Monday, September 25, 2023

"রাধা" চরিত্রের উপস্থাপনা সম্পূর্ণ এক রাজনৈতিক চক্রান্ত।

 
রচনা :- অরিন্দম রায়
যদি প্রকৃত হিন্দুত্ববাদী হন, 
সনির্বন্ধ অনুরোধ, 
এখন থেকে এই ছবির দুর্ধর্ষ বীর এবং বিশাল রাজনীতিবিদ যুগপুরুষ "এই শ্রীকৃষ্ণের" পূজা করুন.............
এবং অনান্যদের করতেও উৎসাহিত করুন..........। 
যা তিনি নন, যা তিনি কোনোদিনই ছিলেন না, তার সেই ছবিকে পূজা করার মানে একজন প্রকৃত হিন্দু হয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁকে অপমান করা..............।
Please, এত বড় একজন মহামানব কে রাধার ছবির পাশে দাঁড় করিয়ে, হাতে বাঁশি ধরিয়ে দিয়ে, পায়ে নূপুর পরিয়ে দিয়ে একজন "ব্যভিচারি পুরুষ" রূপে আর পূজা করবেন না..............। 
সকলকে বোঝান এবং এটিকে এক জন-আন্দোলনের রূপ দিন........।
☆রাধার নামটি আসিল কোথা হইতে.....???☆

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর "কৃষ্ণচরিত্র" গ্রন্থে প্রশ্ন করেছেন- এই রাধা আসিলেন কোথা হইতে, আর "আমি" আজকে প্রশ্ন করছি- রাধার নামটি আসিল কোথা হইতে ?

শ্রীকৃষ্ণের যে প্রামাণ্য জীবনী- "হরিবংশ" এবং "মহাভারত", সেখানে রাধার নামের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি হরিবংশ এবং মহাভারত একে অপরের পরিপূরক গ্রন্থ, শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে যে তথ্য হরিবংশে আছে, সেটা মহাভারতে নেই, আবার মহাভারতে যে তথ্য আছে, সেটা হরিবংশে নেই। হরিবংশে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম থেকে বাল্য অবস্থার সবকিছু আছে, আর মহাভারতে আছে তার বাল্য ও কৈশোরের পরবর্তী ঘটনাগুলো। প্রশ্নটি আমার নয় সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর।

তিনি তাঁর সুদীর্ঘ 15 বছরের Research এর পর যে জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন যার নাম হলো, "কৃষ্ণচরিত্র"। প্রথম প্রকাশনা ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে।

এই গ্রন্থটিতে ঠিক এই প্রশ্নটিই তিনি করেছিলেন।
গ্রন্থটি online এ বাংলাতে Available আছে। পড়ে দেখুন। Link :-
https://advocatetanmoy.com/2020/04/25/krishna-charitra-by-bankim-chandra
আমাদের পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণের জীবন কে রাধা নামক এক ঐতিহাসিক অস্তিত্ব বিহীন নারীর সঙ্গে এবং 16 হাজার 108 জন গোপিনীদের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের চরিত্র কে Polygamous বা ব্যভিচারি বানানোর যে, ই#স#লা#মি#ক শাসকদের যে কতো বড় চক্রান্ত ছিলো, তা জানলে আজকের প্রজন্মের যুবাদের রীতিমতো চমকে উঠতে হবে.......!!

রাধা-কৃষ্ণের প্রেম, সত্য না কল্পকাহিনী.....???
মূল মহাভারত, চার বেদ, ১০৮টি উপনিষদ, গীতার ১৮টি অধ্যায়ের ৭০০ শ্লোক এবং বিষ্ণু পুরান- কোথাও
রাধার কোনো উল্লেখ নেই.........। 
এই সমস্ত বিষয়,
বিচার-বিশ্লেষণ করে, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার ‍“কৃষ্ণ চরিত্র” গ্রন্থে এক বিশাল প্রশ্ন উত্থাপন
করে বলেছেন,
‍“তাহা হইলে, এই রাধা আসিলেন কোথা হইতে.....???”

