-অনুলিখন: বিজিৎ প্রশান্থা
নরেন্দ্র মোদীর মন্দির বিধ্বংস করার রাজনীতির শুরু হয় সম্ভবত ২০০৮ সালে, যখন সড়ক সম্প্রসারণের দোহাই দিয়ে তার সরকার গান্ধীনগরে ৮০-খানা মন্দির ধ্বস্ত করে ফেলে। স্বাধীন ভারতে কোনো সরকারি কর্মকান্ড এতো বড় দুঃসাহস দেখাতে পারেনি। এই প্রজেক্টের ফলে হিন্দু ধর্মস্থান বিনাশের প্রতিযোগিতায় মোদী এক ঝটকায় কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট পার্টিদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে যায়।
বিজেপি কর্নাটকে আসার পর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১-এর মধ্যেই ২৬০০ মন্দির ধ্বংস করে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ না এলে বিজেপির কর্নাটকে আরো ৬৫০০ মন্দির ধ্বংস করার পরিকল্পনা ছিল। কর্নাটকে এই রেকর্ড টিপু সুলতানের আছে কিনা সন্দেহ।
কাশী বিশ্বনাথ করিডোর বানাতে কয়েক ডজন সুপ্রাচীন মন্দির ধ্বংস করা হয়। বিশ্বেশ্বর শিবের দর্শন করার পথে পঞ্চায়তন ঈশ্বর - গণেশ, দুর্গা, শিব, বিষ্ণু, সূর্য - এই পাঁচ ভগবানের মন্দির দর্শন করা মঙ্গল মনে করা হত। এই পাঁচ মন্দির পরিক্রমা ছাড়া কাশী বিশ্বনাথ দর্শন অসম্পূর্ণ মনে করা হতো। মোদির কাশী করিডোর এই পাঁচটি মন্দিরকেই নির্মমভাবে ধস্ত করে দেয়। কাশী সংকট-মোচন মন্দিরের পুরোহিত এবং IIT বারাণসীর ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের প্রধান বিশ্বম্বর নাথ মিশ্রের মতে, হিন্দু পুরাণে কাশী বিশ্বেশ্বর মন্দিরের আশেপাশে ১৪৩টি অতি পবিত্র স্থল ছিল, যার কোনো পরোয়া মোদী করেনি এবং করিডোর বানিয়ে এই ১৪৩টি স্থল করিডোর পরিসর থেকে সম্পূর্ণভাবে মিটিয়ে ফেলা হয়। হিন্দু সংস্কার অনুযায়ী, ৮৪ রকমের তীর্থযাত্রা ব্যাসপীঠে সমাপন হতো যা বিশ্বেশ্বরের নন্দী মহারাজ থেকে কিছু দূরেই অবস্থিত ছিল। মোদী এই ব্যাসপীঠ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়। এছাড়াও মূল মন্দিরের আশেপাশে অসংখ্য শিবলিঙ্গ ছিল, যেগুলি নির্মমভাবে উৎখাত করা হয় এবং কিছু দূরেই নোংরা নর্দমায় ফেলে দেওয়া হয়।
অযোধ্যার পবিত্র রাম মন্দির নির্মাণকালে মোদী-যোগীর ডাবল-ইঞ্জিন উত্তরপ্রদেশ সরকার রামায়ণ-এর কাহিনীর সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত কয়েক ডজন অত্যন্ত সুপ্রাচীন মন্দির সম্পূর্ণভাবে মিটিয়ে ফেলে। এদের মধ্যে উল্লেখ্য : সীতা কূপ, সীতা রসুই, রঙ্গনাথ মন্দির, মানস ভবন, রাম খাজানা মন্দির, জটায়ু স্থান (স্বয়ং শ্রীরাম কর্তৃক নির্মিত), নল-নীলের টিলা, অঙ্গদ টিলা, জম্বুবান টিলা, রাম চত্বর, কথা ভবন, গবাক্ষ কিলা মন্দির, গওয়াই কিলা মন্দির, সুষেন জির মন্দির ইত্যাদি। এগুলি ছাড়াও আরো ১০০-২০০ মন্দির ধ্বংস করার পরিকল্পনা রয়েছে যার বেশ কয়েকটি ২০০-৩০০ বছর প্রাচীন।
কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গের গর্ভগৃহ হিন্দুদের দানের ১২৫ কোটি টাকার খাঁটি সোনা দিয়ে বাঁধানো ছিল। মন্দির সংস্কারের নামে সরকার দ্বারা এই সমস্ত সোনা চুরি করে গর্ভগৃহে পিতল সেঁটে দেওয়া হয়।
মার্চ ২০২৩-এ বিজেপি-শিবসেনা ডাবল-ইঞ্জিন সরকার মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার তেহসিল মহলে গভীর রাত্রিতে সবার অগোচরে অতি সুপ্রাচীন জগদম্বা মন্দির ধ্বংস করে। যেসব গ্রামবাসীরা বাধা দিতে আসে, তাদের বিরুদ্ধে কেস দায়ের করা হয়। এরপর Archeology ডিপার্টমেন্ট-এর অফিসার এসে ধ্বংসস্তুপের মধ্য থেকে দেবীর মূর্তি সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
২০২২ সালে রাজস্থানের আলবার জেলায় ৩০০ বছরের পুরোনো এক শিব মন্দির বুলডোজার দিয়ে ধসিয়ে দেওয়া হয়। অনুসন্ধান করে জানা যায়, বিজেপির মন্ডল সভাপতি ২০১৮ সালে চিঠি লিখে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরকে মন্দির ধ্বংস করার এই প্রস্তাব দিয়েছিলো।
বিজেপি বিগত দশ বছরে পুরো ভারত জুড়ে হিন্দুত্বের সংস্কারের নামে এরকম কয়েক হাজার মন্দির ধ্বংস করেছে। মোদির মতো এতো ব্যাপক মন্দির ধ্বংসের ইতিহাস স্বয়ং ঔরংজেবেরও নেই।
এমন দুর্বিষহ বঞ্চনা আর আঘাতের বিরুদ্ধে এক হোন। কট্টর এবং একনিষ্ঠ সনাতনী দল *একম সনাতন ভারত* দলে যোগ দিন। কারণ মোদী পসমান্দা এবং জিহাদী 'শান্তির ছেলে'-দের বিকল্প হতে পারে কিন্তু হিন্দুদের একমাত্র বিকল্প: *একম সনাতন ভারত*।
সর্বে সনাতনে ভবন্তু একাত্মম্।
About us - আমাদের সম্পর্কে জানুন
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সনাতন্ হিন্দু ধর্মে পবিত্র সংখ্যা ১০৮ এত মহাত্মপূর্ণ কেন...???
সনাতন্ বৈদিক হিন্দু ধর্মে, ১০৮ সংখ্যা টি অত্যন্ত পবিত্র সংখ্যা রূপে গণ্য করা হয়। কিন্তু কেন...??? কলমে :- অরিন্দম রায়। আমাদের যো...
-
লিখন: বিজিৎ প্রশান্থা সম্প্রতি এক উঁচুস্তরের দিল্লী মহলের নেতা JNU -এর এক হিন্দুবাদী প্রফেসর আনন্দ রঙ্গনাথনের কাছে নাকি এই অভিমত ব্যক্ত কর...
-
-অনুলিখন: বিজিৎ প্রশান্থা নরেন্দ্র মোদীর মন্দির বিধ্বংস করার রাজনীতির শুরু হয় সম্ভবত ২০০৮ সালে, যখন সড়ক সম্প্রসারণের দোহাই দিয়ে তার সরকার...
-
সনাতন ধর্ম এবং সভ্যতা কত পুরাতন...?? রচনা :- অরিন্দম রায়। "সনাতন বৈদিক ধর্ম ও সভ্যতা মাত্র ৫০০০ বছর পুরাতন হতে....." :- এমনটি ...
No comments:
Post a Comment