Monday, September 25, 2023

কখনো ভুলেও শুভ মহালয়া লিখবেন না।

☆মহালয়া ☆

রচনা :- অরিন্দম রায়।
রাজ্য মিডিয়া,
একম্ সনাতন্ ভারত্ দল্,
পশ্চিমবঙ্গ।

এই বছর মহালয়া পড়েছে 14ই অক্টোবর 2023.

মা দুর্গার মুখের ছবি দিয়ে 'শুভ মহালয়া' লিখে কত মেসেজ আসবে এক ফোন থেকে আরেক ফোনে। 
আমরা অনেকেই জানি না, মহালয়ের সাথে দুর্গাপূজার কোন সম্পর্কই নেই। 
হয়তো অনেকে বলবেন মহালয়া মানেই তো দেবীর আগমন। অর্থাৎ দূর্গা পুজা শুরু।

মহালয়ার সঙ্গে দুর্গাপূজোর আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। যারা মা দুর্গা'র ছবির সঙ্গে 'মহালয়া' লিখছেন অথবা শুভ মহালয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, তাঁরা নিজেরাও জানেন না সনাতন্  হিন্দু শাস্ত্র মতে কত বড় ভুল কাজ তাঁরা করছেন....।

পিতৃপক্ষের শেষক্ষণ ও মাতৃপক্ষের সূচনাকালের সময়কেই মহালয়া বলা হয়। মহান কিংবা মহত্বের আলয় (আশ্রয়) থেকেই এই শব্দের উৎপত্তি। 
সনাতন ধর্ম অনুযায়ী, এই দিনে প্রয়াত বিদেহী আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, প্রয়াত বিদেহী আত্মাদের যে মহা সমাবেশ হয় তাকেই মহালয়া বলা হয়ে থাকে।

অনেকে বলেন রেডিওতে মহালয়া শুনেছিলেন..? 
ওটা কিন্তু মোটেই মহালয়া নয়। 
ওটা "মহিষাসুরমর্দিনী" নামের একটি অনুষ্ঠান মাত্র। এর সঙ্গেও মহালয়া'র কোনো সম্পর্কই নেই। এই দিনে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার হয়, এই পর্যন্তই।

●মহাভারতেও এই ক্ষণের উল্লেখ পাওয়া যায়।● ☆মহাভারত হতে জানতে পারি, মৃত্যুর পর কর্ণের আত্মা পরলোকে গমন করলে তাঁকে খাদ্য হিসেবে স্বর্ণ ও রত্ন দেওয়া হয়েছিলো। কর্ণ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তাঁকে বলা হয়, তিনি সারা জীবন স্বর্ণ ও রত্ন দান করেছেন, কিন্তু প্রয়াত পিতৃগণের উদ্দেশ্যে কখনও খাদ্য বা পানীয় দান করেননি। তাই স্বর্গে খাদ্য হিসেবে তাঁকে সোনাই দেওয়া হয়েছে। বিমর্ষ কর্ণ বলেন, তাঁর পিতৃপুরুষ কারা সেটা তো তিনি মৃত্যুর মাত্র একদিন আগেই জানতে পেরেছেন। তার দোষ কোথায়...!!! 
যমরাজ তখন বোঝেন, সত্যিই তো, এতে কর্ণের কোনো দোষ নেই। এই কারণে কর্ণকে পক্ষকালের জন্য(ষোলো দিনের জন্য) আবারও মর্ত্যে ফিরে এসে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্ন ও জল প্রদান করার অনুমতি দেওয়া হয়.....!!!!☆ 
এই পক্ষ কালই "পিতৃপক্ষ" নামে পরিচিত হয়। আর সেই থেকেই হিন্দুদের মধ্যে "তর্পণের" প্রথা চালু হয়........।। 

তিথিটি শুভ কিংবা অশুভ তা বিচারের ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে তর্পণ শব্দটির ব্যুৎপত্তি হয়েছে "তৃপ" ধাতুর থেকে। তৃপ + অনট, অর্থাৎ "তৃপ্তিসাধন", অথাৎ বিদেহী আত্মার তৃপ্তিসাধন করা। 

মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে উত্তরায়ণের সময়কালে মৃত্যু বরণ করতে অর্জুনের হাতে শরশয্যায় শায়িত ভীষ্ম এই তিথিটির অপেক্ষা করতে থাকেন। 
তাই এই তিথির গুরুত্ব, শুধু সনাতন ধর্ম মতে তা নয়, পুরাণ ও শাস্ত্র মতেও এর গুরুত্ব অপরিসীম।