রাধার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মহাপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের
চরিত্রে যথেষ্ট কালিমা লেপন করা হয়। শ্রীকৃষ্ণের চরিত্র কে ই#স#লা#মি#ক শাসকরা সুপরিকল্পিত ভাবে ষড়যন্ত্র করে একটি "পলিগেমাস" বা ব্যভিচারি চরিত্রে রূপান্তরিত করে।

যাতে করে তাদের ই#স#লা#ম# মজহব্ এর দ্বারা সমর্থিত মু#স#ল#মা#ন পুরুষের বহু বিবাহ প্রথা এবং পুরুষ এর "পলিগ্যামাস" বা ব্যভিচারি চরিত্র কে তাদের মজহব্ এর আসমানি গ্রন্থের মাধ্যমে যে ভয়ংকর ভাবে সমর্থন করা হয়েছে, সেই বিষয়টি কে ভারতীয় হিন্দু জনমানসেও শ্রী কৃষ্ণ নামক মহাপুরুষের চরিত্রের সঙ্গে জড়িয়ে দিয়ে মু#স#ল#মা#ন#দে#র  ব্যভিচারি জীবন যাত্রাকে এবং তাদের ই#স#লা#ম নামক মজহব্ এর গ্রহণযোগ্যতার প্রেক্ষাপট্ কে তৈরী করা।

এর জন্যে তৎকালীন মু#স#ল#মা#ন শাসকরা কিছু অর্থ লোলুপ হিন্দু পন্ডিতদের মাধ্যমে এবং কিছুটা ভয় দেখিয়ে পুরানের মধ্যে এমন কিছু কাহিনী কে শ্রীকৃষ্ণের সমন্ধে ঢুকিয়ে দিয়েছে যা পরবর্তী প্রজন্ম একেই সত্য বলে মেনে নিয়েছে। 

একটি কথা সর্বদা মনে রাখবেন, "চন্দ্র বংশীয় রাজা শ্রী রাম" এবং "যাদব বংশোদ্ভূত দ্বারকা রাজ শ্রীকৃষ্ণ" দুজনেই ছিলেন ঐতিহাসিক মহাপুরুষ।

শ্রীকৃষ্ণের জন্ম :- জন্ম তারিখ: 18ই জুলাই, 3,228 খ্রিস্টপূর্বাব্দ
মাস :- শ্রাবণ মাস, 
দিন :- অষ্টমী তিথি,
নক্ষত্র :- রোহিণী নক্ষত্রে জন্ম,
দিন :- বুধবার,
সময় :- 00:00 A.M.(রাত বারোটা)
শ্রী কৃষ্ণ 125 বছর, 08(৮) মাস এবং 07 দিন বেঁচে ছিলেন।

মহাপ্রয়ান এর তারিখ :- 
18ই ফেব্রুয়ারি 3102 খ্রিস্টপূর্বাব্দ।

মহাভারতের যুদ্ধ :-

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হয়েছিল 8(৮)ই ডিসেম্বর 3139 খ্রিস্টপূর্বাব্দ এবং শেষ হয় 25শে ডিসেম্বর, 3,139 খ্রিস্টপূর্বাব্দ।

এর পাশাপাশি আমাদের চতুর্থ প্রকার বেদ, উপনিষদ বা বেদান্ত এবং গীতা হলো ঐতিহাসিক প্রামাণ্য গ্রন্থ। কিন্তু সেখানে "পুরান" হলো সম্পূর্ণ মন গড়ন "কল্পকাহিনী"।

কোনো নারী যদি কোনো ব্যক্তির জীবনে থেকে থাকে, আর সেই ব্যক্তিকে নিয়ে যদি একাধিক গ্রন্থ রচিত হয়ে থাকে, তাহলে বিভিন্ন গ্রন্থে সেই নারীর কাহিনী থাকবে, এক কথায় ঐ নারীকে নিয়ে ঐ ব্যক্তির জীবনে অনেক বাস্তব ঘটনা থাকবে, যেটা প্রমাণ করবে যে ঐ ব্যক্তির জীবনে ঐ নারীর অস্তিত্ব ছিলো। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধাকে নিয়ে এমন কোনো ঘটনা বাস্তবিক আকারে নেই, যেটা প্রমাণ করে যে শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধা নামক কোনো নারীর অস্তিত্ব ছিলো, যার সাথে  শ্রীকৃষ্ণের প্রেম ভালোবাসা বা যৌনতার সম্পর্ক ছিলো।

