজরায়েলের ভিতরে ল্যান্ড করিয়েছে | সেই জঙ্গিরা দু-তিন দিন ধরে ইজরায়েলে মৃত্যুযজ্ঞ চালিয়েছে, অসংখ্য নিরাপরাধ মানুষকে মেরেছে, কিডন্যাপ করে গাজায় নিয়ে গেছে | নবজাত শিশুদেরও নির্মম নরসংহার করেছে | 


কিন্তু এসব দেখে আপনার আশ্চর্য লাগছে না ? আশ্চর্যের বিষয় তো অবশ্যই !! কারণ যে গাজা থেকে এত কিছু কন্ট্রোল করা হচ্ছে সেটা নেহাতই একটা ছোট জায়গা, যার একদিকে সমুদ্র, একদিকে ইজিপ্ট আর বাকি দুদিকে ইজরায়েল | গাজা শহরের চৌহুদ্দী ধরে যদি আপনি হেঁটে যান তাহলে মাত্র ৪৫ কিমি হাঁটা হবে | সেই রকম একটা ছোট জায়গা তে যখন এই হামলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল, জঙ্গিদের ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছিল, হামলার mock run করা হচ্ছিল, সেটা কারোর চোখে পড়ে নি ? কারোর বলতে আমি মোসাদ, সিআইএ আর এমআই6 এর কথা বলছি | যেহেতু গাজা একটা অত্যন্ত সেনসিটিভ এলাকা, সেহেতু বেশ কয়েক দশক ধরে গাজার ওপর বিশেষ নজর রাখে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংস্থাগুলির মধ্যে এই তিনটে সংস্থা | কয়েক দশক ধরে তারা নির্ভুলতার সাথে তারা গাজার ওপর সর্বক্ষণের নজর রেখেছে | গাজায় একটা পাখি উড়লেও, ইসরাইল সেটা সম্পর্কে জানতে পারে কারণ সিআইএ নেটওয়ার্ক এবং এমআই 6 নেটওয়ার্ক সর্বদা ইসরায়েলের সাথে সেই তথ্য ভাগ করে। এ ছাড়া গাজার ভেতরে তাদের নিজস্ব একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কও রয়েছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল এত কঠোর ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও হামাস জঙ্গিরা এত প্রস্তুতি করে কিকরে ? হামাস দাবি করে যে তাদের কাছে এক লাখের বেশি রকেট রয়েছে এবং আগামীতে তাদের কাছে আরও আসতে চলেছে, এটা তাদের দাবি, এর বাইরে তারা কিছু বিপজ্জনক অস্ত্র তৈরি করে এমনকি তাদের সৈন্যদের প্যারাসুট দিয়ে ল্যান্ড করার প্রশিক্ষণও দেয়। 


এত কিছু তো দু এক দিনে হয় নি, কয়েক মাস বা বছরও লেগেছে হয়তো | এবং এর জন্য গাজা স্ট্রিপের ভিতরে খুব মুভমেন্টও থেকেছে | কিন্তু এটা কীভাবে হতে পারে যে বিশ্বের শীর্ষ তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা এই তৎপরতা শনাক্ত করতে পারেনি, বা ডিকোড করতেও সক্ষম হননি। আরবদেশ হলেও ইজিপ্ট সব সময় ইজরায়েলের সাথে সহযোগিতা করে | সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল যেদিন হামাস আক্রমণ করেছিল, তার পরদিনই ইজিপ্টের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতি দেন যে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে সরাসরি সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে গাজা উপত্যকার ভেতরে কিছু ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটছে, এবং তিনি ইজরায়েল কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন । এর পরও নেতানিয়াহু তার কথায় পাত্তা দেননি এবং সেগুলো এড়িয়ে গেছেন। এর ফলে এমন একটি ভয়ঙ্কর হামলা হয়েছে | হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক, শিশু, নারী ও এমনকি নবজাতককেও হত্যা করা হয়েছে। 


বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোতে বিশেষ করে আমেরিকায় আলোচনা চলছে যে কেন আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে এর জন্য দায়ী করা উচিত নয়। এই যুদ্ধ যদি আরও বড় হয়, তাহলে এতে হাজার হাজার ইসরায়েলি নিহত হবে, বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হবে। সে অনুযায়ী, এটি মোসাদ এবং সিআইএ-এর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা বলে মনে করা উচিত। কিন্তু সত্যটা কি? সবটাই কি মোসাদের দোষ? সিআইএর কি কোনো ভুল ছিল? এটা কি অন্য কোনো কারণে হয়েছে? একটু ধারণা দিই। 


