লিখন: বিজিৎ প্রশান্থা
বাঙালি হিন্দু। যেন সব জমিদারের ছেলে। দুধ-ঘির শ্রাদ্ধ করিতে মজবুত, কাজের বেলা মদন্মিত্তির। সাপ মাটিতে বুক ঘষতে হাঁটে কিন্তু সাপের ঘাড়ে পা দিলে সেও হুশ করে ফনা তোলে ওঠে, কিন্তু বাঙালি হিন্দুর কলার ধরে কষে দু-চার ঘা দিলেও, বা 'তোর কালীমা সিগারেট খায়, তোর রামচন্দ্র মেয়েলি, তোর শিবের মাথায় কন্ডোম দেব' এসব বলে দিলেও এদের ক্রোধ হয় না, আত্মসম্মান এতটুকুও ক্ষুন্ন হয় না। উল্টে সেই পারভার্শন-বাদী শক্তিগুলির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে বাঙালি হিন্দু নিজের মা-বোন-ধর্ম-ঈশ্বরের ইজ্জত হনন করতে রাস্তায় নেমে পড়ে।
আজ বাঙালির বীমায় টাকা রেখে সোয়াস্তি নেই, দোকানে মাল রেখে সোয়াস্তি নেই, সিংহাসনে শালগ্রাম রেখে সোয়াস্তি নেই, মন্দিরে প্রতিমা রেখে সোয়াস্তি নেই, নদীতে বালি রেখে সোয়াস্তি নেই, বাড়ি বানানোর ইঁট-পাথর রেখে সোয়াস্তি নেই, ঘরে মা-বোন রেখে সোয়াস্তি নেই, মা-বোনের পেটে বাচ্চা এলে সোয়াস্তি নেই! বাংলার পলিটিকাল পার্টিগুলো আব্বাসের ছুরি দিয়ে পেট চিরে টাকা বের করে। বাঙালি হিন্দুর ধর্ম গেছে, জাতি গেছে, মান গেছে, কুল গেছে, মেয়ে-বৌ-দের স্বাভিমান গেছে। কালক্রমে এসবের জায়গা নিয়েছে যাদবপুরের comparative literature-এর কিছু নেশাখোর দেড়ে, আর কলিকাতা য়ুনিভার্সিটির কিছু শাড়ী-পরে-লোমওয়ালা-পেট-দেখানো কুৎসিত বামপন্থী ঘড়িয়াল। 'যুদ্ধ আছে, হিংসা আছে' এইসব খেলো অজুহাত দেখিয়ে হিন্দু বাঙালি শাস্ত্র-পুরাণ-পঠন-পাঠন বহুদিন বন্ধ করে দিয়েছে (যদিও বকরা-ঈদের দিন ছাগলের কাটা ধড়ে নিজের মুন্ডু বসিয়ে 'Happy Eid ইনশা-আল্লাহ' সেলফি দিতে ভোলে না), আর এখন আঁতলামোর জেরে সে তার দুর্গাপুজোর মুণ্ডুপাত করতেও পিছপা নয়।
তাই তো বাঙালির চিরকল্পিত মা ভবানী, রুদ্রানীর রূপ ছেড়ে দুর্গা এখন শুধুই ঋতুমতী, তার চারদিনের আবাসরূপী প্যান্ডেল এখন মেনস্ট্রুয়েশন-এর রূপ-রস-গন্ধের কায়াকল্প, শিল্পী-কল্পিত লোহিত রুধির মহিষাসুরের বুক থেকে নয়, মা ভবতারিনীর বন্দনামঞ্চ থেকে উৎসারিত হচ্ছে।
হিন্দুত্বের প্লাবনে বাঙালি জনমানস প্লাবিত করতে ঊনবিংশ-বিংশ শতাব্দীতে যখন বঙ্কিম-শরৎ-রবীন্দ্রনাথ-রা বাংলা সাহিত্য লিখেছেন, তখন তাদের জাতীয়তাবাদী কলম স্বপ্ন দেখছে অন্ধকার, শব্দহীন রাত্রি থেকে উত্তরিত আলোকময়, পক্ষী-কূজন-শব্দিত এক আনন্দময় শারদপ্রভাতের, যেখানে ভক্ত মহেন্দ্র ভক্তিভীরু চোখ তুলে দেখছে এক মর্মরপ্রস্তরনির্মিত প্রশস্ত বিশালকায় মন্দির যার গর্ভে এক প্রকাণ্ড মূর্তি -- যাঁর দশভুজা দশদিকে প্রসারিত, যিনি শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারিনী,কৌস্তুভশোভিতহৃদয়া, যাঁর ত্রিনয়নে সর্ববিদারী নিদাঘ অগ্নি, যাঁর পদতলে শত্রু বিমর্দিত, যাঁর পদাশ্রিত বীরকেশরী শত্রুনিপীড়নে নিযুক্ত। সেই বিবিধ-আয়ূধ-ভুজা, দশপ্রহরণধারিনী, বীরেন্দ্রপৃষ্ঠবিহারিণী, - দক্ষিণে আলুলায়িতকুন্তলা, শতদলমালামন্ডিত, ভাগ্যরূপিণী লক্ষ্মী , বামে বাণী বিদ্যা-বিজ্ঞানদায়িনী, - সঙ্গে বলরূপী কার্তিকেয়, কার্যসিদ্ধিরূপী গণেশ। পদতলে লুন্ঠিত, রুধিরপ্লাবিত হচ্ছে সবুজ-গাত্র মধু-কৈটভ-মহিষাসুরের ছিন্ন মস্তক। মাতা জ্যোতির্ময়ী, রুদ্রানী, শিবানী, দুর্গা তখন শত্রুদলনে চিরলিপ্তা - আর সেই মন্দিরের প্রাঙ্গনে গুঞ্জিত হচ্ছে এক-কন্ঠী, ভক্তি-আশ্রিত মন্ত্র :
"সর্ব-মঙ্গল-মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থ-সাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণী নমোহস্তুতে। ।"
কিন্তু একবিংশ শতাব্দীর deracinated, উদ্বাস্তু, ভীরু, সিন্ডিকেটবাদী হিন্দু বাঙালি সমাজের কাছে দুর্গামন্ডপ মানে ঋতুমন্ডিত রক্তাক্ত স্যানিটারি প্যাড-এর মেলা, প্যান্ডেল জুড়ে শুধু 'biological process'-এর awareness campaign, অস্ত্রহীন মা দুর্গার হাতে ভারতের পলিটিকাল ম্যাপ -- সেইসাথে মণ্ডপের কোনায় কোনায় মমতা-মদন-মোদী-আদি নেতাবৃন্দের চশমখোরি হাসি এবং দালালখোরি কৌতূহল:
"শিবের মাথায় কন্ডোম দিই,
দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে দিই ঋতুমতীর পেচ্ছাপ।
চিন্টু বাঙালি, কেমন চলছে-
পাশের বাড়ির বৌদির সাথে অবাঞ্ছিত কেচ্ছা?"
আত্মঘাতের এই সাতপাঁচ মারণযজ্ঞ দেখে এই মুমূর্ষু জাতিকে বলতে ইচ্ছে হয়, 'মিনসে, তোর মরণ হয় না?!'
About us - আমাদের সম্পর্কে জানুন
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সনাতন্ হিন্দু ধর্মে পবিত্র সংখ্যা ১০৮ এত মহাত্মপূর্ণ কেন...???
সনাতন্ বৈদিক হিন্দু ধর্মে, ১০৮ সংখ্যা টি অত্যন্ত পবিত্র সংখ্যা রূপে গণ্য করা হয়। কিন্তু কেন...??? কলমে :- অরিন্দম রায়। আমাদের যো...
-
-অনুলিখন: বিজিৎ প্রশান্থা নরেন্দ্র মোদীর মন্দির বিধ্বংস করার রাজনীতির শুরু হয় সম্ভবত ২০০৮ সালে, যখন সড়ক সম্প্রসারণের দোহাই দিয়ে তার সরকার...
-
যখন হিসারের একটা চার্চের দেওয়াল ভাঙ্গা সারা বিশ্বের ব্রেকিং নিউজ হয়, যখন কাঠুয়ার আসিফার কথা বিবিসি এক মাস ধরে সম্প্রচার করে, যখন একজন আখল...
-
বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে ইজরায়েলে বিরোধ প্রদর্শন চলছিল | একদল বেনজামিন নেতান্হুর পক্ষে আর একদল নেতান্হুর বিপক্ষে | নেতান্হু ইজরায়েলে জুডিসিয়ারী...
No comments:
Post a Comment