শ্রীকৃষ্ণের মা ছিল দুইজন। জন্মদাত্রী দেবকী, আর পালক মাতা যশোদা। দেবকীর ভাই কংস, যাকে শ্রীকৃষ্ণের নিজে হত্যা করেন। কংসের যেহেতু অন্য কোন ভাই ছিল না, সেহেতু এই দিক থেকে শ্রীকৃষ্ণের অন্য কোন মামা থাকাও সম্ভব নয়। বাকি রইলো রাধার কথিত স্বামী আয়ান ঘোষ যে নাকি যশোদার ভাই। সেই ব্যাপারে, শ্রীমদ্ভাগবত, যেটা শ্রীকৃষ্ণের প্রামান্য জীবনী এবং মহাভারত, যাতে কৃষ্ণের জীবনের সমস্ত কাহিনীই লিপিবদ্ধ আছে, এই দুটো গ্রন্থে কোন তথ্য আছে কি....???

না, নেই.......।।

তাহলে আপনারা কিভাবে বলছেন যে- রাধা, শ্রীকৃষ্ণের মামী....? 

শ্রীকৃষ্ণের জন্মদাত্রী মাতা দেবকীর একটিই বড় ভাই ছিলো তার নাম কংস। কিন্তু আর কোনো ভাই আয়ান ঘোষের নাম প্রামাণ্য কোনো  গ্রন্থে পাওয়াই যায় না। 

তাহলে মামাই যখন নেই, তাহলে রাধা নামক মামী এলো কোথার থেকে....??? 

আশা করি বোঝাতে পারলাম।

আর একটি কথা, রাধার স্বামী হিসেবে যাকে বলা হয়, সেই আয়ান ঘোষ যে একটা কাল্পনিক চরিত্র, তার অন্যতম প্রমান হলো তার "ঘোষ" পদবী; এই ঘোষ পদবী মধ্যযুগের উৎপত্তি, যখন ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে এই আজগুবি কাহিনীগুলি লেখা হয়। কৃষ্ণের সময় ঘোষ পদবী বলে কিছু ছিল না। কারণ, কৃষ্ণের যুগে কোন পুরুষের নামের সাথে ঘোষ পদবী যোগ হতো না, যদিও বৃন্দাবনের সবার পেশাই ছিল বর্তমানের ঘোষ'দের মতোই।

হিন্দু ধর্মকে সাংস্কৃতিকভাবে ধ্বংস করার জন্য ভারতে মু#স#ল#মা#ন শাসন শুরু হওয়ার পর, বহু পুরাণ রচয়িতা "বেদব্যাসের" নাম ব্যবহার করে তাদের রচনা করা "ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ"(12 শতাব্দীতে লেখা) এবং তাতে প্রথম রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের আবির্ভাব ঘটানো হয়। মু#স#ল#মা#ন# শাসকদের এই কৌশল এবং চক্রান্ত বুঝতে না পেরে, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের কাহিনী অবলম্বন করে পরবর্তী কালে কবি জয়দেব সংস্কৃতে রচনা করেন "গীত গোবিন্দ" এবং বড়ু চণ্ডীদাস বাংলায় রচনা করেন "শ্রীকৃষ্ণীর্তন কাব্য" এবং তারপর চৈতন্যদেব এর আগে এবং পরেও লেখা হয়, "বৈষ্ণব পদাবলী"। এই কাব্য গ্রন্থ গুলির কারণে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম হিন্দুদের মাথায় শিকড় গেঁড়ে বসে যায়।

শ্রীকৃষ্ণের বহুবিবাহ সম্পর্কে প্রচলিত গল্প এই যে, শ্রীকৃষ্ণের মহিষী বা স্ত্রী ছিলেন ৮ জন এবং আসামের রাজা নরকাসুরের অন্তঃপুর থেকে উদ্ধার করা স্ত্রীর সংখ্যা ছিলো ১৬,১০০ জন; সব মিলিয়ে শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রীর সংখ্যা ১৬,১০৮।

