-অনুলিখন: বিজিৎ প্রশান্থা
বিজেপির অধ্যক্ষ জেপি নাড্ডা কয়েক বছর আগে এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করে যে, ভাজপা আর ভগবা এক নয়। বস্তুত এই হিন্দুত্ববাদ-সেক্যুলারিজম দ্বৈততাই বিজেপি-র রাজনীতির মূল রেসিপি। এজন্যই এরা জেনেবুঝে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে একজন সেক্যুলার নেতা বসিয়ে রেখে রাজ্য লেভেলে রেখেঢেকে হিন্দুত্ব রাজনীতি করে। তাই তো কেন্দ্রে যখন 'সেক্যুলার' বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকে, তখন 'হিন্দুবাদী' আডবাণী,মোদী-আদি নেতারা রথযাত্রায় বেরোয়। আবার কেন্দ্রে যখন 'সেক্যুলার' মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে চলে আসে, তখন উত্তরপ্রদেশে গেরুয়াবস্ত্র-ধারী যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রী হয়ে হিন্দুত্বের নাটক শুরু করে দেয়।
বিজেপি-র এই 'জলে-নামবো-কিন্তু-বেণী-ভেজাবো-না'-বাদী হিন্দুত্ব রাজনীতি আসলে প্রমাণ করে যে বিজেপি হিন্দুত্ববাদ নিয়ে আসলে অতটাও গম্ভীর নয় যতটা কংগ্রেস-কমিউনিস্ট-ইসলামিস্ট আঁতাত দাবি করে। এর মূল কারণ বিজেপি নামক সংস্থাটির প্রতিষ্ঠার গোড়া থেকেই নীতিগতভাবে বড় গলদ রয়ে গেছে। বিজেপি-র নিজস্ব বুদ্ধিজীবী কোষ (intellectual cell) বলে কিছু নেই, এদের নিজস্ব স্বদেশী বাস্তুতন্ত্র (eco-system) সম্পূর্ণ বায়বীয়, এদের অর্থনৈতিক মতাদর্শের সাহিত্যের মূল কথা গান্ধীবাদী সমাজবাদ (Gandhian Socialism) যা স্বয়ং কংগ্রেসও বিশ বছর আগে ত্যাগ করেছে , এদের হিন্দুত্ব 'ভারতমাতা', 'অখন্ড ভারত', 'সব ভারতবাসীই হিন্দু', 'One Nation One Religion' - এসব ফালতু gimmick-এ আটকে গেছে। একবিংশ শতাব্দীর ক্রম-পরিবর্তনীয় narrative-এর যুগে বিজেপি-র এই মান্ধাতা হিন্দুত্ববাদ সমর্থন করা হিন্দুদের জন্য বোকামো নয় - বরং বিপজ্জনক। কারণ এরকম হিন্দুত্ববাদ হিন্দু ধর্মের মৌলিক অবধারণাগুলি থেকে দূরে করে হিন্দুদের ক্রমশ ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
স্বাধীনতার পর থেকে বামপন্থী কংগ্রেস-কমিউনিস্টদের ক্রমাগত অবমাননা সহ্য করার পরই হিন্দু সমাজ খেটেখুটে যখন বিশ্বমঞ্চে খাড়া হওয়ার চেষ্টা করছে, যখন ব্রিটিশ-দের নির্মিত বিষাক্ত জাতিবাদের ওপরে উঠে একত্রিত হয়ে দিল্লির মসনদের সামনে স্বাভিমান, সম্মান এবং অধিকার দাবি করছে, তখন তাদের বিরুদ্ধে একরকম ষড়যন্ত্র করেই বিজেপি Ambedkarite আন্দোলন খাড়া করে হিন্দুত্ব থেকে দলিত সমাজকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র করছে, টিভি চ্যানেল-এ চরম মৌলবাদী AIMIM দলের সদস্যদের জায়গা দিয়ে মুসলিমদের মৌলবাদের শিক্ষা দিচ্ছে এবং একই সাথে হিন্দু সমাজে ভীতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে।
তাই জেপি নাড্ডাকে উদ্ধৃত করেই বলা যায়, বিজেপি মানেই ভগবা নয়। বরং ঐতিহাসিকভাবে বিজেপি ভগবা ইস্যুগুলি থেকে নিজেদের শত যোজন দূরে সরিয়ে রেখেছে। বিজেপি আসলে চায় যে, হিন্দু সমাজ হয় বিজেপির অনুগত এবং নমনীয় থাকুক,- নয়তো বিজেপি-কর্তৃত্ব-বিরোধী হলে একান্তই দুর্বল থাকুক। শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ হিন্দুত্ববাদ কংগ্রেসের পক্ষে যতটা অবাঞ্ছনীয়, বিজেপি-র কাছে ততটাই পরিত্যাজ্য।
এমন দুর্বিষহ বঞ্চনা আর আঘাতের জবাবে হিন্দু হিসেবে একত্রিত হোন। আর কট্টর সনাতনী দল *একম সনাতন ভারত* দলে যোগ দিন। কারণ মোদী-র 'বিজেপি-র বিকল্প কী' প্রশ্নের একমাত্র জবাব: *একম সনাতন ভারত*।
About us - আমাদের সম্পর্কে জানুন
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সনাতন্ হিন্দু ধর্মে পবিত্র সংখ্যা ১০৮ এত মহাত্মপূর্ণ কেন...???
সনাতন্ বৈদিক হিন্দু ধর্মে, ১০৮ সংখ্যা টি অত্যন্ত পবিত্র সংখ্যা রূপে গণ্য করা হয়। কিন্তু কেন...??? কলমে :- অরিন্দম রায়। আমাদের যো...
-
লিখন: বিজিৎ প্রশান্থা সম্প্রতি এক উঁচুস্তরের দিল্লী মহলের নেতা JNU -এর এক হিন্দুবাদী প্রফেসর আনন্দ রঙ্গনাথনের কাছে নাকি এই অভিমত ব্যক্ত কর...
-
-অনুলিখন: বিজিৎ প্রশান্থা নরেন্দ্র মোদীর মন্দির বিধ্বংস করার রাজনীতির শুরু হয় সম্ভবত ২০০৮ সালে, যখন সড়ক সম্প্রসারণের দোহাই দিয়ে তার সরকার...
-
সনাতন ধর্ম এবং সভ্যতা কত পুরাতন...?? রচনা :- অরিন্দম রায়। "সনাতন বৈদিক ধর্ম ও সভ্যতা মাত্র ৫০০০ বছর পুরাতন হতে....." :- এমনটি ...
No comments:
Post a Comment