-অনুলিখন: সুমন সনাতন
ছায়া ও কায়া, জল ও শীতলতা ইত্যাদি বিষয়গুলি কখনোই একে অন্যের সাথে পৃথক ভাবে থাকতে পারে না। ঠিক তেমনই হল তথাকথিত হিন্দুবাদী দল বিজেপি ও তথাকথিত হিন্দুবাদী সংগঠন আরএসএস বা সংঘ। আরএসএস যদি এক বৃহত্তর কৃষিক্ষেত্র হয় তাহলে তার ফসল হল বিজেপি। কাজেই এই দুটি সংগঠনের ভিশন, বিচারধারা সমান্তরাল যদিও এগুলির পরিণাম হল হিন্দুবিরোধ ও হিন্দুদের সর্বনাশ।
সম্প্রতি এহেন মানিকজোড় এর মাঝে দেখা গিয়েছে দ্বিমত, তৈরি হয়েছে মতের বিরোধিতা। চলুন, আপাতদৃষ্টিতে যা দেখা যাচ্ছে সেটাই আগে আপনাকে বর্ণনা করি। 'স্বস্তিকা'- যা সংঘের একটি পত্রিকা, সেখানে রাজ্যে নানা দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত নিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
আপনারা দেখে থাকবেন যে, রাজ্য বিজেপির নেতারা এখন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারের দাবির ব্যাপারটি বর্ণপরিচয়, সহজপাঠের মত আউড়াচ্ছে। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে তাদের এখন একটাই বুলি "ভাইপোকে জেলে ভরো"। তা কয়লাচোর,গরুচোর, ত্রিপলচোর মামদোদের জেলে ভরলে একমের কিছুই এসে যায় না। পক্ষান্তরে একম সনাতন ভারত এই ব্যাপারটিকে সমর্থনই করে। কিন্তু বিজেপির নেতাদের এহেন আচরণের মাঝেই সঙ্ঘের মুখপত্রে ঠিক উল্টো দাবি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, "এটা ঠিক অনেকের কাছে মূল সমস্যা, অভিষেক কেন জেলের বাইরে? এটা অবান্তর চিন্তা। তদন্তকারীদের মতে গ্রেফতার তদন্তের একটি অংশ। পুরো তদন্ত নয়। মনে হয় এই একমুখী ভাবনা এখানকার বিরোধীদের সত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে।"
এর পর থেকেই রীতিমত দিকবিদিক শূন্য হয়েছে গেরুয়া শিবির। যে সংগঠনের আদর্শ নিয়ে বিজেপি চলে সেই আরএসএসের মত জানার পরে বিজেপির "তৃণমূল" স্তরের কর্মীরা ব্যাঙের মাথা বুঝবেন না ছাতা বুঝবেন, সে নিয়ে বিজেপির এখন মাথা দিয়ে হিমালয় ভাঙ্গার জোগাড় ।
এদিকে ওই প্রবন্ধের লেখক নির্মাল্য মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "আমার লেখা প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার পরে তা নিয়ে আমার কিছু বলা মানায় না। যা বলার পত্রিকার পক্ষেই বলা হবে।" আর স্বস্তিকা-র সহ-সম্পাদক সুকেশচন্দ্র মণ্ডলের বক্তব্য, "আমাদের একটি লেখা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। তবে তা অবান্তর। স্বস্তিকায় যে কোনও লেখার ক্ষেত্রে লেখকের মতামতের স্বাধীনতা থাকে। সেই মতোই লেখক লিখেছেন। এর সঙ্গে কোনও তদন্তকে প্রভাবিত করা বা দুর্নীতিকে সমর্থন করার প্রশ্ন নেই।"