এই কথাটা শুনেলেই তো প্রথমত যে কোনো হিন্দুর মাথা হেঁট হয়ে যায়। হিন্দু ধর্মের প্রধান পুরুষ শ্রীকৃষ্ণকে নিয়ে তাদের আর কোনো গর্ব করার জায়গা থাকে না। আর এই তথ্যকে সামনে এনে মু#স#ল#মা#ন#রা#ও যুক্তি দেখায় যে, শ্রীকৃষ্ণ যদি ১৬,১০৮ টি বিয়ে করতে , তাহলে আমরা চার খানা বিয়ে করতে পারবো না কেনো ? আর প্রকৃত তথ্য না জেনে, এইসব প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বা শ্রীকৃষ্ণের বহু বিবাহের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে আমরা হিন্দুরাও নানা রকম ন্যায় ও যুক্তি সঙ্গত গল্পের অবতারণা করার চেষ্টা করে থাকি, বাস্তবে যার কোনো প্রয়োজনই নেই; কারণ, ☆শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী ছিলো মাত্র এক জন, তিনি রুক্মিনী।☆ অপর ১৬,১০৭ জন সম্পর্কে যে গল্প, তা যে ডাহা মিথ্যা, তা এই পোস্ট পড়ার পর নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন..........।

এই ভাগবতেই আছে, রাসের নামে কৃষ্ণের যৌনলীলার কাহিনী, কিন্তু রাসের সময় কৃষ্ণের বয়স ছিলো মাত্র ৭ বা ৮ বছর, এই বয়সী একটি শিশু কিভাবে যুবতী নারীদের সাথে যৌনক্রিয়া করতে পারে, বা তার মাথায় এই ধরণের চিন্তা আসতে পারে ? 

তাই বিভিন্ন গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণের জীবনে যেসব যৌনক্রিয়া বা লাম্পট্যের ঘটনা আছে, সেগুলো যে সত্য নয়, এটা খুব সহজেই অনুমান করা যায়। এসবই সনাতনধর্ম ও কৃষ্ণ বিরোধী ই#স#লা#মি#ক শাসনকালে এক মিথ্যা প্রচারণার কাহিনী। 

রাধার অস্তিত্ব বা কৃষ্ণের জীবনে  প্রমাণ করবার জন্যে যেসব রেফারেন্স গুলো সব থেকে ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর মধ্যে একটি হলো- নারায়ণ গীতি স্তোত্রের ১০ নং শ্লোক, সেখানে বলা হয়েছে :-

"রাধাধর মধু রসিকা রজনী-কর-কূল-তিলকাঃ।
নারায়ণ নারায়ণ জয় গোবিন্দ হরে।
নারায়ণ নারায়ণ জয় গোপাল হরে।"

এটা কোনো সংস্কৃত শ্লোক নয়, এটি সম্পূর্ণ বাংলা শ্লোক, যা বৈষ্ণবদের দ্বারা রচিত। 

যে বৈষ্ণবদের কোনো কথাকে বিশ্বাস করা যায় না, এরা সনাতন ধর্মের সমস্ত সিস্টেমকে ধ্বংস করেছে, আজও করে চলেছে........।

বিশেষজ্ঞদের মতে "ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ" কোনো ভাবেই ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের আগের রচিত নয়।

রাধা-কৃষ্ণের প্রেম সম্পর্কে যা বলা হয়, তা যে 100% পার্সেন্ট মিথ্যা, তার প্রমান স্বরূপ আর একটি মাত্র "ক্লু" দিই। প্রচলিত মত অনুসারে, রাধার সাথে শ্রীকৃষ্ণ প্রেম করেছে যৌবনকালে এবং তা বৃন্দাবনে। কিন্তু হরিবংশ ও মহাভারত থেকে জানা যাচ্ছে যে, ১০ বছর ২ মাস বয়সে শ্রীকৃষ্ণ, কংসকে হত্যা করে ধর্ম রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য বৃন্দাবন ছেড়ে মথুরায় যান এবং আরো পরবর্তী কালে দ্বারকায় এবং তারপর শ্রীকৃষ্ণের কোনদিনই বৃন্দাবনে ফিরে যান নি, তাহলে যুবক শ্রীকৃষ্ণের সাথে যুবতী রাধা প্রেম হলো কখন এবং কোথায়........??? 