●পারলৌকিক ক্রিয়াকর্মের তিথি হিসেবে নির্দিষ্ট হওয়ায় একে 'শুভ' বলতে নেই।●
পিতৃপক্ষ পূর্বপূরুষের তর্পণাদির জন্য প্রশস্ত এক বিশেষ পক্ষ। এই পক্ষ "পিতৃপক্ষ", "ষোলা শ্রাদ্ধ", কা"নাগাত", "জিতিয়া", "মহালয়া পক্ষ" ও "অপরপক্ষ" নামেও পরিচিত। সনাতনী ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী, যেহেতু পিতৃপক্ষে প্রেতকর্ম (শ্রাদ্ধ), তর্পণ ইত্যাদি মৃত্যু-সংক্রান্ত আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়, সেই হেতু এই পক্ষ ●শুভকার্যের জন্য প্রশস্ত নয়●।
সেহেতু ●Xশুভ মহালয়াX● বলা একেবারেই সঠিক নয়। আপনারা, যাঁরা এই লেখাটি পড়লেন, আশা করব যে, তাঁরা অন্ততঃ "শুভ মহালয়া" আর কখনো বলবেন না, বা অন্যান্যদেরও সংশোধন করে দেবেন।।

সনাতন ধর্মে কোন শুভ কাজ করতে গেলে, এমনকি বিবাহ করতে গেলেও প্রয়াত পূর্ব পুরুষদের সাথে সমগ্র জীব-জগতের জন্য তর্পণ করতে হয়, কার্যাদি-অঞ্জলি প্রদান করতে হয় । তর্পণ মানে তৃপ্তিকরণ করা । রামায়ণ অনুযায়ী লঙ্কাবিজয় ও সীতা উদ্ধারের জন্য অকালবোধনের আগে এই অমাবস্যা তিথিতেই পিতৃপুরুষ ও মাতৃপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করেছিলেন 
শ্রী রামচন্দ্র।

"পিতৃপক্ষ"
সেই অনুসারে এই "মহালয়" তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপূরূষের স্মরণ করেন, পূর্বপূরুষের আত্নার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন। আগেই উল্লেখ করেছি সনাতন ধর্ম অনুসারে এই দিনে প্রয়াত বিদেহী আত্নাদের মর্ত্যে প্রেরণ করা হয়, প্রয়াত বিদেহী আত্নার যে মহা সমাবেশ ঘটে, তাকে বলা হয় মহান আলয়। সেই শব্দ থেকেই এসেছে ‘মহালয়’ শব্দটি। "মহালয়" থেকে এসেছে "মহালয়া" । ☆পিতৃপক্ষের শেষদিন 
এটি।☆

"মহালয়" পক্ষের পনেরোটি তিথির নাম হল প্রতিপদ, দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী, একাদশী, দ্বাদশী, ত্রয়োদশী, চতুর্দশী ও অমাবস্যা। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী, যে ব্যক্তি তর্পণে ইচ্ছুক হন, তাঁকে তাঁর পিতার মৃত্যুর তিথিতে তর্পণ করতে হয়।

পিতৃপক্ষে পুত্র কর্তৃক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হিন্দুধর্মে অবশ্য করণীয় একটি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের ফলেই মৃতের আত্মা স্বর্গে প্রবেশাধিকার পান। এই প্রসঙ্গে "গরুড় পুরাণ" গ্রন্থে বলা হয়েছে, "পুত্র বিনা মুক্তি নাই।" 
সনাতন ধর্মগ্রন্থে গৃহস্থদের দেব, ভূত ও অতিথিদের সঙ্গে পিতৃতর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। "মার্কণ্ডেয় পুরাণ" গ্রন্থে বলা হয়েছে, পিতৃগণ শ্রাদ্ধে তুষ্ট হলে :- ☆স্বাস্থ্য, ধন, জ্ঞান ও দীর্ঘায়ু এবং পরিশেষে উত্তরপুরুষকে স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদান করেন।☆

☆অসতো মা সদগময়, তমসো মা জ্যোতির্গময়ঃ
ওঁম মৃত্যর্মা অমৃতমঃ গময়ঃ শান্তি, শান্তি ওঁম শান্তি, ওঁম শান্তি ওঁম, হরি ওঁম তদসদ্।☆

অথাৎ :-

হে ঈশ্বর, আমাকে নিয়ে চলুন অসত্য থেকে সত্যে, অন্ধকার থেকে আলোকে, মৃত্যু থেকে অমৃতে । এই অনিত্য মৃত্যুময় জগৎ থেকে আমাকে শাশ্বত আনন্দের জগতে নিয়ে চলুন। আপনার করুণার দীপ্তিতে আমার অন্তরাত্মা সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠুক।
শান্তি শান্তি, ওঁম শান্তি, ওঁম শান্তি ওঁম....
🙏🏻🚩🙏🏻🚩🙏🏻
🕉🍁🕉🍁🕉

No comments:

Post a Comment

সনাতন্ হিন্দু ধর্মে পবিত্র সংখ্যা ১০৮ এত মহাত্মপূর্ণ কেন...???

সনাতন্ বৈদিক হিন্দু ধর্মে, ১০৮ সংখ্যা টি অত্যন্ত পবিত্র সংখ্যা রূপে গণ্য করা হয়। কিন্তু কেন...??? কলমে :- অরিন্দম রায়। আমাদের যো...