লেখাটি নেতা থেকে বিজেপি কর্মীদের সাথে সাথে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে রীতিমত ভাইরাল । রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ও তৃণমূল থেকে আসা রাজ্য বিজেপির ফায়ারব্র্যান্ড নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করা হলেও লেখার একটি অংশে সরাসরি তাঁরই সমালোচনা করা হয়েছে বলেইবোঝা যাচ্ছে। লেখা হয়েছে, "রাজ্য জুড়ে সারা দিন কীর্তনের মতো বেজে চলেছে— পিসি-ভাইপো চোর।" শুভেন্দুর মুখে সব সময়েই এই স্লোগান শোনা যায়। একই কথা বলেন তৃণমূল থেকে আগত বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও। তবে এই নিবন্ধ প্রসঙ্গে সুকান্তের মুখারবিন্দ দিয়ে নিঃসৃত "শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রচেষ্টার" মহাবাক্যগুলি হল "স্বস্তিকা একটি স্বাধীন পত্রিকা। সেখানে এক জন লেখক তাঁর স্বাধীন মত প্রকাশ করেছেন। তা নিয়ে সাধারণ মানুষের চাওয়া বদলাবে না। আমাদের দাবিও নয়। আমরা মনে করি, তদন্তের স্বার্থে যা যা পদক্ষেপ দরকার, সব করা উচিত।"
আরএসএস এর ওই প্রবন্ধে লেখা হয়েছে, "ইডি, সিবিআই নিয়ে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর হতাশাকে তাই মান্যতা দিতেই হবে। তার মানে এই নয় যে, তদন্তকারীরা তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন বা উঁচুতলার রাজনৈতিক চাপে ভেঙে পড়েছেন। এ সব আজগুবি তত্ত্ব? অন্য নাম 'সেটিং'। সন্দেহ নেই অভিষেকবাবুর গ্রেফতার বা আটক এই মুহূর্তে রাজ্যের সবচাইতে আলোচিত বিষয়।" এর পরে এ-ও লেখা হয়েছে যে, "আমার মনে হয় আটক বা গ্রেফতারির উপর বেশি গুরুত্ব না দেওয়াটাই রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি সমীচীন।"
এত গেল আপাতদৃষ্টিতে যা দেখা যাচ্ছে তার কথা। প্রকৃতপক্ষে রাজ্য বিজেপি প্রকারান্তরে তৃণমূল প্রাক্তনীদের একটি টীম। যেখানে নেই কোনো উল্লেখ করার মতো নীতি, আদর্শ, বিচারধারা। কখন মোদী সেন্টার থেকে একটু ভুটুস কাটবেন, তারই অপেক্ষায় চাতকের বর্ষার প্রতীক্ষার মত অপেক্ষায় থাকে বিজেপি। তার উপর আরএসএস এর এহেন তৃণমূল যুবরাজ প্রীতি দেখার পর সচেতন রাজ্যবাসীর মনে কেবল একটা শব্দই ঘুরপাক খাওয়া উচিৎ "বিজেমূল "।
গঙ্গাধরই কিন্তু শক্তিমান !!! আর বাপী লাহিড়ী সম্ভবত এই দিনটার জন্যই গান টা লিখেছিলে "আমে দুধে মিশে যাবে/ আঁটি খাবে গড়াগড়ি... "
এরপর আপনি বুদ্ধিমান, সুতরাং নিজেই বাকিটা বুঝে নিন।
About us - আমাদের সম্পর্কে জানুন
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
সনাতন্ হিন্দু ধর্মে পবিত্র সংখ্যা ১০৮ এত মহাত্মপূর্ণ কেন...???
সনাতন্ বৈদিক হিন্দু ধর্মে, ১০৮ সংখ্যা টি অত্যন্ত পবিত্র সংখ্যা রূপে গণ্য করা হয়। কিন্তু কেন...??? কলমে :- অরিন্দম রায়। আমাদের যো...
-
-অনুলিখন: বিজিৎ প্রশান্থা নরেন্দ্র মোদীর মন্দির বিধ্বংস করার রাজনীতির শুরু হয় সম্ভবত ২০০৮ সালে, যখন সড়ক সম্প্রসারণের দোহাই দিয়ে তার সরকার...
-
যখন হিসারের একটা চার্চের দেওয়াল ভাঙ্গা সারা বিশ্বের ব্রেকিং নিউজ হয়, যখন কাঠুয়ার আসিফার কথা বিবিসি এক মাস ধরে সম্প্রচার করে, যখন একজন আখল...
-
বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে ইজরায়েলে বিরোধ প্রদর্শন চলছিল | একদল বেনজামিন নেতান্হুর পক্ষে আর একদল নেতান্হুর বিপক্ষে | নেতান্হু ইজরায়েলে জুডিসিয়ারী...
No comments:
Post a Comment