চৈতন্যপন্থীরা তো বরাবরই মূর্খ, এরা প্রকৃত সত্যকে ধরতে পারে না, আর প্রকৃত সত্যকে বোঝেও না। এজন্যই তো এরা 'হরিবাসর' বা 'হরিসভার' নামে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম সম্পর্কিত লীলাকীর্তনের প্রচার করে হিন্দুসমাজটাকে রসাতলে নিয়ে গেছে এবং যাচ্ছেও..........। এদের হাতে রচিত গ্রন্থ দ্বারা আমার এবং আপনার মতো সাধারণ সনাতনী হিন্দুরা 
শ্রীকৃষ্ণের জীবনে রাধার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার চেষ্টা করে চলেছি বা অনান্যরাও  করে চলেছেন। 
এই ৮০০ বছরের ই#স#লা#মি#ক চক্রান্তের প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা কি আদৌ আছে আর যদি থাকেও তাহলে সেটি যে কতটুকু নিরপেক্ষ, সেটা কি আমরা কখনো বিশ্লেষণ  করে দেখেছি........????

শ্রীকৃষ্ণের মতো একজন দুর্ধর্ষ পলিটিশিয়ান এবং যোদ্ধা যাকে ঘিরে তৎকালীন ভারতবর্ষের সমস্ত রাজনীতি আবর্তিত হতো। যিনি কিনা মহাভারতের যুদ্ধের পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ব দান করেছিলেন কোনো প্রকার অস্ত্র ধারন না করেই শুধু মাত্র অর্জুনের রথের সারথি হয়ে। যার তীক্ষ্ম বুদ্ধির সামনে বিশাল কৌরব বাহিনী এবং পিতামহ ভীষ্ম, দ্রৌনাচার্য, কৃপাচার্য, অশ্বথমা, কর্ন, শকুনি এবং বহুবিধ তৎকালীন ভারত বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বগন খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল। এহেন একজন বিশ্ব মানের রাষ্ট্র নেতা, তিনি বৃন্দাবনে বাঁশি হাতে শুধু মাত্র রাধার সঙ্গেই নয় ১৮ হাজার গোপীনেদের সাথে প্রেমলীলাতে মগ্ন, এমন এক প্রেমিক পুরুষটি হটাৎ করে এক দুর্ধর্ষ যোদ্ধা এবং বিশাল এক পলিটিশিয়ানে রূপান্তরিত হয়ে যায়, এমনটি হয় কখনো......??? 

মথুরার অত্যাচারী শাসক কংস কে হত্যা করে মথুরার রাজ সিংহাসনে সুশাসক হয়ে শ্রীকৃষ্ণ বসেছিলেন এবং কংসের শ্বশুর জরাসন্ধ কে বার বার যুদ্ধে পরাজিত করেছেন আবার অন্যদিকে পান্ডব ও কৌরবদের রাজনৈতিক সংকটে একজন মিডিয়েটর হয়ে ক্রমাগত সমস্যাটা মেটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন ও পরিশেষে ১৮ দিনে বিশাল যুদ্ধে তীব্র বাস্তব বুদ্ধির দ্বারা পান্ডবদের জিতিয়ে নিয়ে বেরিয়ে আসছেন এমন দুটি ১৮০ ডিগ্রি সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী চরিত্র কোনো ভাবেই তৎকালীন ভারতবর্ষের এমন একজন জনপ্রিয় রাষ্ট্র নায়ক হয় উঠতে পারেন না.......। 
যাঁকে তাঁর অতুলনীয় নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা, যুদ্ধ নীতি এবং  সুশাসক হবার কারনে ভারতের  জনগন পরবর্তী কালে তাঁকে জীবন্ত ঈশ্বর বানিয়ে দিচ্ছে।
এই ৫ হাজার বছরে ভারতীয় জনগোষ্ঠী প্রায় ভুলেই গেছে তাঁরও আপনার আমার মতো জন্মগ্রহণ এর একটি তারিখ আছে যা আমি আগেই বলেছি এবং আবারও 
বলছি :- জন্ম তারিখ: 18ই জুলাই, 3,228 খ্রিস্টপূর্বাব্দ
মাস :- শ্রাবণ মাস, 
দিন :- অষ্টমী তিথি,
নক্ষত্র :- রোহিণী নক্ষত্রে জন্ম,
দিন :- বুধবার,
সময় :- 00:00 A.M.(রাত বারোটা)
শ্রী কৃষ্ণ 125 বছর, 08(৮) মাস এবং 07 দিন বেঁচে ছিলেন।

মহাপ্রয়ান এর তারিখ :- 
18ই ফেব্রুয়ারি 3102 খ্রিস্টপূর্বাব্দ।

কৃষ্ণের জীবনে রাধা যদি এত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো বা গুরুত্বপূর্ণ হতো এবং রাধাকে পূজা না করলে যদি শ্রীকৃষ্ণের পূজার অধিকার না থাকতো, তাহলে কি শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে গীতায় এই উপদেশগুলো অবশ্যই  দিতেন না..........??? 