সম্প্রতি আমেরিকার একজন খুব বড় গোয়েন্দা কর্মকর্তা যিনি আগে সিআইএ তে ছিলেন, তিনি ব্লুমবার্গকে বলেছেন যে গত কয়েক মাসে ইসরাইল এমন অনেক সংকেত পেয়েছে যার থেকে খুব সঙ্গীন কিছু ষড়যন্ত্র -এর বিষয়ে জানতে পারা যায় এবং সে বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ইনপুট এবং পরামর্শও দিয়েছিল | তারা সরকারের কাছে গাজার ভিতরে একটা ছোট হামলা চালানোর অনুরোধ করেছিল যাতে তারা এই ষড়যন্ত্র-এর পরিকল্পনা আর প্রস্তুতিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে আর তাতে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে কিছুটা সময়ও বেড়ে যাবে এই ষড়যন্ত্রকে সমূলে ধ্বংস করতে |
 


কিন্তু ইসরায়েল সরকার এই সমস্ত তথ্য ও পরামর্শ গ্রহণ করেনি। কারণ সৌদি আরব। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সৌদি আরব ইসরাইলকে একটি দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছিল এবং সেটা ইজরায়েলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল | কারণ সৌদি আরবকে বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের নেতা দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সৌদি আরব ইসলাম ধর্মের উৎপত্তি। এরকম একটি মুসলিম দেশ যদি ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় তাহলে অন্য মুসলিম দেশগুলোকেও ইসরাইলকে মেনে নিতে হবে। এই ভ্যালিডেশন পাওয়ার রোগ খুব মারাত্মক | যারাই তাদের ঘোষিত শত্রুর কাছ থেকে ভ্যালিডেশন খুঁজতে গেছে তারাই অদূর ভবিষ্যতে দুর্দশার সম্মুখীন হয়েছে | ইজরায়েলের সাথেও তাই হয়েছে | সৌদির থেকে মান্যতা পাওয়ার জন্যে তারা মুসলিম গাজার ওপর হামলা করার রিস্ক নিতে পারে নি | একদিকে সৌদি আরবের সাথে কথা চলছে আর অন্যদিকে যদি গাঁজায় বোমা বর্ষণ শুরু করে তাহলে সৌদি আরবকে চাপের মুখে পিছু হটতে হতে পারে। এ কারণেই ইসরায়েল সরকার যেকোনো সরকারি পদক্ষেপ স্থগিত করছিল এবং এখন তার ফল ভোগ এখন করতে হচ্ছে | 


সৌদি আরব আর ইরানের দ্বন্দ্বের কথা আমরা সবাই জানি | ইরানও কোনো না কোনোভাবে এই স্বীকৃতির ব্যাপারটা ভেঙ্গে দেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। কারণ ইসরায়েল এবং সৌদি আরব এই ধরনের আলোচনা যদি এগিয়ে নিয়ে যায় আর সৌদি আরব ইসরায়েলকে মেনে নেয়, তাহলে ফিলিস্তিনের খেলা প্রায় শেষ হয়ে যেত | সেই কারণেই ইরান, হেজবোল্লার মদতে হামাসএর হাত শক্ত করেছে | 


ডিপ্লোম্যাসিতে শত্রুর থেকে ভ্যালিডেশন আর দেশের তাত্ক্ষণিক সুরক্ষার মধ্যে কোনটার স্থান আগে সেটা আজ ইজরায়েল খুব বুঝছে |
তারা "ঠেকে" শিখছে .... আমরা কি "দেখে" শিখছি ?

~ অনিন্দ্য নন্দী 

No comments:

Post a Comment

সনাতন্ হিন্দু ধর্মে পবিত্র সংখ্যা ১০৮ এত মহাত্মপূর্ণ কেন...???

সনাতন্ বৈদিক হিন্দু ধর্মে, ১০৮ সংখ্যা টি অত্যন্ত পবিত্র সংখ্যা রূপে গণ্য করা হয়। কিন্তু কেন...??? কলমে :- অরিন্দম রায়। আমাদের যো...