যখন হিসারের একটা চার্চের দেওয়াল ভাঙ্গা সারা বিশ্বের ব্রেকিং নিউজ হয়, যখন কাঠুয়ার আসিফার কথা বিবিসি এক মাস ধরে সম্প্রচার করে, যখন একজন আখলাকের মৃত্যু UNO পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যখন গত মাসে ভারতের নদীতে ভাসা লাশ আন্তর্জাতিক খবরের চ্যানেল গুলোর কাছে ভারতের ব্যর্থতার আর হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়ায়, যখন ভারতের কৃষক আন্দোলনের বিষয়ে রিয়ানা, গ্রেটা বা মিয়াখালিফারা টুইট করে, তখন কানাডার একটা ক্যাথলিক স্কুলের উঠোনে তিন থেকে পনেরো বছরের বাচ্চাদের দু'শোর বেশি গণ-কবর পাওয়া গেলেও বিবিসি থেকে শুরু করে বিশ্বের সমস্ত মিডিয়া একটা আওয়াজও করে না । আর ঠিক সেই সময়েই যদি আজতক চ্যানেল খবর চালায় হোম-যজ্ঞ করা অন্ধবিশ্বাস তাহলে আমার আপনার জন্যে কারা খবর বানাচ্ছে সেটা বুঝতে সময় লাগে না । আমরা যদি এখনো এদের খবরের চ্যানেল বলি তাহলে ক্যাথলিক চার্চের দালাল কারা ?
হ্যা, কয়েকদিন আগে কানাডার ক্যাথলিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান "ইন্ডিয়ান রেসিডেন্সিয়াল স্কুল"-এর উঠোনে ২১৫ টা বাচ্চার গণ কবর পাওয়া গেছে যারা ১৮৪০ -১৯৯০ সালের মধ্যে কানাডায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত পরিবারের সদস্য ছিল | তাদের বলপূর্বক তাদের পরিবারের কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে এই রেসিডেন্সিয়াল স্কুলে রাখা হত | আর অকথ্য অত্যাচার করা হতো |
সারা বিশ্ব এই খবর নিয়ে একটা আওয়াজও করেনি | এমনকি ভাটিকানের মহান পোপও না | সেই পোপ ফ্রান্সিস যে ২০১৫ সালের ২০শে জানুয়ারী মারিয়েটা থেকে ভাটিকান যাওয়ার আগে সাংবাদিক দের বলেছিল চার্চ বাচ্চাদের সুরক্ষিত রাখতে আর দ্বায়িত্ববান ভবিষ্যত গড়তে সর্বদা কাজ করে চলেছে, কিন্তু পাদ্রী আর চার্চের আধিকারিকদের দ্বারা চার্চের বাচ্চা আর মহিলাদের যৌন হেনস্থার কোনো প্রতিকার না করতে পেরে আমরা লজ্জিত |এমন নয় যে পোপের কষ্ট হয় না | এমন নয় যে পোপ কোনো বিষয় নিয়ে দুঃখিত বা চিন্তিত হন না | স্পেনে গিয়ে তিনি বলেন যীশুর ২০০০ বর্ষপূর্তির পর থেকে ২০ লক্ষ খ্রিস্টানদের চার্চ আর ক্রিস্চানিটি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় উনি দুঃখিত | কিন্তু যখন আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ায় ৩০০ পাদ্রী ১০০০ বাচ্চার যৌন হেনস্থার মামলা সামনে আসে তখন এই পোপ দুঃখ প্রকাশ করেন না, যীশুর কাছে প্রার্থনা করার নাটক করেন | ওই পাদ্রীদের আইনানুগ শাস্তির কথা বলেন না উল্টে যীশুর কাছে ওই বাচ্চা দের "শান্তির প্রার্থনা" করে বলেন "ওই পাদ্রীরা বাচ্চাদের ওপর অত্যাচার করেছে, ওদের অন্ধকার ঘরে বন্ধ করে রেখেছে, বাচ্চাদের কথা কেউ শুনছে না, তুমি ওদের সাহায্য করো" |
ভারতের একটা চার্চে চুরির ঘটনা ঘটলে পোপ দুঃখী হয়ে যায়, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা আমাদের প্রধানমন্ত্রী কে ফোন করে দেয় কিন্তু আয়ারল্যান্ড-এর ক্যাথলিক চার্চের থেকে যখন সামূহিক শিশু নিগ্রহের খবর আসে যাতে ম্যাগদালিন লন্ড্রির মত জঘন্য ঘটনা সামনে আসে, তখন পোপ, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি বা অন্য কোন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী প্রতিষ্ঠানের কোনো প্রতিবাদ বা সমালোচনা চোখে পড়ে না | ম্যাগদালিন লন্ড্রিতে প্রায় ৩০০০ মহিলাকে বন্দী বানিয়ে রাখা হতো চার্চের নির্দেশে, এই লন্ড্রির উঠোনে প্রায় ১৫৫ মহিলার গণ-কবর পাওয়া যায় ২০১৩ তে | এছাড়াও বেআইনি ভাবে শিশুদের কেনা বেচা করার মামলাও সামনে আসে | এই সব কিছুই ক্ষতিপূরণের ডলারে শান্ত করিয়ে দেওয়া হয় |
কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় ৪৫ শতাংশ চার্চের ওপর ওই একই মামলা সামনে আসে | অস্ট্রেলিয়ার সরকার রয়াল কমিশন বানিয়ে সেই সব মামলার তদন্ত করে | কিন্তু সত্যি সামনে আসে নি আর কোনো ফাদার, প্যাস্টর, পাদ্রীকে শাস্তি দেওয়া যায় নি | শাস্তির নামে তাদের এক চার্চ থেকে অন্য চার্চে ট্রান্সফার করা হয় মাত্র | ১৯৮০ থেকে ২০১৩ -র মধ্যে প্রায় ৫০০০ মহিলা আর শিশু নিগ্রহের মামলা সামনে আসে | স্পেনে গত পঞ্চাশ বছরে প্রায় তিন লাখ বাচ্চা বিক্রি করা হয় ডাক্তার, নার্স পাদ্রী, প্যাস্টর, নান দের একটা চক্রের দ্বারা | হাসপাতাল থেকে বাচ্ছা চুরি করে সেই বাচ্চা বিক্রি করে কয়েক লক্ষ ডলার কামিয়েছিল এই যীশু ভক্তরা, মামলা হয়েছে কিন্তু শাস্তি হয়নি | কিছুদিন আগে ভারতের তামিলনাডুর কাঞ্চিপুরম জেলার সাল্ভাক্কাম গ্রামে "দ লাইট অফ দ ব্লাইন্ড" নামক NGO-র আড়ালে এক পাদ্রী মানব অঙ্গ আর হাড়ের চোরাচালান করতে ধরা পরেছিল |
এসবে পোপের সামান্য দুঃখও হয় না | কারণ পোপ এই ফাদার, প্যাস্টর, পাদ্রীদের থেকে আলাদা কেউ নয় | হ্যা, এদের সর্দার বলা যেতে পারে | অস্ট্রেলিয়ার রয়াল কমিশনের উকিল গ্যাল ফার্নেস-এর লেখা পড়লে সেটাই মনে হয় |
হিন্দুদের একপ্রকার সব কিছুকেই কুসংস্কার, নারীবিদ্বেষী প্রমান করতে ব্যস্ত এই খ্রিস্টানদের চার্চে একসময় হোয়াইট উইচ আর ব্ল্যাক উইচ এর চলন ছিল | হোয়াইট উইচ মানে যারা ফাদার, প্যাস্টর, পাদ্রীর ওজন নিজের ওপর নিতে রাজি আর ব্ল্যাক উইচ মানে যারা রাজি নয় | তাদের জিনের কাছে দিয়ে দেওয়া হতো জ্যান্ত জ্বালিয়ে মারার জন্যে | একটা ছবি দিয়েছি | এই ছবি নিয়ে বেশি পড়াশোনা করতে গিয়ে একটা সাইটে গিয়ে পৌঁছতে দেখলাম প্রবেশ শুধু মাত্র উইচ মেম্বারদের জন্যে |
আমাদের হোমযজ্ঞকে কুসংস্কার বলা এই ক্রিস্টান বুদ্ধিজীবীদের পীঠস্থান কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি জিনদের আধুনিক চিকিত্সায় কিভাবে ব্যবহার করা যায় তার জন্য আর্টিকল ছাপে |
আজ ভারতে ঝোলা ছাপ খ্রিস্টানরা রাস্তার মোড়-এ দাঁড়িয়ে বাইবেল বিলি করছে, যীশু কত দয়াবান তার মহিমা প্রচার করছে | স্কুলের বাইরে বাচ্চাদের ক্রস আর যীশুর কমিক্স বিক্রি করা হচ্ছে, ম্যাজিক চিকিত্সা করার হাস্যকর ভিডিও দিয়ে কিছু আকাট মুর্খকে খ্রিস্টান বানানো হচ্ছে, রাখি সাবন্ত-এর মতো কিছু দুশ্চরিত্র লম্পট বলছে তার শরীরে যীশুর রক্ত বইছে তাই তার করোনা হবে না, এক বস্তা চালের পরিবর্তে প্রকাশ্যে ধর্মান্তকরণের ব্যবসা চলছে, বেকারদের রোজকার করার জন্য মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর স্টাইলে ধর্ম বদলানোর ব্যবসা চলছে আর আমরা চুপ করে দেখছি | কনভেন্ট-এ পড়তে বা বাড়ির বাচ্চাদের পরাতে পারলে এখনকার বাবা মা ধন্য হয়ে যায় | ২৫শে ডিসেম্বর মাথায় সং টুপি না পরলে আর কেক না খেলে জীবনটাই ব্যর্থ মনে করে দিনমজুর থেকে কোটিপতি সবাই |
সারা বিশ্বে যখন খ্রিস্টানরা চার্চ, ফাদার, পাদ্রী, প্যাস্টরদের অত্যাচারের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিরোধ করছে, "আমাদের চার্চ থেকে আমাদের বাঁচাও" লেখা পোস্টার নিয়ে মিছিল করছে, তখন আমাদের দেশে ক্রিপ্তোক্রিশ্চানরা একবস্তা চাল বা পাঞ্জাবের মত রাজ্যে এক বস্তা গম দিয়ে গরীব মানুষগুলোর গলায় যীশু ঝুলিয়ে দিচ্ছে আর চৌবাচ্ছার জলে টিপে ধরে হালেলুইয়া করে দিচ্ছে | অতি সত্তর যদি এই মহামারীর বিহিত না করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের আশেপাশেও ঐরকম পোস্টার নিয়ে দাঁড়ানোর লোক কম পড়বে না |
অনিন্দ্য নন্দী, রাজ্য সভাপতি, একম সনাতন ভারত দল, পশ্চিমবঙ্গ
No comments:
Post a Comment