আর রাধার পূজা ব্যতীত শ্রীকৃষ্ণের পূজা ফলবান না হলে শ্রীকৃষ্ণ পরমেশ্বর নয়, রাধাই পরমেশ্বরী হয়; কিন্তু রাধার পরমেশ্বর হওয়ার পেছনে সনাতন ধর্মের প্রামান্য কোনো গ্রন্থে কি তার কোনো রেফারেন্স আছে........??? 

না, নেই....................। 

শুধু ভাগবতের এই শ্লোকটি নয়, সনাতন ধর্মীয় যেসব গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণের পাশে রাধার অস্তিত্বকে প্রমাণ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে, সেসবই যে চৈতন্যপন্থী বৈষ্ণবদের কারসাজি।

না বুঝে পুরাণকে যেহেতু আমরা হিন্দুরা- বেদ, গীতার পরেই স্থান দিয়ে এসেছি, সেহেতু পুরাণে উল্লিখিত এই সব ঘটনাকে অস্বীকার করার ক্ষমতা আমাদের হিন্দুদের ছিলো না, আর পুরাণের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো জ্ঞানী লোকও খুব কমই ছিলো, তাই এই ঘটনাগুলো ডালপালা মেলে "কৃষ্ণ চরিত্রকে" হাজার হাজার বছর ধরে কলুষিত করেছে এবং হিন্দু সমাজের ধ্বংসের কারণ হয়েছে।

মূল আলোচনার শেষে ভাগবত পুরাণ সম্পর্কে কিছু বলা দরকার, তাহলে বুঝতে পারবেন যে ভাগবত পুরাণ কী জিনিস, আর এই ভাগবত পুরাণের উদ্দেশ্যটা কী ?

বাংলায় দুই ধরণের ভাগবত পুরাণ পাওয়া যায়, একটা হলো সুবোধচন্দ্রের ভাগবত, অন্যটা বেনী মাধব শীলের ভাগবত। দুই ভাগবতের কাহিনী মোটামুটি একই। কিন্তু সুবোধ চন্দ্রের ভাগবতে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। মাঝে মাঝে এমন অশ্লীল যে, তা কাউকে পড়ে শোনানো যায় না এবং নিজে পড়লেও সেক্স স্টোরি পড়ার ফিলিংস পাওয়া যায়।

সুবোধ চন্দ্রের ভাগবতে কৃষ্ণের রাসলীলা একটা সেক্স পার্টি, যেখানে নয় লক্ষ পুরুষ এবং নয় লক্ষ নারী নগ্ন হয়ে একত্রে কামলীলায় মেতে উঠে। এর মধ্যে    
শ্রীকৃষ্ণও আছেন। 

আমি ভেবে অবাক হই যে, শত শত নয়, হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দুরা এসব গো গ্রাসে গিলে আসছে, আর কেউ এর প্রতিবাদ করে বলে নি যে, না, শ্রীকৃষ্ণের চরিত্র এমন হতেই পারে না; এমন কি কেউ এমন প্রশ্নও তুলে নি যে, ৭/৮ বছর বয়সী একজন বালকের পক্ষে এই রকম যৌন সম্পর্কিত ব্যাপারে জড়ানো কিভাবে সম্ভব ? এর বিপরীতে সবাই সরল বিশ্বাসে ভাগবত পুরাণের কাহিনীকে বিশ্বাস করে এসেছে এবং হিন্দু সমাজকে দিনের পর দিন রসাতলে নিয়ে গেছে।

এমন ভাগবতকে আমরা হিন্দুরা ধর্ম পুস্তক জ্ঞান করে পূজা করে আসছি, হিন্দু ধর্ম ও সমাজের পতন কি আর এমনি এমনি ?

যা হোক, কৃষ্ণের ষোল হাজার একশ স্ত্রীর কাহিনী এই সব ভাগবতের মাধ্যমেই লোক সমাজে প্রচারিত, যে ভাগবতের উদ্দেশ্য হলো "কৃষ্ণ চরিত্রকে" মহান করে তোলা নয়, তাকে ছোট করা; আর যারা ভাগবতকে ধর্ম পুস্তক মনে করে তাদের পক্ষে এসব ঘটনাকে অস্বীকার করার কোনো উপায়ও থাকে না। কিন্তু হিন্দু ধর্ম বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়ে, কৃষ্ণের তথাকথিত সেই ষোল হাজার একশ স্ত্রীর ঘটনাকে গ্রহনযোগ্য করে তোলার জন্য আমরা নানারকম ব্যাখ্যা হাজির করার চেষ্টা করে যুক্তি দিই। কিন্তু প্রকৃত সত্য জানলে এই ধরণের কোনো যুক্তি দেবার প্রয়োজন ই পড়বে না, সেই সত্যই আজ তুলে ধরলাম আজ আপনাদের সম্মুখে।

শ্রীকৃষ্ণের জীবনে যে এই ধরণের কোনো ঘটনা, কখনোই ঘটে নি, তার আরেকটা প্রমাণ হলো- মহাভারতে এই ঘটনার কোনো উল্লেখ নেই, যেমন উল্লেখ নেই রাধার। যদি কৃষ্ণ এই ধরণের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতো, ☆●তাহলে যুধিষ্ঠিরের রাজসূয় যজ্ঞের সময়, সেখানে উপস্থিত শিশুপাল, যে ছিলো কৃষ্ণের প্রধান শত্রু ও সমালোচক, সে কৃষ্ণ নিন্দার সময় এই ষোলহাজার একশ মেয়ের ঘটনার কথা অবশ্যই উল্লেখ করতো, কিন্তু শিশুপালও তা উল্লেখ করে নি, যেমন শিশুপাল উল্লেখ করে নি রাধার কথাও। কারণ, কৃষ্ণের জীবনে রাধা বলে যেমন কেউ ছিলোই না, তেমনি তার জীবনে ষোল হাজার একশ মেয়েকে উদ্ধার ও বিয়ে করার ঘটনাও ঘটে নি।●☆

☆শ্রীকৃষ্ণের জীবনচরিতে রুক্মিনী ভিন্ন অন্য কোনো পত্নীর কার্যক্রম দেখা যায় 
না।☆
☆প্রদুম্ন ছাড়া অন্য কোনো পুত্রের নাম বা তার কাজের কোনো কিছুর উল্লেখ শুধু মহাভারতেই নয়, অন্য কোনো পুরাণেও উল্লেখ নেই কেনো......???☆
☆প্রদুম্নের মা রুক্মিনীই ছিলো কৃষ্ণের একমাত্র স্ত্রী।☆

তাই, আবারও নিবেদন জানাচ্ছি,  একজন সত্যিকারের হিন্দুত্ববাদী হিসাবে, 
এখন থেকে এই  দুর্ধর্ষ বীর এবং বিশাল রাজনীতিবিদ যুগপুরুষ এই শ্রীকৃষ্ণের পূজা করুন.............
এবং অনান্যদের করতেও উৎসাহিত করুন..........। 
যা তিনি নন, যা তিনি কোনোদিনই ছিলেন না, তার সেই "রাধার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অবৈধ ছবিকে" পূজা করার করার মানে একজন প্রকৃত হিন্দু হয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁকে অপমান করা..............।
Please, এত বড় একজন মহামানব কে রাধার ছবির পাশে দাঁড় করিয়ে, হাতে বাঁশি ধরিয়ে দিয়ে, পায়ে নূপুর পরিয়ে দিয়ে একজন "ব্যভিচারি পুরুষ" রূপে আর পূজা করবেন না............। 
সকলকে বোঝান এবং এটিকে এক জন-আন্দোলনের রূপ দিন...........

No comments:

Post a Comment

সনাতন্ হিন্দু ধর্মে পবিত্র সংখ্যা ১০৮ এত মহাত্মপূর্ণ কেন...???

সনাতন্ বৈদিক হিন্দু ধর্মে, ১০৮ সংখ্যা টি অত্যন্ত পবিত্র সংখ্যা রূপে গণ্য করা হয়। কিন্তু কেন...??? কলমে :- অরিন্দম রায়। আমাদের যো...